Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

গুলিভর্তি অস্ত্রসহ আটকের পরেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতি বিমানবন্দরে অস্ত্রগুলিসহ এক ব্যক্তিকে আটকের পর নিয়মিত মামলায় আদালতে না পাঠিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম সুকান্ত সাহা। তিনি বিমানবন্দর থানায় সাব ইন্সেপেক্টর (এসআই) পদে কর্মরত আছেন। আটক ব্যক্তি ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালক আজমত রহমান এবং তার পিতা ড, আতাহার উদ্দিন ওই ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের এসআই সুকান্ত সাহ মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এবং ছোট বোনকে ওই ব্যাংকে চাকুরী দেয়ার বিনিময়ে আটকের পর ওই রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হযেছে। বিষয়টি পুলিশের উচ্চ মহলে জানাজানি হলেও ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিমানবন্দরে কর্মরত একাধিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপুর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানে গুলি ভর্ত্তি অস্ত্রসহ প্রবেশ করা একটি গুরুতর অপরাধ। এধরণে অপরাধীতে আদালতে প্রেরণ না করে যারা ছেড়ে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন। ব্যবস্থা না নিলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিবে। বিমানবন্দরে কর্মরত সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা বিভাগ সুত্র জানায়,ঘোষনা বিহীন পিস্তল ও ম্যাগাজিন ভর্তি গুলি সহ শাজালাল বিমানবন্দরে আটক যাত্রীর বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহন না করেই ছেড়ে দিয়েছে থানা পুলিশ। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট দারোগা (এসআাই) সুকান্ত ঐ যাত্রীর কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ আদায় করেছেন। আবার উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছেন ছোট বোন চাঁদনী সাহা একটি চাকুরী। ঐ দারোগার বোন চাঁদনী সাহা ট্রেইনী অ্যাসিস্টেন্ট অফিসার হিসেবে এখন বসুন্ধরা শাথার ফারমার্স ব্যাংকের কর্মরত আছেন। যোগাদানের পরই এই ঘটনাটি ফাঁস হয়ে আড়ালে ব্যাংকের সর্ব মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় উপঢৌকনের বিষয়টি।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারী রাতে হংকংগামী যাত্রী আজমত রহমান (পাসপোর্ট নং-বিএম-০০৩৬৩৯১) গেইট নং-৩, এইচ এল-৩ এর স্ক্যানিং মেশিন অতিক্রম করে বোর্ডিং ব্রীজ ৬ দিয়ে পার হওয়ার সময় নিরাপত্তা তল্লাশীর মুখে পড়েন। এসময় তার সাথে থাকা ল্যাপটপ ব্যাগ স্ক্যানিং করে একটি ওয়ালথার পিস্তল (নং ০০২৪৯৪) ও ৮ রাউন্ড তাজা গুলি দেখতে পান নিরাপত্তিকর্মীরা। সাথে সাথে বিষয়টি বিমান বন্দরের নিরাপত্তা শাখাকে জানানো হলে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। এরপর বিমান বন্দরের উপ-নিরাপত্তা কর্মকর্ত্ (ডিএসও) আনোয়ারা বেগম ঐ যাত্রীকে অস্ত্রগুলিসহ আটক দেখিয়ে ঐ রাতেই বিমানবন্দর থানায় সর্পোদ করেন। তিনি এ ব্যপারে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ সেটিকে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) হিসেবে গ্রহন করে (নং-৭৫৪, তাং১৬-০২-১৭ইং)। পুলিশ ঐ যাত্রীকে আটক দেখায় এরপর ঐ যাত্রীকে ছাড়ানোসহ ঘটনাটিধামাছাপা দেয়ার জন্য গোটা রাত জুড়ে বিভিন্ন মহলে দেন দরবার শুরু হয়। পরদিন ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়। পুলিশ তদবীরের মুখে ঐ যাত্রীকে তার বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেন।
জানা গেছে, ঐ যাত্রীর পিতা ড.আতাহার উদ্দিন ফারমার্স ব্যংকের ভাইস চেয়ারম্যান। আর যাত্রী আজমত রহমান ঐ ব্যাংকের পরিচালক। আটকের পর ওই রাতেই থানা পুলিশের সাথে সমঝোতা করে আজমত রহমানকে অস্ত্র-গুলিসহ ছাড়ে দেয়া হয়। আইন মোতাবেক তাকে আদালতে হাজির করার বিধান রয়েছে। কিন্ত আইনের লোক হয়েও বেআইনি ভাবে দারোগা সুকান্ত তাকে ছেড়ে দেন। তিনি ছেড়ে দেয়ার সময় ঘটনায় থানার জিডি বইয়ে (নং ৭৬৯) উল্লেখ করেন যাত্রী আজমত রহমানকে তার পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হলো। তিনি জিডিেিত আরোও উল্লেখ করেন, পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরার মৌখিক আদেশে ঐ আটক যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
উপঢৌকনের বিষয়টি জানতে বিমান বন্দর থানার এসআই সুকান্ত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকে তার একটি আন্টি চাকুরী করেন। তার বোন ইংরেজীতে মাস্টার্স। ঐ যাত্রী আটকের ঘটনায় ২/৩ মাস আগেই তার ছোট বোন ফারমার্স ব্যাংকে চাকুরীর জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার মাধ্যমেই তার ছোট বোনের চাকুরী হয়েছে।
সুকান্ত সাহা জানান, তার বোন চাঁদনী সাহার ফারমার্স ব্যাংকে চলতি বছরের মার্চের শেষদিকেই যোগদান করেন। তার বোন ট্যালেন্ট দাবী করে সুকান্ত বলেন, তার চাচা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। সব মিলিয়ে বোনের চাকুরীটা হয়েছে। সব মিলিয়ে বোনের চাকুরী কোন উপঢৌকনের বিষয় না। তিনি বলেন, আটক যাত্রীর অস্ত্র ও গুলির লাইসেন্স ছিল। এই অস্ত্রগুলি সাথে রাখা তার মৌলিক অধিকার। ভুলবশতঃ সাথে করে তিনি এগুলো নিয়ে বিদেশ যাচ্ছিলেন। অনৈতিক কিছুই ছিলনা বলে আটক যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিমান বন্দরে এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ

৩ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ