পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যানজট, পানিবদ্ধতা, ময়লাজট ও দখলবাজিতে বসবাসের অযোগ্য ঢাকা নগরীতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের শুভ সূচনা করেছিলেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। দশকের পর দশক ধরে অবৈধ দখলে থাকা মহাখালী ও তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কঠিন চ্যালেঞ্জে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। তাঁর সাহসী পদক্ষেপে অনুপ্রাণীত হয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে সে উদ্যোগে তিনি পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ্য হয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে ঢাকা উত্তরে পরিবর্তনের দৃশ্যপট। আনিসুল হকের সাহসী পদক্ষেপে উদ্ধার হওয়া সরকারী জমি, ট্রাকস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাত ও সৌন্দর্য বর্ধণের উদ্যোগগুলো আবারো আগের অবস্থানে ফিরে যেতে শুরু করে। অবশেষে আনিসুল হকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পুরনো নতুন দখলবাজরা আবারো পুরোদমে সক্রিয় হয়ে ওঠে। দখল উচ্ছেদ, সৌন্দর্য বর্ধন, ট্রাফিক শৃঙ্খলা ও যানজট নিরসনে মেয়র আনিসুল হকের তৎপরতায় যে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল মেয়রের মৃত্যুর পর তা দ্রæতই আগের অবস্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। গাবতলী, মহাখালী, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও গুলশান-বনানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা ও যানজটের পুরনো চিত্র আবার ফিরে এসেছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করে গণপরিবহণের জন্য অবারিত করে দেয়া হয়েছিল দু’ বছর আগে। এই একটি সাহসী পদক্ষেপে পুরো এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে দেয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আনিসুল হকের সূচিত উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। আনিসুল হকের দাফনের এক সপ্তাহের মধ্যে গত ৮ ডিসেম্বরে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, অনেক ঝুঁকি নিয়ে আনিসুল হকের মুক্ত করা তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও শিল্পাঞ্চলের সরকারী জায়গা আবার বাস-ট্রাকের অবৈধ দখলে চলে গেছে। যে সাহসী পদক্ষেপ নগরবাসির অকুণ্ঠ সমর্থন ও প্রশংসা অর্জন করেছিল, যে উদ্যোগ তেজগাও- মহাখালীর যানজটের চিত্র অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিল, একজন আনিসুল হকের অনুপস্থিতিতে তা’ এত দ্রুত এমন বিশৃঙ্খলা ও দখলবাজির অতল গহŸরে হারিয়ে যাবে, এমনটা সম্ভবত কেউ ভাবেনি। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র যে রাস্তাকে পার্কিংমুক্ত ঘোষনা করে নগরবাসিকে যানজট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ব্যক্তি হিসেবে সেই মেয়র না থাকলেও ঢাকা উত্তরের মেয়রের পদ এবং প্রশাসনিক পদগুলো কিন্তু খালি নেই। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতার মত মেয়র আনিসুল হকের বিশেষ উদ্যোগে বাস্তবায়িত পদক্ষেপগুলো বহাল রাখার উদ্যোগ দেখতে চায় নগরবাসী।
মেয়র নির্বাচনের আগে নির্বাচিত দুই মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গত সাড়ে তিন বছরে তার কিছ কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও মেয়র আনিসুল হক নগরবাসিকে কিছুটা আশাবাদি করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রভাবশালী মহলের দখলবাজি থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান মুক্ত করে তিনি যে সাহসিকতার প্রমান রেখেছিলেন, ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তা একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যানজট ও পানিবদ্ধতার মত সমস্যার সমাধানকল্পে ঢাকা নগরীর দখল হয়ে যাওয়া নদনদী, অর্ধশতাধিক খাল, জলাধার ও বিভিন্ন সংস্থার সরকারী জমি পুনরুদ্ধারে নাগরিক সমাজের দাবী এবং আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্বেও তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছেনা। ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র তেজগাঁও ও গাবতলী বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখলমুক্ত করতে যে ধরনের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন তার উত্তরসুরী ও সহকর্মীদেরও অনুরূপ ভ’মিকা নিতে হবে। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনাসহ দেশের প্রায় সব সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ই এ ধরনের দখলবাজির ঘটনা রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবং নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা ঐকবদ্ধ হয়ে নিরপেক্ষভাবে সাহসী উদ্যোগ নিলে নিশ্চিতভাবেই জনসমর্থন পাবেন। দুর্ভোগমুক্ত, বাসযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে প্রভাবশালী দখলদারদের সাথে মেয়র-কাউন্সিলরদের আপস করার কোন সুযোগ নেই। ঢাকা উত্তরে মেয়র আনিসুল হক যে সব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করেছিলেন তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে, জনকল্যাণে আপসহীন ভ‚মিকা নিলে জনপ্রত্যাশা অনেকখানি পুরণ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।