পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে আটটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বাবা-মায়ের কবরের মাঝখানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। আজ (রোববার) সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে সেখানে জানাজা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা পূর্বভাগ গ্রামের পশ্চিমপাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তুফা কামাল, শিক্ষা মন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। এদিকে এক শোকবার্তায় প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ বলেছেন, তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করল। দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রয়াত ছায়েদুল হকের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান আব্দুল হামিদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক শোকবার্তায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছায়েদুল হকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ছয় দফার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রিয় এই নেতা আওয়ামী লীগের টিকিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিত প্রাণ ও সৎ নেতাকে হারালো। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) প্রশান্ত কুমার কর্মকার ইনকিলাবকে বলেন, মন্ত্রী শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার কিছু পরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা নিয়ে মধ্য সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরের এমপি ছায়েদুল হক দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, ইউরিন ইনফেকশন ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছিলেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি অসুস্থতা নিয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি হন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, প্রস্টেট গø্যান্ডের সংক্রমণে গত বুধবার থেকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ছায়েদুল হকের জন্ম ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলাধীন পূর্বভাগ গ্রামে মেহের চান্দ বিবি ও মোহাম্মদ সুন্দর আলীর ঘরে। পেশায় আইনজীবী এই আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরনগর উপজেলা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ছায়েদুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ট। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া আইন বিষয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে কাজ করেছেন। ছায়েদুল হক ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬৫ থেকে ৬৬ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্বাধীনতা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত লেম্বুছড়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর একাধারে সপ্তম থেকে দশম সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সংসদীয় কাজে তাঁর অভিজ্ঞতা ব্যাপক। সপ্তমম ও নবম সংসদে তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্য, অর্থ, সরকারি তহবিল ও বিশেষ বিষয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালে বিএসএমএমইউতে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রয়াত নেতাকে সৎ রাজনীতির প্রতিভূ অভিহিত করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। এদেশে অনেকে পাওয়ার পেলে তার অপব্যবহার করে, কিন্তু পাওয়ার পেয়েও তাকে দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। তার মতো সৎ মানুষ বিরল। বেলা ১১টার দিকে ছায়েদুল হকের লাশ মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় তার সরকারি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে লাশ নেয়া হয় হাসপাতালের হিমঘরে। ওবায়দুল কাদের জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ছায়েদুল হকের লাশ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে প্রথম জানাজা হবে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে লাশ। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে।
হাসপাতালে ছায়েদুল হকের শয্যাপাশে প্রেসিডেন্ট হাসপাতালে ছায়েদুল হকের শয্যাপাশে প্রেসিডেন্ট চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর একদিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্ষীয়ান নেতা ছায়েদুল হককে হারাল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ছায়েদুল হক। ছায়েদুল হকের দায়িত্ব পালনের সময়ই মৎস্য ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ স্থানে উঠে আসে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তার অবদানের কথা স্মরণ করছে মন্ত্রণালয়। নিজের নির্বাচিত এলাকা নাসিরনগরে গত বছর হিন্দু স¤প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ছায়েদুল হককে।
মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক এর মৃত্যুতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফেরাত এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।