রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : ঘুঘরার বিল এক সময়ের দেশীয় মৎস্য ভাÐারখ্যাত হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে ঘুঘরার বিল থেকে ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক সময় কুমিল্লার চান্দিনার ঘুঘরার বিলে ২৬৬ প্রজাতির দেশীয় মাছ
থাকলেও এখন কোনোমতে টিকে আছে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ। তবে ৫০ প্রজাতির মাছ সচরাচর দেখা গেলেও দেশীয় মাছের অস্তিত্ব আজ পুরোপুরিই হুমকির মুখে। এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খালবিল ভরাট করে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট নির্মাণ, মাছের আশ্রমের পাশের জমিগুলোতে চাষাবাদের জন্য কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ ও ডিমওয়ালা মাছ নিধণ ইত্যাদি কারণেই মৎস্যসম্পদ বিপন্ন হতে চলেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনায় বৃহত্তম ঘুঘরা বিলটি দৈর্ঘ্যে ১৫ এবং প্রস্থে আট মাইল। এই ঘুঘরার বিলসহ ছোট-বড় দেড় শ’ নদী ও পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে টিকে আছে মিঠা পানির দেশীয় প্রজাতির সামান্য মাছ। অথচ এসব মাছের উৎসস্থল থেকে অতীতে বিপুল পরিমাণ মাছ আহরণ করা সম্ভব হলেও বর্তমানে নানা কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।
বৃহত্তম ঘুঘরা বিলটি একসময় দেশী মাছেই পরিপূর্ণ ছিল। শোল, বোয়াল, গজার, আইড়, মাগুর, শিং, কৈ, পাবদা, টেংরা, চাপিলা, বুজুরি, টাকি, বাঘাইড়, রুই, কাতলা, সরপুঁটি, কাঞ্চনপুঁটি, জাতপুঁটি, চিংড়ি, বাটা, ভাংনা, কাজলি, পুঁটি, মেনি, বাইন, দাঁড়কিনা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত এই বিলে। প্রাকৃতিক উপায়ে এসব মাছ প্রজনন ও উৎপাদন হতো। অধিকাংশ ডোবা ও খাটিতে বর্ষার পরও মাছ থাকত। বর্ষার শুরুতে ওইসব মাছ চলে যেত মুক্ত বিলে। এটি ছিল মাছের একটি বড় অভয়াশ্রম। চান্দিনা ও কচুয়ার বাসিন্দারা জানান, মাত্র দু’দশক আগেও ঘুঘরা বিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যেত না মাছের গন্ধে। কয়েক বছর ধরে সে অবস্থা আর নেই। এখন মিঠাপানির মাছ নানা কারণে বিলুপ্ত হতে চলেছে। জমি জলাশয়, ডোবা ও পুকুরে মারাত্মক ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার ও এগুলো ভরাট করা, মৎস্যজীবীর সংখ্যা বাড়া, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, অবৈধ জালের ব্যবহার, নদীনালা, খাল-বিলের নাব্যতা কমে যাওয়া, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ নান কারণে পানি দূষণ, মাছের নানা রোগ এবং বড় মাছ চাষ করতে গিয়ে জলাশয় থেকে ছোট মাছ উচ্ছেদ করার কারণে দেশী ছোট মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে আহরিত ৭৩ ভাগ মাছই মিঠাপানির মাছ। এই মাছ থেকে রফতানি আয় হিসাবে দেশে প্রতিবছর ছয় ভাগ বৈদেশিক অর্থ লাভ করে থাকে। এ ছাড়া দেশের জাতীয় আয়ের পাঁচ ভাগ অর্জন হয়ে থাকে মৎস্যসম্পদ থেকে। এক সময় দেশে ২৬৬ প্রজাতির দেশীয় মিটা পানির মাছ থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৫০ প্রজাতির মাছ সচরাচর দেখা যায়। এর মধ্যে ৫৪ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব আজ একবারে হুমকির মুখে। এ ছাড়া ১২ প্রজাতির মাছ মৎস্য অধিদফতরের ভাষায় মহা হুমকির মুখে রয়েছে। এসব মাছের অধিকাংশেরই আশ্রয়স্থল হচ্ছে হাওর-বিল ও নদীনালা। অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় মাছের মধ্যে রয়েছেÑ চেলাপাতা, কশিখয়রা, মলা, দাঁড়কিনা, রানী, চাঁন্দা, লালচাঁন্দা, তিতপুঁটি, নেফতানি, নাপিত কৈ, গুতুম, বাঘা গুতুম, বাঁশপাতা, লাঙ্গাটালু, গোলা, বালুগড়া, চাপিলা, বাউস, গজার, পাবদা, কাঙলা, চিতল মেনী, মধু, তারা বাইন, কাকিলা ইত্যাদি। অন্যদিকে মহা হুমকির মুখে পড়া মাছগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ রিটা, বাঘা, নান্দিনা, জাঙ্গল, আইড়, খাইড়া চেনুয়া, ক্ষোত মাছ, মহাশোল ইত্যাদি। মৎস্য অধিদফতরের তালিকানুযায়ী সারা দেশে ছোট মাছের মোট ৫৬টি অভয়াশ্রম রয়েছে। চান্দিনা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মাছের জন্মস্থানগুলোতে অভয়াশ্রম থাকা দরকার। তা না হলে দেশী মাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ জন্য গণসচেতনতা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।