Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চাঁদপুরে খাঁচায় মাছ চাষ বাড়ছে

চলতি অর্থবছর ৯০৫ মেট্রিক টন মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদন

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বর্গাচাষীর মত মৎস্যচাষীদের ব্যাংক ঋন প্রদানের দাবি
বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : চাঁদপুরে দিন দিন কদর বাড়ছে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতির। মুক্ত জলাশয় কিংবা বদ্ধপুকুরের তুলনায় নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ সহজ ও লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ চাষের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০২ সালে চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীতে শুরু হয়েছিলো ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। অন্য সকল পদ্ধতি অপেক্ষা বেশি সাশ্রয়ী, সুবিধাজনক এবং লাভজনক খাঁচায় মাছ চাষ। এ কারণে চাঁদপুরে মাছ চাষি ও খাঁচার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ডাকাতিয়া নদীতে মাছ চাষ প্রকল্প ব্যাপক জনপ্রিয় ও লাভজনক হওয়ায় নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের এ পদ্ধতি মডেল হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে মৎস্য বিভাগ।
সরকারি হিসেবে চাঁদপুরে বর্তমানে ১৫০ জন চাষী রয়েছে। প্রায় ১৫শ’ খাঁচায় মাছ চাষ করা হয়। বেসরকারি হিসেবে আরো বেশি হতে পারে। চলতি অর্থবছর খাঁচায় মাছ চাষ থেকে ৯০৫ মেট্রিক টন মনোসেক্স তেলাপিয়া উৎপাদিত হয়। এতে বিপুল পরিমাণ আমিষের যোগান হচ্ছে। জেলার ৩টি উপজেলা তথা চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব দক্ষিণে খাঁচায় মাছ করা হয়।
চাঁদপুর ডাকাতিয়া নদীর রগুনাথপুর, ঢালিঘাট, ইচুলি ও ঘোড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভাসছে সারি সারি মাছের খাঁচা। এতে চাষ হচ্ছে মনোসেক্স তেলাপিয়া। দিনদিন তেলাপিয়ার চাহিদা বাড়ায়, এ পদ্ধতির মাছ চাষে ঝুঁকছেন আশপাশের মানুষ। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন জেলার মাছ চাষিরা।
জাল, বাঁশ, জিআই পাইপ ও প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে মাছের খাঁচা তৈরি করা হয়। যার দৈর্ঘ্য ২০ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট। একটি খাঁচায় এক হাজার পোনা চাষ করা যায়। খাঁচায় পোনা ছাড়ার পর ৪০ দিনের মধ্যে মাছ বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়। প্রতি ১০টি খাঁচা সার্বক্ষনিক দেখাশোনা ও পরিচর্যার জন্য রয়েছে দু’জন প্রহরী। চাষী রহিম ছৈয়াল জানান, প্রথমে খাঁচা তৈরির খরচ বাদে মাছ বিক্রি করে অল্প লাভ হলেও একবার খাঁচা তৈরি করলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। সারা বছর এ পদ্ধতিতে নদীতে মাছ চাষ করা যায়।
মাছ চাষী আলমগীর হোসেন জানান, খাঁচায় সাধারণত তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হয়। প্রতি খাঁচায় বছরে ১০/১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এ দিয়ে নিজের লাভ সাথে শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্গাচাষীদের ব্যাংক ঋন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও মৎস্যচাষীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের জন্য ব্যাংক ঋন প্রদানের নির্দেশনা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেন।
মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ জানান, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব। নদীতে খাঁচা পেতে মাছ চাষে প্রবহমান পানি পাওয়া যায়। তাছাড়া পুকুর তৈরির খরচ ও ভূমি ব্যবহার থেকেও বাঁচা যায়। আর পুকুরে ডিজলব অক্সিজেন থাকে ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে, সেখানে প্রবহমান নদীতে তা থাকে ৬-এর বেশি। এ কারণে নদীতে মাছের দ্রæত বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাইও কম হয়। তিনি বলেন, বেকার যুবকরা খাঁচায় মাছ চাষ করে নিজের ও দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পারে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান বলেন, চাঁদপুরের মডেল অনুকরণ করে দেশের অন্যান্য এলাকাতেও খাঁচায় মাছ শুরু হয়েছে। চলতি বছর এখানে ৯শ’ ৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। এখানে মনোসেক্স তেলাপিয়াই বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাছ

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ