Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত রাউজানের গাছিরা

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে এম বেলাল উদ্দিন : শীতের আগমনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি খেজুরের রস আহরনে খেজুর গাছ পরিচর্যায় গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত শুরুর সাথে সাথে গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরন শুরু করেছেন। নতুন ধানের পাশাপাশি খেজুরের রস ও খেজুর গুড়ের পাটালি দিয়ে তৈরি বাংলার ঐতিহ্য পিঠা-পায়েস শীতের দিনে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। তাই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গাছিরা খেজুর গাছ তৈরি শেষে রস সংগ্রহ শুরু করেছে।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রস আহরনের জন্য প্রথমে হাতে দা ও কোমড়ে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চাছা-ছেলা করে। পরে ছেলা স্থানে নল বসানো হয়। কাক ডাকা ভোর থেকে সকাল ৮-৯ পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে। দুপুর পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি। কেউ কেউ আবার গুড় থেকে পাটালি তৈরি করে বিক্রি। আবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে কলস বাঁধা এভাবেই ব্যস্থ সময় পার করছে গাছিরা। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সময় খেজুর গাছে শোভাপায় রসের হাড়ি। আর খেজুর রস দিয়ে নতুন আমন ধানের পিঠাপুলি তৈরির পাশাপাশি খেজুর গুড় দিয়ে মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া তৈরির ধুম পড়ে এই শীতে। এ সময় এলাকার গাছিরা ৩৪ মাসব্যাপী খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটায়। বাড়ির ওঠোনে গাছিরা চুলা বানিয়ে সেখানে খেজুর রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করে। উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের গাছি কবির আহাম্মদ জানান, রাউজানে খেজুর গাছ আর আগের মত নেই। রাস্তার ধারে কিংবা বিলের আলে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করছি। এখন আগের মতো বাণিজ্যিকভাবে খেজুর রস সংগ্রহ করা যায় না। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও গাছের অভাবে রস সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। খেজুর গাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। নির্বিচারে এসব খেজুর গাছ কেটে সাবার করা হচ্ছে। মূূলত নতুনভাবে রোপন না করার কারণেই খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে এসব গাছ কেউ শখেও রোপণ করে না। তার ওপর প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব গাছও কেটে ফেলা হলে আমাদের এ পেশা ছেড়ে দিতে হবে। অনেকেই এখন আর খেজুর গাছ কাটা রস সংগ্রহকরা ছেড়ে দিয়েছে গাছ কমে যাওয়ার কারনে। প্রথমত খেজুর গাছ কম আর কাটা বেশ কষ্টের। রসও তেমন পাওয়া যায় না। খেজুর গাছ খুব অবহেলিত একটি গাছ। কেউ এসব গাছের পরিচর্যা করে না।
ফলে অপরিপুষ্ট ও রুগ্ন হয়ে পড়া অধিকাংশ গাছ থেকে আশানুরূপ রস পাওয়া যায় না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া দূরের কথা, শ্রমের দামও উঠে না। এছাড়াও গুড় তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি। সে হিসাবে গুড়ের দাম পাওয়া যায় না। তারচেয়ে রসের ভালো দাম পাওয়া যায়। শীতের ভাপা পিঠার জন্যে এ এলাকায় রসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে একদিন গাছিরা খেজুর গাছ কাটা ছেড়ে দিবে। বর্তমানে যেভাবে বৃক্ষ নিধন শুরু হয়েছে এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সড়ক পার্শে খেজুরের গাছ রোপনের উদ্যেগ না নিলে অছিরেই ধীরে ধীরে এই খেজুরের গাছ হারিয়েই যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেজুর

১৬ এপ্রিল, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ