পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কোথায় যেন হারাতে বসেছে। বর্তমানে গ্রামের দিকে তাকালে মেঠো পথ দেখা গেলেও রাখালের বাঁশির সুর কানের পর্দা স্পর্শ করে না। শহর ছাড়িয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়া এখন গ্রামে। এতে করে বদলেছে চিরচেনা আবহমান গ্রামের চিত্র। প্রযুক্তি মানুষকে দ্রæত সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। গ্রামের অনেক কাজে এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখা যায়।
প্রযুক্তিকে জায়গা দিতেই যেন অনেকটা আপনা থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার কুটির শিল্পসহ অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিল্প। স্বাধীনতার পরও নব্বই দশক পর্যন্ত গ্রামগঞ্জে কুটির শিল্পের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। মানুষের ঘাম ঝরানো শ্রমেই তৈরি হত অনেক অনেক সুন্দর সন্দর জিনিষ। এর মধ্যে রয়েছে বৈশাখী মেলার বিভিন্ন সামগ্রী। বাঁশের তৈরি রকমারি পণ্য ছাড়াও গরমের দিনের জন্য তাল পাতার হাত পাখায় রঙিন আলপনা শহরের বুকে গ্রামকে টেনে আনে। আর বাহারি রঙের হাত পাখা গ্রামের পাশাপাশি শহরের বাসা-বাড়িতে রয়েছে।
শুধু কি বাবুই পাখির প্রশংসা করতে হবে তার তৈরি অনিন্দ সুন্দর তাল গাছে ঝুলন্ত বাসার জন্য? বাবুই পাখি যেমন গ্রামে তাল গাছে বাসা তৈরি করে, তেমনি গ্রামের মানুষের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের কারুকাজ দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। তারপরও বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে সময় বাঁচাতে হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী সেই শিল্পগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। তবে সেগুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। আবার অনেকেই প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে বাপ-দাদার সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তাদেরই একজন মীরসরাই উপজেলার ২ নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মেহেদী নগর গ্রামের যুবক শহিদুল ইসলাম রানা।
আজকের রানা কিশোর বয়সে (১৪) মাছের আড়তে চাকরি শুরু করেন। মাছ বহনের জন্য প্লাস্টিকের বেতী টুকরির প্রচুর চাহিদা দেখে চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে টুকরি তৈরির ইচ্ছে জাগে। এক পর্যায়ে টুকরি তৈরিতে হাত পাকানোর শুধু পেশা নয় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এক রানা বদলে দিয়েছেন প্রায় ৫০ পরিবারের জীবনের চাকা। সেই থেকে শুরু করেছেন প্লাস্টিকের বেতী টুকরি তৈরি। নিজের বাড়িতে প্রথমে এক লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০০৮ সালে পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে শুরু করেন। এক যুগে এক লাখ টাকার পুঁজি বেড়ে সাত লাখ টাকা হয়েছে। আর সেখানে কাজ করছেন প্রায় ৫০টি শ্রমলবদ্ধ পরিবারের নারী সদস্যরা।
শ্রমিকরা তাদের দৈনিন্দিন আয়ের পাশাপাশি প্লাস্টিকের বেতী টুকরি তৈরি করে বাড়তি আয় করেন। প্রতি পরিবার প্রতিদিন ১০টি পর্যন্ত টুকরি বানাতে পারে। সেই টুকরি বানানো বাবদ প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে আয় হয়। আকার ও মান ভেদে ১৭ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত মজুরি প্রদান করা হয়। প্রতি পরিবারের মাসিক আয় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। ৫০ পরিবারে মাসিক আয় প্রায় ৫ লাখ টাকা এবং বছরে আয় ৬০ লাখ টাকা।
এই প্লাস্টিকের টুকরিগুলো অন্যান্য অঞ্চলে উৎপাদিত মাছ সবজি কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য মূলত এক জায়গা থেকে অন্যত্র সহজে পাঠানো যায়। টুকরিগুলোর মান অনেক টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। পারিবারিক কাজে ব্যবহার করা হলে এটি যুগের পর যুগ টিকে থাকে।
এটি পাইকারি প্রতিটি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে প্রায় ৫ টন বেতী দরকার হয়। ২০০৮ সালের শুরুর দিকে প্রতিকেজি প্লাস্টিক বেতীর দাম ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা। বর্তমানে দাম প্রায় ৯০ টাকা।
রাজধানীসহ দেশের যেসব এলাকায় মাছের আড়ত রয়েছে সেখানেই মীরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে যাচ্ছে বেতী টুকরি। বিভিন্ন সাইজের তৈরি টুকরিগুলো বিক্রি হয় বিভিন্ন দামে। প্রতিটি বেতী টুকরি থেকে মালিকের আয় হয় ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিমাসে উৎপাদন হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার পিস। এতে করে মাসে আয় প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এই শিল্পের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, আমি যদি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনা সুদে ঋণ এবং পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা পেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারব বলে আশা করি। এখানে কাজ করে সংসারের চাকা সচল রাখতে মরিয়ম, সুরমা, নার্গিস জানান, সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা প্লাস্টিকের বেতী টুকরি তৈরি করে স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মুনাছির আহমেদ বলেন, গ্রামে অনেক নারী রানা প্লাস্টিকের বেতী টুকরি তৈরী করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মীরসরাই উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কাজী আবদুল আলিম বলেন, উদ্যোক্তা হলে সরকারি বরাদ্দ আসলে আমরা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে সহযোগিতা করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।