পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রধান নির্বাচনি কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার এ ঘোষণা দেন। এ বিষয়ে গতকালই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মো. সাহাবুদ্দিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নিয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য না করলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অভিনন্দন জানিয়েছেন। সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ‘নতুন প্রেসিডেন্টকে ভাল মানুষ হিসেবে অবিহিত করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
মো. সাহাবুদ্দিন কার্যত আইনাঙ্গনের লোক। এর আগে ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল। ওই বছরের ৯ অক্টোবর তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন। কাকতালীয় ভাবে হলেও আইনাঙ্গনের লোক মহামান্য দু’জন সাবেক ও নতুন প্রেসিডেন্টের নামই সাহাবুদ্দিন। মরহুম বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের টিকেটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও তিনি দল নিরপেক্ষ ভাবে রাষ্ট্র চালিয়েছেন, নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার খেসারত দিতে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে ‘বেঈমান’ খেতাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করার পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ১২ ফেব্রæয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ছিল। এই সময়ের মধ্যে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে মাত্র একজনের মনোনয়ন বৈধ থাকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ২৭নং আইন) এর ধারা ৭ অনুসারে মো. সাহাবুদ্দিনকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। সিইসি আরো বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ ফেব্রæয়ারি নির্ধারিত সময়ে মো. সাহাবুদ্দিনের নামে দুটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ১৩ ফেব্রæয়ারি বাছাইয়ের সময় একটি মনোনয়নপত্র সম্প‚র্ণরুপে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়নপত্র গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল না।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সকালে তার পক্ষে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এসময় তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য ছিলেন : ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনার জন্মগ্রহণ করা বাংলাদেশের ২২তম প্রেসিডেস্ট মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ¯েœহধন্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্যে ছাত্র রাজনীতির হাতেখড়ি হয়ে যুবলীগ নেতা হিসাবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতপর বিচার বিভাগে বিচারক হিসেবে চাকরি ও দুদকের কমিশনার হিসেবে চাকরি করেন। মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে উপদেষ্টামÐলীর সদস্য হন এবং প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। মো. সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাÐের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি পান। ছাত্রলীগের যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে ৬ বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়কের পদে ছিলেন। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে আসেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাÐের পর তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
একসময় পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক মো. সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যে সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।