Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনারগাঁওয়ে নদী খাচ্ছে আল মোস্তফা ২০ হাজার মানুষের জীবিকা বন্ধের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও থেকে : বহুজাতিক পণ্য উৎপাদকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান আল মোস্তফা গ্রæপের নজর এবার মেঘনার শাখা নদী মেনী খালির দিকে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার বৈদ্দেরবাজারের মাছ ঘাট এলাকায় স্থানীয়দের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি, জনপদের সড়ক অবৈধ দখলের পাশাপাশি মেনী খালী নদীর প্রবেশ মুখটিও বালু ফেলে বন্ধ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। আর এ সব অবৈধ কাজে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সাথে বৈদ্দেরবাজার ঘাট এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে এ অবৈধ বালু ভরাট নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। এ নিয়ে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও প্রশাসন নিরব দর্শকের ভুমিকায়।
জানাযায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর, ভবনাথপুর, বিরেশেরগাঁও, রতনপুর, ভাটিবন্দর, মরিচাকান্দী, জৈনপুর, হাবিবপুর, পিরোজপুর, কাদিরনগর, দুধঘাটা, মঙ্গলেরগাঁও, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও, দূর্গাপ্রসাদ, চৌধুরীগাঁও, ময়নাকান্দী, টেকপাড়া, মুগারচর, ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ, আলাবদী, নালআলাবদী, ভিন্নিপাড়া, ঋষিপাড়া, কাবিলগঞ্জ, দমদমা, খুলিয়াপাড়াসহ কমপক্ষে ৩০ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ও কৃষক এখনো মেনিখালী নদীর পানি দিয়ে তাদের পারিবারিক ও কৃষি কাজ করে থাকেন। তাছাড়া শহরতলী হওয়ায় সোনারগাঁওয়ে দ্রæত নগরায়ন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বালুসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনে মেনীখালী নদীর ভুমিকা অনস্বীকার্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আল মোস্তফা গ্রæপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ পলিমার এন্ড সেমি টিউবস লিমিটেড’ সাধারণ মানুষের জমি জোর পূর্বক দখল করে বালু ভরাটের পাশাপাশি মেনীখালী নদীর প্রবেশ মুখও বালু দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে। তাছাড়া, মেনীখালী নদী বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাবে অত্র অঞ্চলের কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের জীবিকার পথ। স্থানীয়রা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না পাওয়ায় গত সোমবার ৮ গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে মেনীখালী নদী রক্ষায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ পরবর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার সকাল থেকে বৈদ্দ্যেরবাজার এলাকায় জনপদের জমিতে থাকা কয়েকশ ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ করে অবৈধভাবে প্রাচীর নির্মাণ করে। স্থানীয় এলাকাবাসী এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা দেয় এবং নির্মানাধীন প্রাচীর উপড়ে ফেলে।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এককর্মীকে স্থানীয়দের উস্কানী দেয়ার অভিযোগে এবং অবৈধভাবে বালু ফেলায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ করায় একজনকে আটক করে। পরে অবশ্য মুচলেকা দিয়ে দু’জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় ভুক্তভোগী হাজী আজিজুল্লাহ জানান, তার ৭টি দাগে প্রায় ১ একর ১০ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিমের স্ত্রী সুরাইয়া করিম মুন্নীর সাথে আদালতে একটি মামলা চলমান। এ অবস্থায় সুরাইয়া করিম মুন্নী ওই জমিটি ‘হেরিটেজ পলিমার এন্ড সেমি টিউবস লিমিটেডের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মোস্তফার নিকট বিক্রি করেন। বর্তমানে ওই সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও প্রতিষ্ঠান আদালতের নিষেধ অমান্য করে বালু ভরাট করছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আজিজুল্লাহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ করেন। স্থানীয় এলাকার প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেন, মজিবুর রহমান, শাহজালাল, হাজী গোলাম মোস্তফাসহ আরো বেশ কয়েকজন জানান, আল মোস্তফা তাদের জমি ক্রয় না করেই স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু ভরাটের কাজ করছে।
এদিকে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা নদীর সীমানা নির্ধারণ করে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দেয়ার পরও ওই সীমানা অতিক্রম করে বালু ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। ফলে মারিখালি নদী ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ভুক্তভোগী মুজিবুর রহমানের দাবি, তিনি সোনারগাঁও থানা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করার জন্য অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু তাদের কথাবার্তা ও আচরণ তার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। তাই তার আশঙ্কা তিনি তাদের কোন সহযোগিতা পাবেননা। সাহাপুর এলাকার ব্যবসায়ী তারেক হাসান বলেন, মারিখালী নদী বালু ভরাটের ফলে দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের মেঘনা নদীতে চলাচল বন্ধসহ নৌ পথে সকল প্রকার কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। অনতিবিলম্বে এ নদী দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপÍরের ভারপ্রাপ্ত অফিস প্রধান মো. নয়ন মিয়া বলেন, নদী দখলের অভিযোগ পাওয়া গেলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সোনারগাঁও উপজেলা নদী রক্ষা কমিটি রয়েছে। নদী রক্ষা কমিটিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিনূর ইসলাম বলেন, বালু দিয়ে কোনোভাবেই নদী দখল করা যাবে না। এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ