Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চালক-মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দু’টি যাত্রীবাহী বাসের প্রতিযোগিতার খেসারত হিসেবে প্রাইভেট কার আরোহী একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার বিকেলে রাজধানীর খিলক্ষেত ফ্লাইওভারের পাশের রাস্তায়। প্রতিযোগিতাকারী দু’টি বাসের একটি পেছন থেকে প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রাইভেট কারের চালক। একই ঘটনায় দুই বাসের অন্তত ১০ জন যাত্রীও আহত হন। পুলিশের গুলশান জোনের এডিসি জানিয়েছেন, দুই কোম্পানির দু’টি বাস বেপরোয়া গতিতে পাশাপাশি প্রতিযোগিতা করে চলছিল। এ সময় একটি বাস ওভারটেক করতে গিয়ে প্রাইভেট কারটিকে চাপা দেয়। অপর বাসটি এসে পেছন থেকে ওই বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি উল্টে যায়। রাজধানীতে যানচলাচল কতটা অনিয়ন্ত্রিত, চালকরা কতটা বেপরোয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া যান চলাচল কী ধরনের ভয়াবহ পরিণতির জন্ম দিতে পারে, আলোচ্য ঘটনায় তার স্পষ্ট প্রমাণ বিধৃত। রাজধানীসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। খিলক্ষেতের আলোচ্য এই দুর্ঘটনা ছাড়াও একই দিনে রাজধানীতে আরো একজন ট্রাকচাপায় মারা গেছেন। বেপরোয়াভাবে কিংবা প্রতিযোগিতা করে যানবাহন চালানোর পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয় প্রাণহানিকর। এটা বহু সমীক্ষা, তদন্ত ও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া যানবাহন চালনা ও চালকের অদক্ষতা। ট্রাফিক বিধি ও নির্দেশনা বেতোয়াক্কা করাও দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ। খিলক্ষেতের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, দু’টি বাসই ট্রাফিক নির্দেশিকা মানেনি। উল্টো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদেরও বিষয়টি নজরে আসেনি কিংবা এলেও তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেননি। এর ফলে তিনজনের অকালমৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও কম নয়। আরো মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারত। প্রশ্ন হলো, এই হতাহতের দায় কার?
দুই বাসের চালকদ্বয় এর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। পরোক্ষভাবে দায়ী বাসের মালিকগণ। ট্রাফিক কর্তৃপক্ষও দায় এড়াতে পারে না। দেখা গেছে, অধিকাংশ যানবাহন চালকই উদ্ধত, বেপরোয়া ও অদক্ষ। এই রাজধানীতেই বাসের নিচে চাপা দিয়ে মানুষ হত্যার পর চালক প্রকাশ্যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। গত রোববারই মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এক বাসযাত্রীকে পিটিয়ে আরেকটি চলন্ত বাসের নিচে ফেলে হত্যা করেছে বাস শ্রমিকরা। এভাবে মানুষ হত্যা করার স্পর্ধা কিভাবে পায় বাসের চালক ও শ্রমিকরা? এর সহজ উত্তর হলো, এ ধরনের হত্যাকা-ের জন্য তাদের কোনো সাজা ভোগ করতে হয় না। বহুবার বিভিন্ন মহল থেকে এ দাবি ও তাকিদ উচ্চারিত হয়েছে, মানুষ হত্যাকারী চালক-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নির্ধারণ ও নিশ্চিত করতে হবে। আজ পর্যন্ত তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। বাস শ্রমিকদের সংঘশক্তি এবং সরকার সমর্থক শ্রমিক ইউনিয়ন বা ফেডারেশনের বিরোধিতা ও তা-বের কারণে ঘাতক চালকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হ্রাস পাবে বলে মনে করার কারণ নেই। একথাও বারবার বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য মালিকদের আইনের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামানো, অদক্ষ, আধাদক্ষ চালক নিয়োগ ইত্যাদির জন্য তারাই দায়ী। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ত্রুটিযুক্ত গাড়ি ও আইন অমান্যকারী চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের। এসব ক্ষেত্রে যেকোনো বিচ্যুতি, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার দায় তার ওপর বর্তায়।
মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। সেই জীবন রাস্তাঘাটে কিছু মানুষের কারণে বিনষ্ট হবে, এটা বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর যত মানুষ হতাহত হয় অন্য কোনো দেশে জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে তত মানুষ হতাহত হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর শত শত প্রাণ হারায়। আহত হয় হাজার হাজার। আহতদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু ও অকর্মণ্য হয়ে যায়। একটি পরিবারের কোনো উপার্জনকারী বা কর্মক্ষম সদস্য যখন সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয় তখন পরিবারটিও বিপন্ন হয়ে পড়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও নিতান্ত কম হয় না। সড়ক দুর্ঘটনার এই সার্বিক ক্ষতি রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা যে দেশে গড়ে ওঠেনি বা নেই, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধিই তার প্রমাণ বহন করে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্দোলন আছে সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনা যায়। কিন্তু সুফল বলতে যা বোঝায় তা নেই। আমরা স্পষ্ট করেই বলতে চাই, যতদিন চালক-মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হবে, ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ আরো সক্রিয় ও দায়িত্বশীল না হবে এবং জনগণের মধ্যে সতর্কতা ও সাবধানতা বৃদ্ধি না পাবে ততদিন সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে না; কমবে না প্রাণহানি। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ-পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চালক-মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
আরও পড়ুন