Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিএনপি’র সফল কাউন্সিল

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ষষ্ঠ কাউন্সিল অধিবেশন গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন ২০৩০’এর রূপরেখা দিয়েছেন। জাতীয় সমঝোতাভিত্তিক ইতিবাচক ও ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, তার দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে এবং দুই কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। একই সাথে তিনি প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যতমুখী এক ধারার সরকার ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে আবারো তিনি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের প্রায় সবাই একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার চায়। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মহান মুািক্তযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি। সেই লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য বাংলাদেশের সব ধর্ম-বিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সব অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেছেন, মেয়েদের স্নাতক ও ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ভিশন-২০৩০ রূপরেখায় মানবাধিকার, সুনীতি, সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দূর করার অঙ্গীকার করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষ পর্যন্ত হতে পেরেছে এটা কোন বিবেচনাতেই কম কথা নয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে কাউন্সিল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা হয়েছে। সীমিত গণতন্ত্রের মধ্যেও যে দলটি শান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিল আয়োজন এবং তার আগামী দিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষণা করতে পেরেছে, এজন্য আমরা দল ও তার চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি। ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি শুরু থেকেই বহুদলীয় গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠেছে। দেশের বৃহত্তম জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী এ দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশে গণতন্ত্র রক্ষায় আপোষহীন ভূমিকা রেখে আসছে। ’৮১ সালে কতিপয় বিভ্রান্ত সেনা সদস্যের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া শাহাদত বরণ করার পর থেকে দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, একদলীয় শাসনের পর সামরিক শাসনই ছিল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় অন্তরায়। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও জোটের আপোষহীন আন্দোলনের মাধ্যমে সংঘটিত ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, বর্তমান রাজনীতিতে যে ধরনের অচলায়তন বিদ্যমান অতীতে বাংলাদেশ এ পরিস্থিতির মোকাবিলা করেনি।
বিরোধী রাজনীতি বলতে কিছু নেই। অথচ গণতন্ত্রে কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই। সরকার ও বিরোধী দলের পারস্পরিক সমঝোতা ও সহাবস্থানের মধ্যদিয়েই গণতন্ত্র এগিয়ে যায়, শক্তিশালী হয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ সংস্কৃতি অনুপস্থিত। এ প্রেক্ষিতে বিএনপির মতো একটি বৃহৎ দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠান রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকা এবং তার সহযোগিতা করা সকলের জন্যই অপরিহার্য। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সরকারী দলের কেউ কেউ বিদ্রƒপাত্মক মন্তব্য করেছেন। এটা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। সীমিত আকারে হলেও সম্মেলন করতে দেয়ার জন্য সরকারী দলের সহযোগিতাকে আমরা রাজনীতিতে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। আমরা আশা করি, সরকারের এই ইতিবাচক সহযোগিতা গণন্ত্রতকে বিকশিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিরোধী দলের নিষ্ক্রিয়তা ও অনুপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সরকার ও বিরোধী দলের কর্মকা-ের ভারসাম্যের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। বিএনপি’র কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে এবং সরকারের সহযোগিতামূলক মনোভাবের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।



 

Show all comments
  • ফারজানা ২১ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫৫ এএম says : 0
    এই সফলতা ধরে রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আল আমিন ২১ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫৭ এএম says : 0
    ভিশন-২০৩০ সফল হবে । ইনশা আল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি’র সফল কাউন্সিল
আরও পড়ুন