পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসাইন আহমদ হেলাল : ৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র বিজয় দিবস’ ও রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে আগে থেকেই মাঠে থাকার ঘোষনা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। দিনটি উপলক্ষে ইতোমধ্যেই সারাদেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। পরস্পর দুই মেরুর দুই দলের বিপরীতমুখি এই কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন বছরের শুরুতেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সংঘাত এড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি পালনে সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের অনুমতি দেয়নি। আমরা সংঘাত চাইনা। আমরা আলোচনা করে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সমাবেশ করতে না দেয়ার অজুহাত হিসেবে একটা অপরিচিত নামগোত্রহীন ইসলামিক পার্টিকে সে দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। এটা সাজানো নাটক। এতেই প্রমাণিত হয় এই সরকার আসলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে চলেছে।
এদিকে, ৫ জানুয়ারী ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও বনানী খেলার মাঠে আলাদা আলাদা সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। আর যেকোনো মূল্যে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ও কালোপতাকা মিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। সমাবেশ ও কালোপতাকা মিছিলের জন্য সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্নের কথাও বলেছিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। যদিও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে কোনো ধরণের প্রকাশ্য সমাবেশের জন্য আবেদন করেও অনুমোদন পায়নি দলটি।
প্রসঙ্গত, গত তিন বছরের মতো দিনটিতে এবারো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিরোধীদল বিএনপি। এই কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে একই দিনকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করতে সারা দেশে র্যালি ও সমাবেশ ঘোষণা করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের এই দিনটিতে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। তাদের বাইরে রেখেই একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর পর থেকে প্রতি বছরই বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি নিয়ে গতকাল ডিএমপিতে দুই দফা বৈঠক করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী গতকাল সন্ধ্যায় ইনকিলাবকে বলেন, ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আমাদের সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। আমরা চাইলে যে কোনো দিন সমাবেশ করতে কোনো সমস্যা নেই বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সেটা প্রকাশ্য নয়, ইনডোরে করতে হবে। তিনি জানান, বিএনপিকে এই মুহুর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে পুলিশ। সেখানে সমাবেশ করতে হলে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ্যানী বলেন, আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার কথা বলেছিলাম। তবে রাস্তায় এই মুহুর্তে সমাবেশ না করতে ডিএমপি কমিশনার আমাদের অনুরোধ করেছেন। তিনি জানান, ডিএমপির সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ডে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত আজ বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।
জানা গেছে, ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি নামক একটি সংগঠনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে জঙ্গিবিরোধী ওলামা সমাবেশ করবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা এই দিনকে ঘিরে কোনো সংঘাতে যেতে না চাইলেও সরকার একটি নাম গোত্রহীন দলকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দিয়ে চরম নোংরামি করেছে।
অপরদিকে ১৪দলীয় জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ ঘোষণা দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এবারো সারা দেশে বিজয় ও আনন্দ র্যালি এবং রাজধানীতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকারি দলটি। এ দিন তারা বিএনপিকে মাঠে নামতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দু’টি সমাবেশ ডেকেছে। পুরো ঢাকায় ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। মহানগর দক্ষিণের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আকতার হোসেন জানিয়েছেন, ২৩বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৩টায় সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর বনানী মাঠে দুপুর ২টা ৩০মিনিটে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ উপস্থিত থাকবেন বলে ইনকিলাবকে জানান মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। পাল্টাপাল্টি এসব কর্মসূচি ঘোষণার ফলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন একটি বিতর্কিত নির্বাচন। ক্ষমতায় টিকে থাকতেই সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা এ নির্বাচন করেছিল আওয়ামী লীগ। সরকারি দল যতই এ দিনটিতে বিজয় উৎসব করুক না কেন, দেশে-বিদেশে কেউই ওই নির্বাচন মেনে নেয়নি। সরকার যতই প্রচার করুক ওই নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশেগুলোর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো পাল্টায়নি। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ।
এ দিকে আবেদনের পরও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়ায় বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। তারা জানান ৫ জানুয়ারি যেভাবেই হোক রাজধানীতে সমাবেশ করবেন তারা। সোহরাওয়ার্দী না পেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হলেও খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমাবেশ করতে চান তারা। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফাভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হন। বাকি আসনেও শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। এই প্রহসনের নির্বাচনের দিন বিএনপি প্রতি বছর অনাস্থা জানিয়ে আসছে। এ বছরও অনাস্থা জানাবে।
রাজপথ দখলে রাখার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের : আওয়ামী লীগ বলছে, দিনটিকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী বিএনপি জোট যাতে কোনো ধরনের নাশকতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সারা দেশেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপযাপনে দিনটিতে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানাপর্যায়ে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরের দু’টি স্থানে সমাবেশ ও বিজয় শোভাযাত্রা করবে দলটি। ওই দিন বেলা ২টা ৩০মিনিটে রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ এতে উপস্থিত থাকবেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবারের ৫ জানুয়ারি ঘিরে রাজনৈতিক মহলসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তবে দিনটিতে বড় দুই দলের শোডাউন প্রস্তুতিতে সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ। সে জন্য দিনটি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বেশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।