Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সম্মাননায় কর দেয়ার প্রবণতা বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৮৪ পরিবারকে কর বাহাদুর ও ১৪১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান
যেকোনো কাজের স্বীকৃতি সব সময়ই আনন্দের। দেশের জন্য ট্যাক্স দিয়ে পুরস্কার পাওয়া অনেক বেশি আনন্দের। করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড প্রদানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে কর দেয়ার প্রবণতা বাড়বে। দেশের উন্নয়নের জন্য সবাইকে স্বত:স্ফুত কর দেয়া উচিত। করদাতা বাড়াতে এনবিআরকেও এ ধরনের উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে। আয়কর প্রদাণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শীর্ষস্থান অধিকারী করদাতারা সর্বোচ্চ সম্মাননা জাতীয় ট্যাক্স কার্ড পাওয়ার পর এমন মন্তব্য করেছেন।
গতকাল এক অনাড়াম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ করপ্রদাণকারী ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অনুষ্ঠানে ৩৬টি ক্যাটাগরিতে ১৪১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড ও ৮৪টি পরিবারকে কর বাহাদুর উপাধি ও সম্মাননা দেয়া হয়। একই সঙ্গে এনবিআর নিয়ে কাজ করা ১৩ জন সাংবাদিককেও বিশেষ সম্মাননা দেয় সংস্থাটি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত থেকে সবাইকে পুরস্কার প্রদান করেন। এ সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগর সিনিয়র সচিব নজিবুর রহমানসহ সংস্থাটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১৪১ ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্তদের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জন ও কোম্পানি পর্যায়ে রয়েছে ৫৫টি ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি শ্রেণির মধ্যে আবার বিশেষ শ্রেনীতে সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন স্যামুয়েল এস চৌধুরী, গোলাম দস্তগীর গাজী, চট্টগ্রামের আলী হোসাইন আকবর আলী, রাজশাহীর অনিতা চৌধুরী এবং ঢাকার এম আনিস-উদ-দৌলা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শ্রেনীতে ঢাকার তিনটি কর অঞ্চলের আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, মো. নাসিরউদ্দিন মৃধা ও এস এম আবদুল ওয়াহাব এবং কুমিল্লার দুটি কর অঞ্চলের মো. আবদুল ওয়াহাব ও মো. আবুল খায়ের ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন। নারী শ্রেনীতে হোসনে আরা হোসেন, লায়লা হোসেন, পারভীন হাসান, রাজশাহীর বুলা চৌধুরী এবং রংপুরের নিশাত ফারজানা চৌধুরী। তরুণ শ্রেনীতে নাফিস সিকদার, গাজী গোলাম মতুর্জা, মো. শাহনেওয়াজ, সিলেটের এ কে এম আতাউল করিম এবং চট্টগ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন। প্রতিবন্ধী শ্রেনীতে ঢাকার আকরাম মাহমুদ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ এবং মো. কুমিল্ল­ার জহিরুল ইসলাম কার্ড পেয়েছেন।
ব্যবসায় ক্যাটাগরিতে ঢাকার মো. কাউছ মিয়া, আবদুল কাদির মোল­া, খন্দকার বদরুল হাসান, কামরুল আশরাফ খান এবং চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামাল ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন। চিকিৎসক হিসেবে এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, জাহাঙ্গীর কবির, এন এ এম মোমেনুজ্জামান এবং মো. আবদুল মোবিন খান। আইনজীবী শ্রেনীতে শেখ ফজলে নূর তাপস, মাহবুবে আলম, আহসানুল করিম, কাজী মুহাম্মদ তানজীবুল আলম এবং মুহাম্মদ কবির উজ্জামান ইয়াকুব। খেলোয়াড় হিসেবে তামিম ইকবাল খান, মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং সাকিব আল হাসান। অভিনেতা-অভিনেত্রী শ্রেনীতে মেহের আফরোজ শাওন, শাকিব খান এবং জাহিদ হাসান। শিল্পীদের মধ্যে সেরা করদাতা রুনা লায়লা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও এস ডি রুবেল। স্থপতি শ্রেনীতে মো. রফিক আজম, মো. ইকবাল হাবিব এবং এনামুল করিম নির্ঝর ট্যাক্স কার্ড পেয়েছেন।
প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড দেয়া হয়েছে ক্যাটাগরিতে রয়েছে ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক, জ্বালানী, পাট শিল্প, স্পিনিং ও টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, আবাসন খাত, তৈরি পোশাক খাত, চামড়া শিল্প, ফার্ম, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তিসংঘসহ মোট ৬৫ কার্ড দেয়া হয়।
কর বাহাদুর পুরস্কারের মধ্যে যে সব পরিবারের করযোগ্য সব সদস্য দীর্ঘদিন ধরে আয়কর পরিশোধ করছে এমন ৮৪টি পরিবারকে কর বাহাদুর সম্মাননা দেয়া হয়েছে। কর বাহাদুর পরিবারের মধ্যে ঢাকায় ১৬টি পরিবার, চট্টগ্রামে ৮টি আর বাকি ৬০ দেশের অন্যান্য জেলার পরিবার এই পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, ট্যাক্স কার্ড ও কর বাহাদুর পরিবারের সম্মাননা ও পুরস্কার এক বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে।
কর পরিসংখ্যান
করদাতাদের ব্যাপক উৎসাহের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সাত দিনব্যাপী আয়কর মেলা। মেলায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৭টি কর বিবরণী জমা হয়েছে। আগের বছরে কর বিবরনী জমার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮টি। ফলে এবার কর বিবরণী বেশি জমা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৮৯টি। ফলে এবার কর বিবরণী জমার প্রবৃদ্ধি ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে আয়কর আদায় হয়েছে ২ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। আগের বছর আদায় হয়েছিল ২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। ফলে কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর এবার কর মেলায় ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৯জন কর সেবা নিয়েছেন। আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩জন। ফলে করসেবার প্রবৃদ্ধি ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আয়কর মেলা শেষ হলেও আজ ৯ নভেম্বর থেকে মেলায় বিদ্যমান সকল করসেবা, ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড কর অঞ্চলে প্রদান করা হবে। ১২ থেকে ২৩ নভেম্বর সকল কর অঞ্চলে আয়কর মেলার মতই রিটার্ন গ্রহণ করা হবে। ২৪-৩০ নভেম্বর সারাদেশে সকল কর অঞ্চলে আয়কর সপ্তাহ পালিত হবে। সেখানে মেলার পরিবেশে মেলার মতই সকল কর সেবা প্রদান করা হবে এবং করদাতারা ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড নিতে পারবেন। করদাতাদের দেওয়া আয়কর দেশের কোন কোন উন্নয়নে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষয়টি জানানোর বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে এবার এনবিআর মেগা প্রকল্প, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য বিলবোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
এবারের মেলায় আয়কর মেলার আকর্ষণ ছিল ‘ইনকাম ট্যাক্স কার্ড আইডি
আয়কর মেলায় প্রথমবারের মতো করদাতাদের ‘ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড’ প্রদান করা হয়। এ কার্ড এনবিআরের প্রথমবারের উদ্ভাবন। করদাতারা এ কার্ড নিতে অভূতপূর্ব সাড়া প্রদান করেছেন। মেলায় সুশৃঙ্খলভাবে হাজার হাজার করদাতা লাইনে দাঁড়িয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করে। মেলায় ২০টি বুথে এসব কার্ড প্রদান করা হয়। প্রতি কার্ড প্রিন্ট হতে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে সময় লেগেছে। এবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে প্রথমবারের মতো এ কার্ড প্রদান করা হয়। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে করদাতাদের এ কার্ড প্রদান করা হবে। এ কার্ডের মাধ্যমে করদাতাগণ সরকারি সেবায় অগ্রাধিকার পাবেন। এবার মেলায় সাধারণ করদাতাদের পাশাপাশি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, ব্যবসায়ী, আইটি বিশেষজ্ঞসহ বিশেষ ব্যক্তিদের ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড প্রদান করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ