Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় উত্তর চট্টগ্রাম

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ফটিকছড়ির হাজারীখীল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরূপ লীলাভূমি। এ অভয়ারণ্য বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা। বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ নিয়ে প্রস্তুত এ অভয়ারণ্য ইতোমধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। উত্তর চট্টগ্রামে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল ২ হাজার ৯০৮.৫০ হেক্টর পাহাড়ী অঞ্চলে সরকারিভাবে গড়ে উঠে এ অভয়ারণ্য। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের হাজারীখীল রেঞ্জের হাজারীখীল বিটের হাজারীখীল ও রাংগাপানি এবং ফটিকছড়ি বিটের হারুয়ালছড়ি বøকের ১৮৯৩ সনে ঘোষিত রামগড়-সীতাকুন্ড রিজার্ভড ফরেস্ট এলাকার সংরক্ষিত বনভূমি এর অন্তর্ভূক্ত। উত্তর বন বিভাগের রামগড়-সীতাকুন্ড রিজার্ভড ফরেস্ট রীজের/চূড়ার পূর্ব পার্শ্বে হাজারীখীল এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে পশু-পক্ষির বিচরণ প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যায়। এখানে ২৫০ প্রজাতির গাছ ও ১৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। যার চার পাশে চা বাগান বিস্তৃত।
এ অভয়ারণ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রায় বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ হিসেবে খ্যাত বিরল প্রজাতির বৃক্ষ বইলাম। এছাড়া এ অভয়ারণ্যে রয়েছে বন কুকুর, বনমুরগি, তক্ষক, গিরগিটি, মুখপোড়া হনুমান, বানর, গুইসাপ, বড় অজগর, হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর ইত্যাদি। বৃক্ষরাজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, টালি, বাঁশপাতা, সিভিট, জারুল, লোহা কাঠ, ছাতিয়ান, গুটগুটিয়া, লটকন ইত্যাদি। পাখির মধ্যে মথুরা, শালিক, ঘুঘু, চড়–ই, টিয়া, বক, দোয়েল, ময়না, ইত্যাদি ছাড়াও আছে হরেক রকম দেশীয় নাম জানা অজানা নানান বিলুপ্ত প্রায় পাখ-পাখালি। পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের নিমিত্তে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে পিকনিক স্পট, ট্রি এ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটি এবং ক্যাম্পিং কার্যক্রম যা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগের হাজারীখীল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের আওতাধীন এবং হাজারীখীল সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাজারীখীল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে অধিকতর আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া পুরো অভয়ারণ্য একপলকে দেখার জন্য একটি পর্যটক ওয়াচ টাওয়ার করারও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্টে ইকোসিস্টেম এন্ড লাইভলিহুডস’ বা ক্রেল এর সাইড কর্মকর্তা মোঃ তানজিবুল আলম আরিফ বলেন, সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে ক্রেল প্রকল্পকে সহযোগিতা করছে। এ অভয়ারণ্যে রয়েছে আইইউসিএন’র করা বাংলাদেশের রেড লিস্টে থাকা বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন পাখিও। এখানে যে পরিমাণ প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে তা আর দেশের অন্য কোন অভয়ারণ্যে নেই। এখন শেষ পর্যায়ে চলছে পর্যটন কেন্দ্র করার কাজ। আমরা ক্রেলের পক্ষ থেকে পিকনিক স্পট ইকোট্যুরিজম ম্যাপও করছি। যাতে পর্যটকরা বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে পারে। তাছাড়া অভয়ারণ্যে ছোট ছোট অনেক ছড়া রয়েছে। এসব ছড়াগুলো আরও সংস্কার করলে পশু-পাখির জন্য আরও ভালো হবে।
যাবেন যেভাবে : ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম-ফটিকছড়িগামী বাসে উঠবেন। চট্টগ্রাম শহরে অক্সিজেন মোড় হতে মাত্র এক ঘণ্টায় লোকাল বাস বা সিএনজি অটোরিকশা করে ফটিকছড়ি বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে লোকাল বা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে হাজারীখীল বাজারে যেতে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগতে পারে। স্থানীয় লোকের সহায়তায় বাজার থেকে সামনে ৫শ’ মিটার এগিয়ে গেলেই হাজারীখীল বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তা অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে পাহাড়ি পথ বা ট্রেইল ধরে হাঁটলে দেখতে পাবেন প্রাকৃতিক বনের অপরূপ দৃশ্য। আপনি চাইলে বন বিভাগের সহযোগী হিসেবে বন পাহারা দলের সহায়তা নিতে পারেন আপনার যাত্রা পথের সহায়তার জন্য।
থাকা ও খাওয়া ঃ হাজারীখীল বাজারে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি খাবার রেস্টুরেন্ট পাবেন। আপনি চাইলে অর্ডারও দিয়ে যেতে পারেন। হাজারীখীল বাজারে থাকার কোন হোটেল নেই এজন্য আপনাকে ফটিকছড়িতে অবস্থান করতে হবে। এছাড়াও বন বিভাগের সাথে ইউএসএইডের ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতা স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তা অভয়ারণ্যের ভেতর ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বনরক্ষী ও বন পাহারাদারদের সদস্যরা তাদের বন পাহারা দেয়া কাজের পাশাপাশি ক্যাম্প সাইটে রাত্রিকালীন পাহারা দেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ