Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সড়ক-মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা অনেক দুর্ঘটনার কারণ হলেও এখন পর্যন্ত সেসব সরানো সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অনেক কথা বললেও তাতে কোন লাভ হয়নি। একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রভাবশালীদের কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলো দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিন না যেতেই তারা ফিরে আসছে। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, একসময়ে দখল ও দখলমুক্তকরণের পরিসংখ্যান থাকলেও বর্তমানে ঢাকা জোনের কোন পরিসংখ্যান সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক মাসের সময় দিয়ে দখলদারদের সরে যাবার নির্দেশ দেয়ার পর গত বুধবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে প্রকৃত তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তুলে ধরেছে। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬ মার্চ পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কের প্রায় ৩২৯.৮৯ একর দখলকৃত এলাকা থেকে মাত্র ৯৪.৩৬ একর মুক্ত করা গেছে। দখলকৃত জমিতে মোট ২৬,২১৮টি অবৈধ অবকাঠামো ছিল, যার মধ্যে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট অন্তর্ভুক্ত। সড়ক ও মহাসড়কের দখলকৃত জায়গায় ভবনাদিসহ অনেক স্থায়ী অবকাঠামো রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১১টি জোন থাকলেও ঢাকা জোনেই সবচেয়ে বেশি দখল রয়েছে। এই জোনে দখলের পরিমাণ ১০২.১৯ একর, যা থেকে মাত্র ১১.২৫ একর ৬ মার্চ পর্যন্ত দখলমুক্ত করা গেছে।
সড়ক-মহাসড়কগুলোর দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা, হাটবাজার নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তা লিখে বা বলে বুঝার কোন প্রয়োজন নেই। প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, এসব স্থাপনার কারণে কোথাও কোথাও সড়ক খুবই সরু হয়ে গেছে যার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। রাস্তার দু’পাশে আট ফুট করে ১৬ ফুট জায়গায় কোন ধরনের স্থাপনা নিষিদ্ধ করেছে হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনায় হাটবাজার, কারখানা, থেকে শুরু করে সকল প্রকার স্থাপনাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাস্তবতা হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে এবং প্রকাশিত রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অনেকটাই অসহায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর সাথে ক্ষমতার এবং অবৈধ অর্থের লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে বা থাকতে পারে। বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন এমনকি থানা পুলিশও অনেকটাই অসহায়। এই বাস্তবতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। সে কারণে বিষয়টিকে হাল্কা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এই অবৈধ কাজের সাথে সরকার সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহল জড়িত। সে বিবেচনায় বলা যায়, সরকারে সংশ্লিষ্টরা একদিকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিচ্ছেন অন্যদিকে তা কার্যকরকরণে সরকারের কোন না কোন মহল থেকেই বাধা দেয়া হচ্ছে। ফলে বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও উচ্ছেদ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মন্ত্রীসহ অনেকেই এনিয়ে কথা বলেছেন। এমন কি হাইকোর্টও তার অদেশের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন ইতোপূর্বে। সবকিছু সত্ত্বেও পরিস্থিতির কেন কোন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়নি সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে উঠেছে।
অবৈধ স্থাপনা এক দিনে হঠাৎ করে গড়ে ওঠে না, উঠতে পারে না। তেমনি দোকানপাটও হঠাৎ গজিয়ে ওঠার ব্যাপার নয়। যখন এসব উঠেছে, বসেছে, তখন যদি সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত তাহলে আজ যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে তা সৃষ্টি হতো না। একথা বহুবার বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কগুলো অরক্ষিত ও অনিরাপদ হয়ে রয়েছে। আজকে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাকে খাটো বা হালকা করে না দেখে এর গভীরে যেতে হবে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় থানা-পুলিশও এসব অবৈধ স্থাপনার সাখে যুক্ত রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কের এই অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই চলতে দেয়া উচিত নয়। অবৈধ দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে। প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে অবৈধ দখলমুক্তকরণে কয়েকটি বিভাগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সড়ক-মহাসড়ককে অবৈধ দখলমুক্ত করবেন এবং তা ধরে রাখতে বাস্তবানুগ কর্মপন্থা নেবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে
আরও পড়ুন