Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোট কারচুপি ও জবরদস্তির নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:০০ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০১৬

প্রভাব বিস্তার, সংঘাত-সংঘর্ষ-গোলাগুলি, ভোট জালিয়াতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, ভোট শুরুর আগেই ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, কেন্দ্র দখল, জালভোট  প্রদান ও ব্যাপক সহিংসতায় সারাদেশে একজন আনসার সদস্যসহ অন্তত ১১জন নিহত হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দলীয় প্রতীকে এই প্রথমবার অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সরকার দলীয়  নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র হামলা, পুলিশের সামনেই ভাংচুর, দখল, ব্যালট, পেপার ছিনতাই, প্রিসাইডিং  অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের মারপিট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-গোলাগুলি, ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকির কারণে ভোটার উপস্থিতিও কম ছিল। হামলার মুখে  অর্ধশতাধিক  ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। চলতি  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে  প্রহসন বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রহসনের নির্বাচন করে বিশ্ববাসীকে বোকা বানাতে চায় সরকার। এটাকে অনেকে আখ্যা দিচ্ছেন, দিস  ইজ  দ্য ইলেকশন প্রজেক্ট। এই প্রকল্পের নাম করে নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছে তারা আসলে জনগণ ও বিশ্ববাসীকে বোকা বানাতে চায়। জাতীয় পার্টিও সারাদেশে সহিংসতার অভিযোগ করেছে। অবশ্য সরকারি দলের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমনি দাবী করেছেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ,স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বচ্ছ হয়েছে। তার মতে, শতকরা ৯৯ দশমিক ৭২ ভাগ ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোট ডাকাতিসহ ব্যাপক অনিয়মের সচিত্র প্রতিবেদন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য রেখেছেন তা অত্যন্ত লজ্জাকর বলে পর্যবেক্ষরা মনে করছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সার্বিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার যে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটতে পারে তা শুরু থেকেই আশংকা করা হয়েছিল। নির্বাচনের আগেই বিশিষ্টজনেরা মন্তব্য করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ও প্রশাসনের, তারা স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন  তার সাংবিধানিক দায়িত্ব  এড়িয়ে চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের চিন্তা তার মাথায় নেই বলেও বিশিষ্টজনেরা আগাম মন্তব্য করেন। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নানা বাধা পেরিয়ে বিরোধীদের যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন তাদেরও হুমকি দিয়ে বলা হয়েছিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে বাড়িঘরে আগুন জ্বলবে। লাশ পড়ে থাকবে। এমনকি বাড়ির হাঁস-মুরগি,গরু-বাছুরও থাকবে না বলে শাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। এতকিছুর পরেও বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচন সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের পুরো  নির্বাচন প্রক্রিয়াই ছিল দখলের। এটা নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনার কিছু নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব দায়-দায়িত্ব পুলিশের উপর চাপিয়ে  দিয়ে তার উপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্বের অবমাননা করেছেন। অন্য কোন দেশে হলে এটা নিয়ে মামলা হতো। হয়ে যাওয়া নির্বাচনের সূত্র ধরে তিনি মন্তব্য করেছেন, এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে কেমন নির্বাচন হবে সেটারও আভাস পাওয়া গেল। তার মতে, কফিনের শেষ পেরেক ছিল এটি। তিনি মনে করেন, সরকার আন্তরিক হলে এসব ঘটনা আরো কমানো যেত। স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই বার্তা পেয়েছিল কীভাবে নির্বাচন হবে। সরকারের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে। কার্যত অভিজ্ঞতার আলোকে ড.তোফায়েল আহমদ যা বলেছেন প্রকৃতপক্ষে তার সঙ্গে কোন মহলেরই দ্বিমত থাকার কথা নয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অব্যাহতভাবে চলছিল সহিংসতা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং সংঘাতে নির্বাচনের আগেই ১২টি প্রাণ ঝরে গিয়েছিল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের হিড়িক পড়েছিল। তা সত্ত্বেও যতটুকু নির্বাচনের সম্ভাবনা ছিল তাও নষ্ট হয়েছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বহীনতায়। এই অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতায় প্রকৃতপক্ষে অসন্তোষ তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছেÑ যার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব সুদূর প্রসারী হবে।
দলীয় ভিত্তিতে প্রথমে উপজেলা এবং পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও বিরোধী দলগুলো শেষ পর্যন্ত এসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করা সহজ হয়েছে যে আসলে গ্রহণযোগ্য সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। এই ধরনের নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের কেউ কেউ এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে হাস্যকর ও নির্লজ্জ মন্তব্য করেছেন তা প্রমাণ করে এধরনের দুর্বল ও মেরুদ-হীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি পান বলে যে পুরনো ধারণা রয়েছে এখন দেখা যচ্ছে তা তৃণমূল পর্যায়ে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও হানাহানি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থার অবসানই কাম্য। আমরা মনে করি, স্থানীয় পরিষদের এসব নির্বাচনসহ সব নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে যা করণীয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা যতœবান হবেন।  



 

Show all comments
  • Badsha Molla ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১১:১১ এএম says : 0
    We Think We shall no submit our Vote any election.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোট কারচুপি ও জবরদস্তির নির্বাচন
আরও পড়ুন