পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর সর্বত্রই এখন ধুলা-বালুতে একাকার। শীতের মৌসুমে কুয়াশার চাদরে ঢাকার কথা থাকলেও সববিছুই ঢেকে যাচ্ছে ধুলার চাদরে। ধুলার যন্ত্রণায় এখন ঢাকা শহরের রাস্তায় নামাই যাচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই-একটি সড়ক ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ছোট-বড় সব রাস্তায়ই এখন ধুলা-বালুতে একাকার। ঘরবাড়ি, স্কুল-মাদরাসা, অফিস-আদালত ঢেকে যাচ্ছে ধুলার চাদরে। দুই-একদিন ধোয়ামোছা না করলে ধুলার আস্তরে ঢেকে যাচ্ছে সবকিছু। এ বছর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে ধুলার পরিমাণ। এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে শ্বাসকষ্ট, য²া, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি, কাশি, হাঁচিসহ ফুসফুসে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ধুলার দূষণ। এ কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীবাসী। ধুলার দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসরত শিশু ও বয়স্ক নাগরিকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের প্রফেসর শিশু বিশেষজ্ঞ নুরুল ইসলাম বলেন, ধুলা-বালু সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ধুলা-বালুর কারণে ব্রঙ্কাইটিজ, সর্দি, কাশি, জ্বর, চোখের ব্যাথা, মাথা ব্যথাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগ বেড়ে যাবে।
বছরজুড়েই চলছে রাজধানীতে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। বর্ষাজুড়েই ছিল কাদাপানি আর খানাখন্দের দুর্ভোগ। শুষ্ক মৌসুমে এসে সর্বসাধারণকে পড়তে হয়েছে ধুলাদূষণে। প্রতিনিয়ত স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ছাড়াও এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সর্বসাধারণ। যেন দেখার কেউ নেই। উন্নয়ন-ধুলায় শ্বাস নিতেও কষ্ট নগরবাসীর। শহরের রাস্তার দুই পাশের দোকানপাট আর হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ধুলায় ঢাকা পড়েছে। গতকাল রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজের পাশে যাত্রাপথে সাইদুল ইসলাম নামে এক প্রাইভেট কারচালক জানান, কালো রঙের গাড়ি এখানে আশেপাশে কোথাও এক থেকে দুই মিটি রেখে দেখুন ধুলার আস্তর কি পরিমাণ পড়ে। ধুলার কারণে এখানকার চায়ের দোকান আর খাবারের হোটেলে মানুষ খেতে পারে না।
এ চিত্র এখন ঢাকার অধিকাংশ এলাকার। বিশেষ করে রাজধানীর খিলগাঁও, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, সায়েদাবাদ, শ্যামপুর-ধোলাইখাল, চিটাগাং রোড, রায়ের বাগ, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, কারওয়ান বাজার, বংশাল, কুড়িল বিশ্বরোড, ওয়ারী, সদরঘাট, বাবুবাজার, ধানমন্ডি, জিগাতলা, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁও, কালশী, রায়ের বাজার বেড়িবাঁধ, বছিলা, মিরপুর-১৪ থেকে ভাসানটেক, বিমানবন্দর, উত্তরা মডেল টাউন, টঙ্গীসহ ঢাকার বেশির ভাগ সড়কই ধুলার চাদরে আচ্ছাদিত। সাধারণ যান চলাচলকারী এলাকার তুলনায় ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন এলাকাগুলোয় সবসময় ব্যাপক ধুলা-বালু ওড়ায় আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বাসা পাল্টে ধুলামুক্ত সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাচ্ছেন। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মিন্টো রোড, গুলশান, ধানমন্ডি ও বনানীর কিছু এলাকার ভিআইপি সড়কে।
জানা গেছে, শুধু উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িই নয়, নিয়ম না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণের মাটি, বালু, সিমেন্ট, পাথর, নুড়িপাথর, কংক্রিট যত্রতত্র রেখে দেওয়া হয়। নির্মাণাধীন ভবনের বর্জ্য রাস্তা দখল করে মাসের পর মাস ফেলে রাখায় সেখান থেকেই পদপিষ্ট হয়ে ধুলোর সৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশের ড্রেনেজের ময়লা পরিষ্কার করা হলেও ড্রেন থেকে তোলা আবর্জনা রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখায় শুকিয়ে যাচ্ছে। এগুলো থেকেও ধুলা উড়ছে। শুকনো ময়লা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ায় তা ধুলায় পরিণত হয়ে দূষণের সৃষ্টি করছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় তা থেকেও সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান অভিজাত এলাকা উত্তরা মডেল টাউন। এটা এখন শুধু নামেই। কার্যত এটা এখন ধুলা-ময়লা, খানাখন্দ আর আবর্জনার টাউন। উত্তরা-১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত এখন বাড়িঘর নির্মাণ ও বসবাসের উপযোগী। তবে সব সেক্টরেই রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব নাজুক। আর উত্তরা মডেল টাউনের তো পুরোটাই ধুলোময়। ৪ নম্বর সেক্টরের ২০টি সড়কের সবই এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। টার্কি হোপস স্কুল, আগা খান স্কুলসহ বেশ কিছু নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় নির্মাণকাজের নামে ইট, বালু, সুড়কি ও মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ৬ নম্বর সেক্টরে ইংলিশ মিডিয়াম দিল্লি পাবলিক স্কুল ও লাইফ প্রিপারেটরি স্কুলের সামনের রাস্তায় ড্রেন নির্মাণের নামে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিশাল আকারের গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই ধুলা-বালুতে একাকার স্কুলসহ আশপাশের এলাকা।
শ্যামপুর থানার পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে যাত্রাবাড়ী থানার ধোলাইপাড় পর্যন্ত রাস্তা খানাখন্দে ভরা। প্রচন্ড ধুলায় নাস্তানাবুদ এখানকার সাধারণ মানুষ। ধুলার তীব্রতায় পথচারীদের অনেকের হাঁচি ও কাশি বেড়েই চলেছে। শ্বাসকষ্টে ভুগছে শিশুরা। মাস্ক ব্যবহার করেও রেহাই পাচ্ছে না এখানে চলাচলকারীরা। কাদার মতোই ধুলার স্তর জমে গেছে। গতকাল শ্যামপুরে কথা হয় আনিসুল ইসলাম নামে এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চার লেনের কাজ শুরু হওয়া, রেললাইনের সিগন্যাল, খানাখন্দ আর ধুলা-বালুর কারণে ওই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করা গাড়িগুলোর প্রচন্ড চাপে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ওই রাস্তায় চলাচলের ফলে আমি নিজেই বর্তমানে শ্বাসকষ্টে ভুগছি।
ঢাকার রাস্তা কুয়াশাচ্ছন্ন দেখা গেলেও তা কুয়াশা নয়, আসলে ধুলায় ধূসর হচ্ছে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক। বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও, মিরপুর সাড়ে-১১, গাবতলী, মাজার রোড প্রায় সবসময় ধুলায় ধূসর থাকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন লাইন অপসারণের কাজ করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে খননের কাজ করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে শেওড়াপাড়া থেকে কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এ কারণে এ এলাকা সবসময় ধুলায় ধূসর থাকে। একইভাবে গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১ নম্বর পর্যন্ত সড়কটিও ধুলায় আচ্ছন্ন দেখা গেছে। ধুলা থেকে বাঁচতে সবসময়ই মাস্ক পরে থাকতে হয় আশপাশের ব্যবসায়ীদের। আবার পথচারীরাও ধুলা থেকে বাঁচতে নাক-মুখ চেপে চলেন। ধুলার কারণে ক্রেতাহীন দিন কাটে ফুটপাথের দোকানিদের। মাজার রোড থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে তৈরি হওয়া খানাখন্দ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার, যা দূষিত করছে পরিবেশ। রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দিন দিন ধুলার প্রকোপ বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন মানুষ। এ ছাড়া বিমানবন্দর সড়কের সেতুভবন থেকে মহাখালী আমতলী পর্যন্ত সড়কের পাশের ফুটপাথও খানাখন্দ আর ধুলায় একাকার। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা উন্নয়নকাজের ধীরগতির জন্যই এ অবস্থা।
রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রীর রাস্তায় ধুলার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে নাক-মুখ ঢাকার মাস্ক বিক্রেতার সংখ্যা। কারণ রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়বে ধুলার কুয়াশা। তবে সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতের কুয়াশাও। সকালে কিংবা সন্ধ্যায় ধুলা আর কুয়াশায় একাকার হয়ে যায়। ধুলার কারণে চোখ মেলে তাকানোর অবস্থা নেই। গাড়ির চাকার সঙ্গে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। চোখের মধ্যে ঢুকে পড়ছে কচকচে ধুলা।
এদিকে বাড্ডা এলাকায় গেল এপ্রিলে এ রাস্তায় এক পাশ খুঁড়ে ড্রেনের পানি যাওয়ার জন্য রিং বসায় সিটি করপোরেশন। এই খোঁড়া জায়গায় বালু আর খোয়া দিয়ে রাখায় গাড়ি গেলেই ধুলায় অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। উত্তর বাড্ডা পার হলেই দেখা যাবে চলছে ফুটপাথ সংস্কারের কাজ। এরপর মেরুল বাড্ডায় গেলে চোখে পড়বে নর্থ ইউলুপ নির্মাণের মহাযজ্ঞ। সেখানে ছড়িয়ে রাখা সিমেন্ট-বালু বাতাসে মিশে গিয়ে কষ্টকর করে তুলছে জীবনযাপন।
খিলগাঁও তালতলা, বাসাবো, গোড়ান, রামপুরা, নন্দীপাড়া, শাহজাহানপুর, চৌধুরীপাড়া, মালিবাগের এমন কোনো রাস্তা বাকি নেই, যেটি কাটা হয়নি। প্রতিটি রাস্তা একাধিকবার কাটা হলেও ঢালাই দেয়া হয়নি। ফলে শীতের বার্তার সঙ্গে সঙ্গেই এখন পুরো এলাকা ধুলায় একাকার। রাস্তায় বেরিয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলে কাপড়চোপড়, মাথার চুল সাদা হয়ে যায়। এ এলাকার মানুষ ধুলার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ।
মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাবিস্কোর রাস্তা বেশ কিছু জায়গায় ভাঙা। এসব জায়গা মেরামতে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, বালু। ফলে দূরপাল্লার ভারী গাড়ির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। মহাখালী কাঁচাবাজার থেকে নাবিস্কো হয়ে সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। মূল সড়কের কয়েকটি স্থানে চলছে উন্নয়ন কার্যক্রম।
সল্প পরিসরে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। এ নিয়ে কোনো প্রকার উদ্যোগ নেই উত্তর সিটি করপোশেনের। শুষ্ক মৌসুমে ধুলা-বালু রোধে প্রতিদিন ৯টি গাড়ি দিয়ে ৫০ কিলোমিটার সড়কে দুই বেলা করে পানি ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ধুলা প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটির উদ্যোগে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা এবং অফিস ছুটি হওয়ার আগে বেলা ১টা থেকে ৩টা দুই বেলা সড়কে পানি ছিটানো হচ্ছে। এভাবে দক্ষিণ সিটির প্রধান সড়কগুলোয় (প্রায় ৫০ কিলোমিটার) রাস্তায় নিয়মিত এ কার্যক্রম চলনো হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।