Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার বাইরে আসছে বিএনপির নতুন কর্মসূচি

জনসভায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে নেতাকর্মীরা : খালেদা জিয়ার ইতিবাচক বার্তা নিয়ে ফিরেছেন তারা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:১৫ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সড়ক পথে কক্সবাজার সফর এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার পর দলের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকার পর এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি উজ্জীবিত করে তুলেছে তাদের। এজন্য খালেদা জিয়াসহ দলের নেতারা জোর গলায় বলছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি এবং জনগণ তাদের সাথেই আছেন। এমনকি আওয়ামীলীগকে বিএনপির চেয়ে বড় সমাবেশ করে দেখানোর চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন বেগম জিয়া। আর বিএনপির এই দুই কর্মসূচিকে সফল মন্তব্য করে নেতাদের মূল্যায়ন, গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা, তার আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ দিতে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর রাজনৈতিকভাবে ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বড় দুটি কর্মসূচি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের মানবিক কর্মসূচিকে ঘিরে অনেক দিন পর নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে পেরেছে বিএনপি। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দীর্ঘ যাত্রাপথে নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তোলা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এই দুটি কর্মসূচিতে সরকারের ভেতরেও নাড়া পড়েছে।
এজন্য ঢাকার বাইরে আরও কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে সড়ক পথে সিলেট, রাজশাহী ও রংপুরে যেতে পারেন বিএনপি প্রধান। তবে এসব কর্মসূচিও সভা সমাবেশের পরিবর্তে মানবিক হিসেবেই সফল করবে দলটি। এজন্য ঢাকার বাইরের কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। গত এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে সিলেটের সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এতে ওই এলাকার মানুষের মাঝে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। আর আগস্টে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দেখতে যেতে পারেন বিএনপি প্রধান। সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোর মতো আগামী দিনের কর্মসূচিও সফল করতে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাবেশের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসের পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সারাদেশের নেতাকর্মীরা। এই মনোভাবকে ধরে রাখতে এবং সংগঠনকে আরো বেশি গতিশীল করতে বিএনপির সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জেলা পর্যায়ে সফর করবেন। তারা বিএনপি ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ নিয়ে সারাদেশে জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মীসভা করবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন। চলতি নভেম্বর এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে তারা সফর করবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ নেতারা জানান, দীর্ঘদিন পর মাঠের রাজনীতিতে নামতে পেরে উচ্ছ্বসিত সকলেই। এখন নীতিনির্ধারকেরা চাইছেন এধরণের আরও কিছু মানবিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে। যার মাধ্যমে বিএনপি দেশের সব সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাতে পারে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান ও বার্তা যুক্তির মাধ্যমে জনগণকে বোঝাতে চায়। যাতে সাধারণ মানুষ বিএনপির এই দাবির সাথে সম্পৃক্ত হয়। এ কারণে খালেদা জিয়া বারবার ‘ক্ষমার’ কথা বলে উদারতার রাজনৈতিক মনোভাব প্রদর্শন করছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের জন্য এখন একটি খারাপ সময় যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আমরা সময় বুঝে পরবর্তী কর্মসূচী প্রণয়ন করবো।
এদিকে কক্সবাজার সফরের সময় রাজনৈতিক কোন বক্তব্য না দিলেও সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় খালেদা জিয়ার ইতিবাচক বার্তা নিয়েই ফিরেছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা সমাবেশে অংশ নিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক বার্তা নিয়ে ফিরেছেন। কেননা সমাবেশ করাটাই ছিল বিএনপির একটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কারণ দীর্ঘ তিন মাস লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে যান বেগম জিয়া। কিন্তু যাত্রাপথে ফেনীতে তার গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা করা হয়। একারণে ঢাকায় একটি সমাবেশ করা বিএনপি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সংশয় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই সমাবেশ সম্পন্ন করেছে বিএনপি। তবে সমাবেশে যাতায়াতের সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। তারপরও পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লান্তিভাব ছিল না বরং তারা উৎফুল্ল মেজাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশ নিয়ে তা সফল করেছে। সমাবেশ সফল করায় টুইটা বার্তার মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা কেবল একটাই শ্লোগান দিয়েছেন- আর তা হলো- আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ আর চায়না। তারা চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং ক্ষমতার পরিবর্তন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবি বলেন, সরকার সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে বহু ষড়যন্ত্র করেছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতে তল্লাশি করে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি। তিনি বলেন, এই সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেয়েছেন। বিশেষ করে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ছাড়া যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না সে ব্যাপারে বিএনপির তৃণমূল একমত। এটাই জনগণের দাবি। আর এ দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি আগের তুলনায় আন্দোলনের জন্য আরো বেশি প্রস্তুত। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি আমরা। ছয় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় অংশ নিয়েছিলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান। তিনি বলেন, শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নিয়েছি। দীর্ঘদিন পর বেগম জিয়া আমাদেরকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এই আওয়ামী লীগ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইনা। তারা হচ্ছে ভোট ডাকাত। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যেতে চাইনা। যতদিন পর্যন্ত স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশ মুক্ত না হবে ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়বোনা ইনশাল্লাহ।
বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, সমাবেশের বিপুল জনসমাগম এটাই প্রমাণিত করে যে এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারকে আর দেখতে চায়না। দেশের জনগণ চায় পরিবর্তন এবং নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। এটাই আমাদের সকলের চাওয়া বলে মন্তব্য করেন সরফত আলী সপু।
রোববারের সমাবেশ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের মানুষ চায় একটি পরিবর্তন। তারা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এটাই ছিল সমাবেশের মূল স্লোগান। তিনি বলেন, দলের নেতাকর্মীরা শত বাধা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। কোনো বাধাই সমাবেশে জনতার ঢল ঠেকাতে পারেনি। আল্লাহর হুকুমে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে একটি প্রতীক্ষিত সমাবেশ সম্পন্ন করেছি। গত রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে দেশের বর্তমান অবস্থা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ, দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ