Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সমুদ্র নিরাপত্তায় একত্রে কাজ করতে হবে : প্রেসিডেন্ট

বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মহড়া

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক সমুদ্র মহড়া। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ গতকাল (সোমবার) এ মহড়ার উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ় সেতুবন্ধন তৈরি এবং সমুদ্র ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সমুদ্র জীবনের নিরাপত্তা একটি আঞ্চলিক দায়িত্ব, তাই আমাদের অস্তিত্বের কারণে একত্রে কাজ করতে হবে এবং বিদ্যমান ফোরামগুলোকে অবশ্যই যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলে দৃঢ় সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। তিনি কক্সবাজারের ইনানি বীচে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) মাল্টিলেটারেল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স)-২০১৭-এর উদ্বোধন করেন। এ মহড়ায় আইওএনএস’র ২৩টি সদস্য ও নয়টি পর্যবেক্ষক দেশের ৪১টি যুদ্ধজাহাজ, ৩টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও চারটি হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া সদস্য দেশসমূহের নৌবাহিনী প্রধান, উর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞগণ এতে অংশ নিয়েছেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোড়দার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করেছে।
আজ এবং আগামীকাল অনুষ্ঠিত এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ হতে জরূরী উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপনে সহায়তা প্রদান, দূর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা, ফ্লিট রিভিউসহ বিভিন্ন মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। আর্ন্তজাতিক এই সমুদ্র মহড়া ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি ও মেরিটাইম সহযোগিতার ক্ষেত্রে সদস্য দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও জোরালো করবে। এছাড়া এ অঞ্চলের সদস্য দেশসমূহের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বøু-ইকোনমি ধারণাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি এই মহড়া এ অঞ্চলে সমুদ্র নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবিলা ও সমুদ্র বাণিজ্য রক্ষায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমান্ডার বিএন ফ্লিট রিয়ার এডমিরাল এম আশরাফুল হক ইমসারেক্সের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আইওএনএস’র বর্তমান চেয়ারম্যান নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং আইওএনএস’র প্রতিষ্ঠাতা দেশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল সুনিল লানবাও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখা দেশগুলোকে বিভক্ত করেছে, কিন্তু মহাসগারীয় অঞ্চলে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন আমাদেরকে একত্রিত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় একটি দেশের পক্ষে কার্যকরভাবে সামাল দেয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জীবন বাঁচাতে পারে। তাই আমাদের সকলকেই একত্রে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং এই দেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ওই ইতিবাচক মানসিকতায় বিশ্বাসী এবং এটি আঞ্চলিক দেশসমূহের মধ্যে উন্নয়নের প্রতি আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের উভয় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধের আপস-নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, গত দুই দশক ধরে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অন্যতম শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে এটি বিশ্বে শান্তি স্থাপনে দেশের প্রতিশ্রæতির যথার্থ প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে বøু ইকোনোমির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি, সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবস্থা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই মেরিটাইম ইকোনোমির উন্নতি হতে পারে। সমুদ্র নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। একথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে ওঠেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের বøু ইকোনোমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবকের মত’ কাজ করছে। পররাষ্ট্র নীতির মূল কথা ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’ একথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই নীতির আলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি আমরা সকল আঞ্চলিক দেশের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখছি। পরে প্রেসিডেন্ট আইওএনএস রচনা প্রতিযোগিতা-২০১৬ এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। উদ্বোধনী ভাষণ শেষে প্রধান অতিথি প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজসমূহের ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে আইওএনএস এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজা¤ি¦ক, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব অমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে নয়টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানী, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন। উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারষ্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। আইওএনএস’র ১ম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, ২য় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৩য় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৪র্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৫ম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বাংলাদেশে বিদেশী মিশনের কয়েকজন প্রধান, বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধানগণ, স্থানীয় এমপিগণ, নৌবিভাগের প্রধানগণ ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদলের প্রধানগণ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেসিডেন্ট

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ