রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে টি এম কামাল : বর্ষার বৃষ্টি ও শরতের শুভ্রতা শেষে প্রকৃতিতে এখন হেমন্ত। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে নদ-নদীর গতিপথ বদলে যায়। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র আর আগের মতো নেই। নদী দেখে মনে হয় না এইখানে একদিন প্রবল স্রোতস্বিনী উত্তাল নদী ছিল। হারিয়ে গেছে ছোট-বড় সহস্রাধিক নদী। এই নদীর পাড় আর নদীর চরে বাস করে কোটি মানুষ। এই গণমানুষ প্রতিনিয়ত নদীর সাথে লড়াই করছে। লড়াই করছে নদীর নিষ্ঠুর ভাঙনের সাথে। লড়াই করছে অভাবের সাথে। বিশাল পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের চরসহ নদীপাড়ে বসত করা এসব মানুষ নদীর গতি-প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। অভাব অনটন, ক্ষুধার যন্ত্রণা থাকলেও চরের মানুষ চর ছাড়তে নারাজ।
নদীর টানেই চরের মানুষ আশায় বুক বেধে পড়ে থাকে ভাঙা জীর্ণ কাঁশের ঘরে। বুকভরা আশা, যে নদী দিনের পর দিন তাদের সর্বস্ব গ্রাস করেছে, সে নদীই একদিন ফিরিয়ে দেবে বাপ-দাদার জমিজিরাত। বুকভরা আশা, যদি হারিয়ে যাওয়া জমি আবার জেগে ওঠে। এই আশা নিয়ে মৌসুমে মৌসুমে নদী আর প্রকৃতির সাথে লড়াই করছে চরের মানুষ। শত দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে অভাব-অনটন নিয়ে চরের মাটিকেই আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা, ভাঙা-গড়াই নদীর খেলা। নদী পাড়ের চরবাসী মনে করে, জমি গেছে, গেছে ঘরবাড়ি-ভিটেমাটি তাতে দুঃখ নেই। রাক্ষসী নদী সব কেড়ে নিয়েছে। নদীর সাথে তারা যুদ্ধ করছে। নদীতেই তারা মরণ চায়। তাদের প্রত্যাশা তবুও নদী বেঁচে থাক। আগের মতো উত্তাল হয়ে উঠুক। বর্ষাকালে উত্তাল নদীর স্রোতধারার সাথে নদীবক্ষে বয়ে আনবে উর্বর পলি। শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা সেই নরম পলিতে ফসল ফলাবে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা নদী পাড়ের বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী জেলায় ছোট-বড় চার সহস্রাধিক চরে প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষের বাস। ঋতু বদলের সাথে নদীর রূপও বদলে যায়। সেই সাথে বদলে যায় চরের মানুষের পেশা। তারা কখনো কৃষক, কখনো জেলে, কখনো নৌকার মাঝি আবার কখনো ঘাটের কুলি। বর্ষাকালে উত্তাল নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে শুধু মাছ ধরে। আবার একদিন ছিল, যেদিন ঘাটের কুলি মজুরের কাজ করে জীবন কাটিয়েছে। বিশাল পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা নদী একসময় স্রোতধারা হারিয়ে যায়। চরে এসে মানুষ বসতি গড়ে তোলে। জেগে ওঠা এসব চরের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। চরের নাম ডাকাতমারা, কাউয়াহাগা, চিলমারী, মানুষমারা, চোরমারা, ইন্দুরমারা, ছোনপচা, আটারচর, ভাঙারচর, কাওয়াখোলা, মহিষাবান, শিয়ালমারী, বান কি মুন ইত্যাদি। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা উপজেলার প্রায় সবটাই চর হিসেবে গণ্য। এসব দুর্গম চরের মানুষ ঋতু পরিবর্তনের সাথে পেশা পরিবর্তন করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নদী যখন প্রবল, পানির গতি ছিল তখনই নদীর পাড়ে একদিন গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় তিন শতাধিক নদীবন্দর। কালের বিবর্তনে নদীর গতিপথ হারিয়ে যায়ার সাথে সাথে নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা বন্দরও হারিয়ে গেছে। এসব নদীবন্দরে একদিন ছিল শত শত কুলি মজুরের হাঁকডাক। কর্মমুখর এসব নদীবন্দর এখন প্রবীণদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। কত জাহাজ, বার্জ আর বিশাল পালতোলা মহাজনি নৌকাবন্দরে নোঙর করেছে। মালামাল ওঠা-নামা করেছে। বিখ্যাত সেই নদীবন্দরের মধ্যে চিলমারী, ফুলছড়ি, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ, নগরবাড়ি, বেড়া, নাকালিয়া নদীবন্দরের এখন আর অস্তিত্ব নেই। নদীর অপ্রতিরোধ ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এসব নদীবন্দরে এখন আর জাহাজ ভিড়ে না। ভিড়ে না মহাজনি নৌকা। পাল তোলা নৌকায় স্থান করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
চরের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ কাজ পেলে পেট ভরে খেতে পায়। কাজ না থাকলে খাবার জোটে না। বর্ষাকালে নৌকা চালিয়ে আর নদীতে মাছ ধরে জীবন চালায়। শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা নদীর বালির চরে মরিচ, ধান, পাট, চিনা, কাউন, বাদাম, তিল, তিশি চাষ করে। চরের মানুষ জেগে ওঠা চরের জমির অধিকার পায় না। চরবাসী দস্যুরা তাদের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে জেগে ওঠা চর দখলে নেয়। চরের মানুষ সে জমি বর্গা চাষ করে।
লাঠিয়াল বাহিনী তাদের চাষ করা জমির সব ফসল কেটে নিয়ে যায়। কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল সরকার ও চরের মনসুরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজমহর জানান, শুষ্ক মৌসুমে চর থেকে চরে যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হেঁটে, বাইসাইকেল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরের বালিতে চলছে ঘোড়ার গাড়ি ও ভ্যান। চরের মানুষ মরিচ, সবজি, পাট, ধান চাষ করে। তাদের জরিপে আরো জানা যায়, এসব চরের সাথে উপজেলা সদরের কোনো ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। মনসুরনগর থেকে কাজিপুরে সদরে আসতে একমাত্র সহায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সকালে একবার মনসুরনগর থেকে ছেড়ে যায়। আবার বিকেলে ফিরে আসে। যাতায়াতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। বর্ষ মৌসুমে সময় লাগে একটু কম। প্রতিদিনই এ শ্যালো-ইঞ্জিন চালিত নৌকা সার্ভিস চলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।