পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানির মেজবানে ভিড়ে পদদলিত হয়ে দশ জন নিহত আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল (সোমবার) দুপুরে নগরীর জামাল খান মোড়ের অদূরে রীমা কনভেনশন সেন্টারে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া নগরীর মুরাদপুরস্থ এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারেও প্রচন্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রীমা কনভেনশন সেন্টারে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বরতদের অবহেলায় এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। এ কনভেনশন সেন্টারের মালিক সাহাবুদ্দিন ডেকোরেটার্সের মোঃ সাহাবুদ্দিন। মানুষের ভিড় এড়াতে কনভেনশন সেন্টারের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বেলা সোয়া একটার পর মানুষের ধাক্কায় হঠাৎ গেইটটি খুলে যায়। কনভেনশন সেন্টারের ঢালু পথ দিয়ে একসাথে শত শত লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পদপিষ্টে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পদপিষ্ট হয়ে নিহতদের মধ্যে ৯ জনের নাম জানাতে পেরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন কৃষ্ণপদ দাশ (৪০), সুধীর দাশ (৫০), দীপঙ্কর রাহুল দাশ (৪৫), আশিস বড়–য়া (৪২), ঝণ্টু দাশ (৪৫), প্রদীপ তালুকদার (৪৫), লিটন দেব (৫৩), রীবন দাশ (৪০) ও ঘনা শীল (৬০)। আহতদের মধ্যে আছেন নিশান দাশ, দুলাল দাশ, টিপু ভৌমিক, মোঃ হারুন, উমা চৌধুরী, নশু দাশ, লিটন দেসহ আরও ২০ জন। একই সময়ে নগরীর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারেও প্রচন্ড ভিড় ও হুড়োহুড়িতে ১০ জন আহত হয়। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এ ৩০ জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার ভোরে ইন্তেকাল করেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার কুলখানি উপলক্ষে গতকাল নগরীর ১৪টি কনভেনশন হল ও কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজন ছিল রীমা কনভেনশন সেন্টারে। এখানে হতাহতদের প্রায় সকলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হতাহতদের স্বজনেরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ছুটে যান। সেখানে স্বজন হারাদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রিয় নেতাকে হারানোর মাত্র ৩ দিনের মাথায় তারই কুলখানিতে এ ট্র্যাজেডি নগরজুড়ে ফের শোকের ছায়া নেমে আসে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আওয়ামী লীগের নেতারা হাসপাতালে ছুটে যান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার প্রতি ১ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দেয়া হয়। পদদলিত হয়ে নিহতের ঘটনায় একদিনের শোক কর্মসূচি দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
জানা যায়, রীমা কনভেনশন সেন্টারে প্রায় ৭ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা ছিল। এ আয়োজন তদারকির দায়িত্বে ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা জহর লাল হাজারী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। শৃঙ্খলা রক্ষায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ছাড়াও প্রায় ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, কনভেনশন সেন্টারে ৭ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হলেও দুপুর নাগাদ সেখানে অন্তত ১০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। সকাল থেকে লোকজনের ভিড় কম থাকায় প্রধান গেইটটি খোলা রাখা হয়। ১২টার পর প্রচন্ড ভিড় দেখা গেলে গেইটটি বন্ধ করে দেয় স্বেচ্ছাসেবকেরা। বেলা সোয়া ১টার পর মানুষের চাপে গেইটটি হঠাৎ খুলে যায়। এসময় শত শত লোক ঢালু পথ বেয়ে কনভেনশন সেন্টারে ঢুকতে গেলে অনেকে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। তাদের উপর দিয়ে মানুষ হেঁটে যাওয়ায় এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে অর্ধশত মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা ভিড় সরিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
দুর্ঘটনায় আহত রাজু দাশ বলেন, মানুষের ধাক্কায় গেইট খুলে গেলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এসময় তিনিও মাটিতে পড়ে যান। তার উপর দিয়ে অনেকে হেঁটে যায়। কোনমতে তিনি নিজেকে রক্ষা করেন। তার পায়েও প্রচন্ড আঘাত লাগে। তিনি বলেন, কনভেনশন সেন্টারে প্রবেশের সড়কটি ঢালু হওয়ায় মানুষের চাপে লোকজন মাটিতে পড়ে যায়। আর এ কারণেই পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। রাজু দাশসহ আহত অনেকে বলেছেন, প্রচন্ড ভিড় মোকাবেলায় পুলিশ বা স্বেচ্ছাসেবকরা তেমন তৎপর ছিলেন না। বিশেষ করে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ দূরত্বে নির্বিকার দাঁড়িয়েছিল।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোস্তাইন হোসেন বলেন, সেখানে ২০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরিবেশ ছিল সুশৃঙ্খল। তবে হঠাৎ করে গেইট খুলে যাওয়ায় একসাথে সবাই হুড়মুড় করে ঢুকতে গিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়। উদ্ধার কাজে যোগ দেওয়া দমকল বাহিনীর সদস্যরা জানান, কনভেনশন সেন্টারের প্রবেশ পথটি ঢালু হওয়ায় প্রচন্ড ভিড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গেইট খুলে যাওয়ায় একসাথে শত শত লোক ঢুকার চেষ্টা করেন। আর এতেই মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহত এবং মেজবানে আগতদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ ও প্রাপ্তবয়স্ক। নারী এবং শিশু থাকলে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আরও বাড়তো বলে জানান তারা।
একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, যারা পদপিষ্ট হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই স্থুলকায় এবং মধ্যবয়সী। মোটা হওয়ায় তারা পড়ে গিয়ে উঠতে পারেননি। আর এ কারণেই পদপিষ্ট হয়েছেন। যারা হালকা-পাতলা ছিলেন তাদের অনেকে আহত হলেও সেখান থেকে নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন। দ্বিতল কনভেনশন সেন্টারটির নিচতলায় গাড়ির রাখার জায়গা। দ্বিতীয় তলায় খাওয়ার ব্যবস্থা। দুর্ঘটনার সময়ও দ্বিতীয় তলায় হাজার খানেক মানুষ খাবার গ্রহণ করছিলেন। তবে এ ট্র্যাজেডির পর আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, অনেকে পড়ে গেছেন, মানুষের ভিড়ের কারণে অনেকে পদদলিত হয়েছেন। কনভেনশন সেন্টারের ফটকে পুলিশের তৎপরতার অভাব ছিল কি না জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত নয়। এটা মারামারি বা গ্রুপিং বা অন্য কোনো বিষয় না। নিরাপত্তার অভাব হয়নি, অতিরিক্ত মানুষের কারণে এবং ঢোকার সময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেকে পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়েছেন। অন্য যেসব কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের ব্যবস্থা হয়েছে, সেসব জায়গায় দুর্ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিক পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয় বলেও জানান ইকবাল বাহার। মেজবানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জহরলাল হাজারী বলেন, এটি একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং শেষকৃত্যের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান হতাহতদের স্বজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে স্বজনদের আহাজারি আর আহতদের আর্ত-চিৎকারে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। স্বজন হারানোর বেদনায় অনেকে মাটিতে গড়াগড়ি করে কাঁদতে থাকেন। আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের সান্ত¦না দেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেল, নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী হতাহতদের দেখতে যান।
নগরীর অন্যসব কমিউনিটি সেন্টারেও মেজবানে প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়। এতে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খাবারের পর্যাপ্ত আয়োজন থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকে খাবার থেকে বঞ্চিত হন। দুপুরেই স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে খাবার শেষ হয়ে গেছে বলে মাইকে ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ভিআইপি ব্যাংকুইটেও খাবার শেষ বলে ঘোষণা দেন আয়োজকরা। অথচ তখনও কমিউনিটি সেন্টার দু’টির সামনে শত শত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তার জীবদ্দশায় অসংখ্য বড় বড় মেজবানের আয়োজন করেছেন সুনিপুণভাবে। অথচ তার কুলখানির আয়োজনে এমন অব্যবস্থাপনায় বিব্রত অনেকে। এক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেলসহ নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের দূরদর্শিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
একদিনের শোক
কুলখানির মেজবানে হতাহতের ঘটনায় একদিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গতকাল এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচির কথা জানান। তিনি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি অনুষ্ঠানে ১০ জন নিহত ও অনেকে আহত হওয়ার ঘটনাকে অনাকাক্সিক্ষত দুঃখজনক ট্র্যাজেডি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে তিনদিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি, তার জন্য নিবেদিত প্রাণ মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে এই কর্মসূচি হিসেবে আরো একদিন শোকের দিন বর্ধিত করা হল। নিহতদের স্মরণে আগামীকাল বুধবার বিকাল ৩টায় চট্টেশ্বরী কালী মন্দিরে প্রার্থনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। ইতোমধ্যে নিহত পরিবারদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় যে তাজা প্রাণগুলো ঝড়ে গেছে তারা মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আমাদের দলের প্রতি অনুগত। তাদের প্রতি আমরা সম্মান জানাই।
প্রবাসী মন্ত্রীর শোক
চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতা ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী’র কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী মরহুমদের রুহের মাগফিরাত ও চিরশান্তি কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।