Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক খাতের অস্থিরতা দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্যাংক খাতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এক সময় ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগেছে। এখন তহবিল সংকটে পড়েছে। অনেক বেসরকারী ব্যাংকই বড় অংকের জমা টাকা জমাকারীকে ফেরৎ দিতে পারছেনা তহবিল সংকটের কারণে। কোনো কোনো ব্যাংক উচ্চসুদে তহবিল সংগ্রহ করছে। গ্রাহকরাও ব্যাংকের অপরাগতার কারণে নানামুখী বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। একদিকে বিপুল তারুল্য অন্যদিকে আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়। এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়াটি এখন দেখা যাচ্ছে। আমানতের সুদ হার কমে যাওয়ায় আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজারসহ লাভজনক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে ওঠে। ফলে আমানতের হার ও পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। সরকারী বন্ডে দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল অর্থ আটকে থাকার বাস্তবতাও এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী উভয় খাতের ব্যাংকই রাজনৈতিক বা অন্যান্য প্রভাবে যথেচ্ছ ঋণ দেয়ায় পরিস্থিতির অবনতি তরান্বিত হয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেয়া ঋণের একটা বড় অংশ খেলাপী ঋণে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা অবলেপন করার পরও খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে। এমন তথ্য পাওয়া গেছে যে, সরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর প্রতি ৪ টাকা ঋণে ১ টাকা খেলাপী হয়ে গেছে। আগে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোতে ঋণ খেলাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। ব্যাংকখাতে তহবিল সংকট দেখা দেয়ার পেছনে আরও বিবিধ কারণ রয়েছে। বিনিয়োগ মন্থরতা সত্ত্বে ও সাম্প্রতিককালে মূলধন যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানির নামে টাকা পাচার হয়ে গেছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। এই সময়ে রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ে ভাটার টান পড়েছে। ওদিকে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য আমদানীও বেড়েছে। ফলে টাকার সংকটটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক খাতে টাকার সংকট অর্থনীতি ও উন্নয়নের জন্য একটা অশানিসংকেত। পর্যবেক্ষকদের মতে, আমানত বাড়ানো, বিনিয়োগে যথেচ্ছাচার বন্ধ, আমদানি ব্যয় কমানো এবং টাকা পাচার বন্ধ করা ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নীতি ও পরিচালনব্যবস্থা এ পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। আমানত বাড়াতে হলে আমানতকারীদের উৎসাহিত করতে হবে, সুদহার বাড়াতে হবে। তাদের বিমুখ করতে সুদহার যাচ্ছেতাই পর্যায়ে নামিয়ে আনা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। এখন এর যথাযথ প্রতিবিধান করতে হবে। আমানত বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। অতীতে এমনও দেখা গেছে, কোলেটারেল উপযুক্ত যাচাই বাছাই ছাড়াই ঋণ দেয়া হয়েছে। এ জাতীয় ঋণ শেষ পর্যন্ত খেলাপী ঋণে পরিণত হয়েছে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে একটা বড় অভিযোগ এই যে, ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা ইচ্ছেমত ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর তহবিল শূন্য করে ফেলেছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমদানির ব্যাপারে তীক্ষè নজরদারি প্রয়োজন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফসলহানি ও অন্যান্য কারণে খাদ্যশস্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানী বেড়েছে। এটা অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি এত বাড়লো কেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এর নামে টাকা পাচার হয়েছে কিংবা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলোর তরফে নগদ অর্থের যোগান যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। এখানে সংকট থাকলে বিনিয়োগ বা ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হতে বাধ্য যা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। টাকায় যদি টান থাকে তাহলে উন্নয়ন কর্মকান্ডও মুখ থুবড়ে পড়বে।
ব্যাংক খাতের অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা লক্ষ্য করছি, ডলারের বাজারেও এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের দৈনন্দিন কাজ চালাতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি ডলারের বিক্রয় মূল্য ৮৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা ৮৩ টাকায় নেমে এসেও খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। বলা বাহুল্য, ডলারের বাজার অস্থিতিশীল হলে আমদানিকৃত পণ্যের বাজারেও তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। পণ্যের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে যায়। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি যখন বেড়েছে বা বাড়ছে তখন ডলারের মূল্য বাড়লে পণ্যের মূল্যও বাড়বে যা শেষ পর্যন্ত ক্রেতাভোক্তাকেই বহন করতে হবে। মোট কথা, অর্থনীতি, উন্নয়ন ও জনস্বার্থে উদ্ভূত সংকটের আশু সমাধান কাম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতি প্রলম্বিত হলে ক্ষতির মাত্রা ও পরিধি বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন