Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজ কক্সবাজারের ইনানীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩২ দেশের নৌবাহিনীর দু’দিনব্যাপী সমুদ্র মহড়া

উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার ব্যুরো : ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া ‘ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম-মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সাসাইজ। আজ সোমবার কক্সবাজারের ইনানী বিচ সংলগ্ন হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সাগরে এ মহড়ার উদ্বোধন করবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এ ছাড়া হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজগুলোর ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করবেন প্রেসিডেন্ট। পরে তিনি বিচ কার্নিভালেরও উদ্বোধন করবেন। এ মহড়ায় এর ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌকর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন।
৩২ দেশের সমুদ্র মহড়া উপলক্ষে নিছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, প্রেসিডেন্টের সফর ও বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর প্রতিনিধি সম্মেল সফল করতে সাদা পোশাকসহ ৩ হাজার পুলিশ মোতায়ন থাকছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার বেলা ১ টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। দুপুর আড়াইটায় উখিয়ার ইনানীর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন। এরপর তারাকা হোটেল রয়েল টিউলপে সাময়িক বিশ্রাম নিয়ে বিকাল ৩ টায় সড়ক পথে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। ওখানে ডি-৫ বøক পরিদর্শণ শেষে শরণার্থী শিবির ও সার্বিক বিষয়ে ব্রিফিং করেন প্রেসিডেন্ট । এরপর রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রান বিতরণ করে বিকাল ৫ টায় রয়েল টিউলিপে আবারো ফিরে আসেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
সুত্র জানায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যে আঞ্চলিক স¤প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমদ্র মহড়ার আয়োজন করছে। আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সম্মিলিত মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ হতে জরুরি উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস)-এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। ৯টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছোট-বড় অনেক জাহাজ ইনানী রেজুখাল বরারবর গভীরসাগরে নোঙ্গর করে আছে। বঙ্গোপসাগরে আসা বিদেশি জাহাজগুলো দিয়ে আগত নৌবাহিনীর সদস্য ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য অতিথিরা যাতে গন্তব্য স্থানে অসা যাওয়া করতে পারে সেজন্য উখিয়া-রামুর রেজু খালের মোহনায় দৃষ্টিনন্দন ২টি কাটের বেইলি ব্রীজ ও বালি দিয়ে বিশাল একটি দ্বীপ তৈরী করা হয়েছে। বিভিন্ন কারোকাজে সজ্জিত করা হয়েছে পুরো এলাকা। সাগরের গভীরতা নির্ণয় করা জন্য স্থাপন করা হচ্ছে বয়া। চলছে ড্রেজিং কার্যক্রম। পুরোদমে চলছে অন্যান্য অবকাঠামোর কাজও। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য স্থানীয় ছোট বোটগুলোকে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের পতকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর নৌসদস্যদের চলছে রিহার্সেল। মেরিন ড্র্ইাভ সড়কের দু’পাশে দেওয়া হয়েছে হরেক রকমের ব্যানার পেস্টুন। সম্মেলন স্থল দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে। হোটেলের সাগর অংশে ৩২ দেশের পতাকা সম্বলিত ট্রলার মজুদ রাখা হয়েছে। সাগর পাড়ে বসানো হয়েছে অতিথি মঞ্চ।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অনেকটা ভূমিকা রাখবে। বিদেশি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হবে। লাভবান হবে পর্যটন শিল্প। বিদেশি অতিথিরা পর্যটন স্থান হিসেবে কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে দেবেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আয়োজনে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলন উপলক্ষে পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কক্সবাজারের প্রতি পর্যটক আকর্ষণ বাড়বে।
উল্লেখ্য, আইওএনএস এর ১ম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, ২য় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৩য় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৪র্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৫ম সম্মেলন ঢাকা, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী আইওএনএসের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সংস্থাটির এই দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জানুয়ারিতে তার এ দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ