Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে কৃষকরা ব্যস্ত গোলা ভরানো - আর খড়ের গাদা তৈরির কাজে

প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : গ্রাম বাংলায় এখন নবান্ন উৎসব। শত কৃত্রিমতার ঘ্রাসে ও কিছু গ্রামীণ প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত লোকজ চিহৃ আজো অবশিষ্ট রয়েছে। আমনের এই মৌসুমে ধান তোলার পর মাড়াই শেষে খড় শুকিয়ে তা দিয়ে গাদা তৈরী করা একটি গ্রামীণ ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। যে বাড়ীর সামনে যতো বেশী বা যতো বড় গাদা / চীন সে বাড়ীতে কৃষকের সমৃদ্ধতা ততো বেশী বলে প্রতীয়মান।
তালবাড়িয়া নোয়াপাড়া গ্রামের মকছুদ আহমদ খড়ের গাদা তৈরী করছিলেন। তিনি বলেন এবার ভালো ফলন হয়েছে। ২ কানি জমিতে সারা বছর খেয়ে ও ২০ হাজার টাকার ধান বিক্রি করতে পারবেন। ধান গোলায় তুলে এখন তিনি খড়ের গাদা তৈরী করছেন কয়েকটি গরুর জন্য সারাবছরের খাবার মজুদ এর লক্ষে।
পৌষ মাঘ মানেই সিন্নি, পিঠা পুলি আর পায়েসের আয়োজন। নতুন ধানের গন্ধ, খেজুর রসের সিন্নি, পায়েস, পাটালি আরো কতোকি। এর সাথে তালমিলিয়ে আসে খেজুর আর আখের গুড়। নতুন ধানের চাল আর গুড়ের মিশেলে চলে পিঠা পায়েসের আনন্দ। প্রকৃতিক দূর্যোগ ধানের ফলন কম বা বেশী নিয়ে মন খারাপ বা ভাল যাই হোক না কেন শীত মওসুমটাকে সবাই উপভোগ করে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে বেশ ভালভাবে। সকালের ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠে আর সন্ধেয় ভাজা ও রসালো পিঠের আয়োজন চলে ঘরে ঘরে। শীত আসবে নতুন ধান উঠবে সাথে গুড়। পিঠে উৎসব হবে না তাকি হয়। এসময় মেয়ে জামাইকে নাইওরে নিয়ে আসা হয়। মেয়ের বাড়ি থেকে শহুরে বেহায় বাড়িতে নতুন ধানের চালের আটা আর গুড় পাঠানো হয়। নইলে যে মেয়ের মান যাবে। এসব পেয়ে বউকে ধন্যি ধন্যি করে অভিনন্দন জানানো হবে। আবার ব্যতিক্রম না পেলে ক্ষেত্র বিশেষে শাশুড়ি ননদের খোটা শুনতে হবে। এমনটি চলে আসছে আবহমানকাল ধরেই। ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। অনেকে শহর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসে পিঠা পায়েসের স্বাদ নেবার জন্য গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে। শুধু কি পিঠা পায়েস। এখনতো শীতকালীন শাক সবজির ভর মওসুম। মাঠে মাঠে দুধ সাদা ফুলকপি, ফুটবলের মত বাধাকপি, সীম, মুলা, গাজর, টমেটোর সমারোহ। ক্ষেত থেকে তুলে আনা একেবারে টাটকা শাকস্বব্জীর স্বাদই যে অন্য রকম। তাছাড়া এবার বান বর্ষণের কারণে নদী দিঘী খাল বিল পুকুর খামার সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। এখন পানি কমছে। খাল বিলে মিলছে হরেক রকমের মাছ। এসব মাছের স্বাদও কম নয়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের অন্যতম কৃষিপ্রধান জনপদ এই মিরসরাই অঞ্চলে বইছে ভিন্ন আবহ। উপকূলসহ প্রায় সর্বত্র এখন আমন কাটা প্রায় শেষ। এখন চলছে ঝাড়াই মাড়াই। সনাতন পদ্ধতির সাথে যোগ হয়েছে যান্ত্রিকতা। গেরস্থ বাড়ির উঠোন গুলো সকাল সন্ধ্যা এখন পুরুষ মহিলাদের ব্যস্ততায় ঘেরা। ধান সেদ্ধ করার প্রাকৃতিক গন্ধ চারিদিকে। ঢেঁকিতে চাকিতে চলছে চাল থেকে পিঠার গুড়ি করার ধূম। বিকেল হলেই গাছিরা রসের হাড়ি নিয়ে ছুটছেন খেজুর গাছের দিকে। এক গাছ লাগিয়ে আবার অন্য গাছে। ভোর বেলায় মাটির কলস ভর্তি খেজুরের রস নিয়ে মজুদ করা। কোন কোন বড় গাছির রস সংগ্রহ করার পর লম্বা চুলায় প্লেন সীট দিয়ে তৈরী লম্বা কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরীতে ব্যস্ততা। শীতের তীব্রতা শহরের চেয়ে গাঁও গেরামে একটু বেশী। তাই একটু উত্তাপ নিতে অনেকেই ভীড় করেন গুড় তৈরীর চুলার পাশে।
মঘাদিয়ার রস চাষি আমিনুল ইসলাম জানালেন একটা খেজুর গাছের রসদিয়ে গড়ে প্রতিদিন আধা কেজি গুড় তৈরী করা যায়। আমার বাড়ির বউ ঝিরা এই রস দিয়ে গুড় মজুদ করছে। একসময় যা বিলুপ্ত হতেছিল তা এখন আবার পূনরায় সম্ভব হচ্ছে। জোরারগঞ্জ বাজারের ভাঁপা পিঠে বিক্রেতার পাটালি দেয়া ভাঁপা ইতিমধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে। বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বললো কিছু বছর রস চাষীরা রস নামাতো না। এখন দাম ও পাচ্ছে তাই অনেকে নামাচ্ছে। গাছে ও হাঁড়ি পড়ছে বেশ। শীত যতো বাড়ছে ততোই পিঠে আর পাটালির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মীরসরাইয়ের গ্রামীণ জনপদে যেন জমে উঠেছে নবান্ন উৎসব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মীরসরাই

২ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ