পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুরে রেলক্রসিং ওভারব্রিজ নির্মাণকে কেন্দ্র করে এক রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। একদিক দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় আরেক দিকের যানবাহন থেমে থাকছে। এতে করে রাত-দিন যানজট লেগেই আছে। ত্রিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৫/৬ ঘণ্টা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট রেগে আছে।
খানাখন্দে ভরা সড়ক ও কুয়াশার কারনে ঢাকা থেকে রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের যে কোনা জেলায় যেতে এখন দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-ফরিদপুর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অবস্থাও বেহাল। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও অব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগেই থাকে। এর বাইরে যে কোনো মহাসড়কে একটি দুর্ঘটনা ঘটলে রেকার আসতে লাগে ২/৩ ঘণ্টা। উদ্ধার কাজ শেষ হতে হতে যাত্রীদের অবস্থা নাকাল। সবমিলে সারাদেশেই সড়কপথে ভোগান্তি এখন নিত্রসঙ্গী। কোনো মহাসড়কেই এখন আর স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলতে পারে না। খানাখন্দে ভরা সড়ক- মহাসড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ভাঙাচোরা সড়কের কারনে ট্রাকের ভাড়া প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে মালিকরা। বর্ধিত ভাড়ার প্রভাব পড়েছে চালসহ তরিতরকারি ও নিত্যপণ্যে। সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে একদিকে দুর্ভোগ অন্যদিকে চালসহ নিত্যপণ্যে চড়াদামে খেসারত দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। সড়ক ও জনপথ বিভাগের হিসাবে গেল বন্যা আর অতিবৃষ্টিতে দেশের ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক মেরামতে জরুরি ভিত্তিতে ১৯৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। সওজ সূত্র জানায়, সেই বরাদ্দ পুরোপুরি না পাওয়ায় কোনো কোনো স্থানে মেরামতের কাজ শুরুই করা যায় নি। এর মধ্যে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক-মহাসড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ জরিপ বলছে, দেশের ৬২ শতাংশজুড়ে থাকা জেলা সড়কের ৪৭ শতাংশই ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। জেলা সড়কগুলো টেকসই না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে স¤প্রতি অনুসন্ধান চালিয়েছে সওজের আওতাধীন কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। এতে দেখা গেছে, নির্মাণ ত্রুটি ও সংস্কারের সময় প্রকৌশলগত বিষয়গুলো যথাযথভাবে না মানায় নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ভাঙন-ফাটল-গর্ত দেখা দিচ্ছে জেলা সড়কগুলোতে।
ফেনী থেকে মোঃ ওমর ফারুক ও চৌদ্দগ্রাম থেকে মোঃ আকতারুজ্জামান জানান, ভোগান্তির অপর নাম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফ্লাইওভার ও রেলক্রসিং ওভারব্রিজ। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ও ওভারব্রিজের জন্যই ফেনীর অংশে প্রতিদিনেই যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কবলে পড়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসে মহিপাল ৬ লেন ফ্লাইওভার ও ফেনী ফতেহপুর রেল ক্রসিং ওভার ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শেষ হলেও রেলক্রসিং ওভারব্রিজের নির্মাণ কাজের তেমন অগ্রগতি নেই। আগামী ৪ জানুয়ারী মহিপাল ফ্লাইওভার উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই ৬ লেনের ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন হলেও যানজট নিরসন হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষন করেছেন। কারণ রেলক্রসিং নির্মাণের কারণে মহাসড়কের এই অংশে একমুখি যানবাহন চলাচল করে। এক অংশের সড়ক বন্ধ করে অপর অংশের গাড়ী ছাড়া হয়। এতে করে যানজট লেগেই থাকে। আর এই যানজট এ পড়ে মাত্র ত্রিশ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা। অন্যদিকে, যানজটকে উপেক্ষা করতে পাল্লা দিয়ে গাড়ীগুলো মহাসড়কের উল্টো দিকে চলাচলের কারণে এই যানজট আরো দীর্ঘ হতে থাকে। অপরদিকে, মহাসড়কের পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রামের ট্রাংক রোড দিয়ে অনেক গাড়ী প্রবেশ করার কারনে ফেনী শহরেও এখন যানজট লেগেই থাকে। এজন্য সাধারণ মানুষ ফতেহপুর রেলক্রসিং ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে বলা হয় অর্থনীতির লাইফ লাইন। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে একদিক দিয়ে যানবাহন চলাচল করলে যানজটের সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য কর্তৃপক্ষের বিকল্প আরও একটি রাস্তা নির্মাণ করা উচিত ছিল।
শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো মহাসড়কের এখন যানজট নিত্য দিনের ঘটনা। ঘন কুয়াশা ও রাস্তার বেহাল দশার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মহাসড়কের যানজট ৫০ কিলোমিটার থেকে ৭০ কিলোমিটারও দীর্ঘ হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, ভুক্তভোগি যাত্রী ও বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেহাল মহাসড়কে আটকে পড়ে ও ঘন কুয়াশার কারণে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রামনা বাইপাস, করটিয়া, নাটিয়াপাড়া, জামুর্কি, ইচাইল, ধেরুয়া, হাটুভাঙ্গা ও কালিয়াকৈর এলাকায় প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা আসার দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১২-১৪ ঘণ্টা। ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত ও ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে নারী, শিশু ও অসুস্থ রোগী এবং বৃদ্ধাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যানজট এড়ানোর জন্য অনেকেই পায়ে হেঁটেই নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, এ মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেন প্রকল্প ও বেশির ভাগ রাস্তায় খানা খন্দক ও ছোট বড় গর্ত। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক নয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কেরও বেহাল দশা বহুদিন ধরেই। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মহাসড়কগুলো মেরামত করা হয়নি বললেই চলে। একই সাথে সড়কপথে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটেও দীর্ঘ যানজট লেগেই আছে। সওজ সূত্র জানায়, এবারের বর্ষায় সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সড়ক পরিহবন মন্ত্রণালয়ে যে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ কারনে কোনো কোনো এলাকায় কাজ শুরু হলেও অনেক স্থানে মেরামতের কাজ শুরুই করা যায় নি। এরই মধ্যে অনাবৃষ্টিতে সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ৬২ শতাংশের বেশি জেলা সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ জরিপ বলছে, এ জেলা সড়কগুলোর ৪৭ শতাংশই ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। জেলা সড়কগুলো টেকসই না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে স¤প্রতি অনুসন্ধান চালিয়েছে সওজের আওতাধীন কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। এতে দেখা গেছে, নির্মাণ ত্রæটি ও সংস্কারের সময় প্রকৌশলগত বিষয়গুলো যথাযথভাবে না মানায় নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ভাঙন-ফাটল-গর্ত দেখা দিচ্ছে জেলা সড়কগুলোয়। গবেষণার তথ্য মতে, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সর্বশেষ ২০১৫ সালে কার্পেটিং করা হয় মাদারীপুর থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত জেলা সড়কটি। এর কিছুদিনের মধ্যেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যায়, দেখা দেয় বড় বড় গর্ত আর ফাটল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কটিতে ৭৫ মিলিমিটার পুরুত্বের কার্পেটিং হওয়ার কথা থাকলেও করা হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব কম হওয়ায় যানবাহনের চাপ ও বৃষ্টিতে সড়কে দেখা দেয় গর্ত ও ফাটল। একই অবস্থা মাদারীপুরের ইটেরপুল থেকে আগৈলঝাড়া পর্যন্ত জেলা সড়কটিরও। সড়কটিতে সর্বশেষ কার্পেটিং করা হয় ২০১৪ সালে। এর কিছুদিন পর থেকেই সড়কজুড়ে দেখা দেয় গর্ত আর ফাটল। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সওজের অধীনে থাকা ছয়টি সড়ক বিভাগের মোট ১৫টি জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, যথাযথ নিয়ম না মেনে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে জেলা সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না। সংস্কারের সময় যথাযথ নিয়ম না নামার পাশাপাশি নির্মাণ ত্রæটিকেও জেলা সড়কগুলো টেকসই না হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
আলাপকালে ঢাকা-কুমিল্লা, ঢাকা- নোয়াখালী, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-বরিশাল রুটের কয়েকজন বাসচালক বলেছেন, সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের এমন বেহাল অবস্থা অতীতে কখনওই হয়নি। প্রতিবছর সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা মেরামত করে চলনসই রাখা হয়। এবার ব্যতিক্রম। এবার বন্যার পর মেরামতের নামে জোড়াতালির কাজ হয়েছে। ঈদুল আযহার আগে কিছু কাজ হয়েছে। এরপর থেকে হয় হচ্ছে করে কিছুই হয়নি। এতে মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারনে যানবাহন আর চলার মতো অবস্থা নেই। বরিশাল রুটের চালক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বরিশালের রাস্তা এতোটাই খারাপ যে, যাত্রীদের শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। নোয়াখালী রুটের চালক রুস্তম আলী বলেন, ভাঙ্গা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আমরাও ক্লান্ত। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির নেতা কালাম বলেন, ভাঙ্গা রাস্তার কারনে আমাদের গাড়ির টায়ার টিউবসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, দুর্ভোগ এড়াতে মানুষ এখন বাস চেড়ে ট্রেনে যাতায়াত করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।