পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করার পেছনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গত বছর আগস্টে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সতর্কতা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উচ্চমান সহকারী পদে লোক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর এনবিআর চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারকে এনবিআর অফিসে তলব করে একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা লিখিত পরীক্ষায় নির্ধারিত পাস নম্বরের অনেক কম নম্বর পাওয়ার কথা জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্র্র্দেশ পালন করা সম্ভব নয় বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার। এর প্রেক্ষিতে এনবিআরের পক্ষ থেকে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ই স্থগিত করে দেয়া হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি এবং দুর্নীতিমূলক পন্থা অবলম্বনের জন্য কাস্টমস কমিশনারের প্রতি কড়া নির্দেশনা দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান যেসব কথাবার্তা বলেন তার ভিডিওকৃত অংশবিশেষ পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে এনবিআর চেয়ারম্যান বলছেন, ‘নম্বর বাড়াও। এটা করতেই হবে। উই আর আন্ডার ইনস্ট্রাকশন...।’ এনবিআর চেয়ারম্যানের এ নির্দেশনা থেকেই বোঝা যায়, নিয়োগ জালিয়াতির সাথে তিনিই নন, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও কারো হাত থাকতে পারে।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৩৬ জন উচ্চমান সহকারী নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতে ২৩ হাজার ৪০০ আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৮০০ লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। গত বছরের ২১ আগস্ট ভোরে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদবির এড়াতে কার্যকর, প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দশ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে মাত্র ১৮০ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে ৩৬টি পদের বিপরীতে সরকারী দলের মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে ২ শতাধিক ডিও লেটারসহ তদবিরের কথাও স্বীকার করছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়োগ পাইয়ে দিতে প্রতি পদের জন্য ২০-৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও জানা যায়। খোদ এনবিআর চেয়ারম্যান ১১ জনের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষার নম্বর পরিবর্তন, টেম্পারিং বা খাতা পরিযর্তন করে হলেও তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কাস্টম হাউহে যোগ্য, দক্ষ ও প্রকৃত প্রতিভাবান প্রার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা আগ মুহূর্তে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করার ব্যবস্থা, নিজেদের ফোন বন্ধ রাখা, রাত ১০টার মধ্যে খাতা মূল্যায়ন এবং মধ্যরাতে ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার যে ধারাবাহিক অভিযোগ উঠেছিল, এই নিয়োগ পরীক্ষায় সে ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় নির্বাহ করতে সরকার মূলত রাজস্ব খাতের আয়ের উপর নির্ভরশীল। রাজস্ব খাতে অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের নিয়োগ দেয়া হলে এ খাতে বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাম্প্রতিক বাস্তবতায় তারই প্রতিফলন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজস্ব আয়ে অনেক বড় সম্ভাবনা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ে অব্যাহত ঘাটতি এনবিআরের অদক্ষতা ও ব্যর্থতারই প্রমাণ। চলতি অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর খাতে ৬৫ হাজার ৯৩ কোটি, আমদানী শুল্ক খাতে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা মিলে রাজস্ব আদায়ের সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টার থেকে তৃতীয় কোয়ার্টারের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কোনো ধাপেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি এনবিআর। এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। বছরশেষে এই ঘাটতি দ্বিগুণে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার দায় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। এর আগে বিভিন্ন সময়ে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সেসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের শীতল ভূমিকা লক্ষ করা গেছে। উপরমহলের তদবির, নির্দেশনা ও ঘুষ লেনদেনের যোগসূত্রে নিয়োগ পরীক্ষায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের রাজস্ব বোর্ডে নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় জনবল সঙ্কটে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে ব্যক্তিবিশেষের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে এনবিআর চেয়ারম্যানকে স্বপদে বহাল রেখে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়। তাকে অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারিসহ এনবিআরের বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা বিষয়ে নিপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক। টিআইবি থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, দেশের ৬২ ভাগ কর প্রদানকারী রাজস্ব বোর্ডের দ্বারা নানাভাবে দুর্নীতিমূলক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করদাতাদের সাথে অসৌজন্য ও অনৈতিক আচরণ করে আয়কর আদায়ে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। আর সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অসৎ ও অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খলা ও ব্যর্থতাকেই বাড়িয়ে তোলা হবে। এ অবস্থায় এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার মতো একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যদি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তাহলে দুঃখের সীমা থাকে না। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়তে পারে। কাজেই অনুপুঙ্খ তদন্তসহ কঠোর আইনি কার্যব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।