পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। বছরের পর বছর ধরে এ পরিস্থিতি চললেও তার যেমন কোনো উন্নতি নেই, তেমনি উন্নতির কোনো উদ্যোগও নেই। একদিকে যানজটে মানুষকে প্রতিনিয়ত নাকাল হতে হচ্ছে, অন্যদিকে নানা অনিয়মও সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট থেকে রক্ষা পেতে ট্র্যাফিক রুলস ভেঙ্গে ডিভাইডার দিয়ে বিভক্তকৃত রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল এখন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে চলাচল করছে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশের গাড়ি। অর্থাৎ সরকারের নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই ট্র্যাফিক নিয়ম লঙ্ঘন করে চলেছেন। বলাবাহুল্য, এ কর্মটি করতে সহায়তা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরাই। তারা ফ্ল্যাগবাহী গাড়িকে আগে যেতে দেয়ার জন্য হুইসেল বাজিয়ে রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে যেতে সহায়তা করছে। শুধু রাস্তার উল্টো পাশ দিয়ে ভিআইপিদের গাড়ি চলাচলে সহায়তাই নয়, নিয়ম ভেঙ্গে অনেক পুলিশ সদস্যর সিএনজি অটোরিকশা প্রাইভেট সিল লাগিয়ে রাজধানীতে অবাধে চলাচল করছে। ২০১২ সালের ৭ জুন হাইকোর্ট প্রাইভেট অটোরিকশা রাস্তায় অনুমোদন না দিতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করেই অবাধে প্রাইভেট অটোরিকশা বাণিজ্যিকভিত্তিতেই চলছে। দেখা যাচ্ছে, উল্টো পথে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে, প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচলে অনিয়মের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত।
আইন প্রণেতা এবং আইনের লোক কর্তৃক আইন অমান্যর এমন নজির বিশ্বে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তারা শুধু আইনই ভঙ্গ করছেন না, উল্টোপথে চলাচল করতে গিয়ে তাদের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মানুষের প্রাণও যাচ্ছে। এক হিসেবে দেখা গেছে, গত পনের দিনে তাদের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে তিন জন প্রাণ হারিয়েছে। এ নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। যারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তাদের দ্বারাই যদি মানুষের প্রাণ যায়, তাহলে ব্যবস্থা নেবে কে? বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেছেন, আইন প্রণেতা ও প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোই সবচেয়ে বেশি উল্টো পথে চলাচল করে। তাদের এই চলাচলের সময় দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তা নিছক দুর্ঘটনা বললে হবে না, এটা হত্যাকা- হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সম্প্রতি ডিএমপি রাজধানীর বেশ কিছু ব্যস্ততম সড়কের ভিডিওচিত্র ধারণ করে। এতে দেখা যায়, যানজট এড়াতে ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করে উল্টো পথে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও বলেছেন, সড়কগুলোতে ভিডিওচিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে যে চিত্র দেখছি, তাতে পরিস্থিতি সুখকর নয়। সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকরাই ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করে উল্টো পথে গাড়ি চালাচ্ছেন। যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগা দিয়ে এ ধরনের নিয়ম ভাঙ্গার প্রথা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? তাহলে কি সড়কের এই অনিয়ম চলতেই থাকবে? এটা কি কোনো সভ্য দেশের পরিচয় বহন করে? বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়কের নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব যাদের এবং যারা আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করেন, তারা নিজেরা সচেতন না হলে অনিয়মের এ প্রবণতা কোনো দিনই বন্ধ হবে না। সত্য বটে, মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় কাজে কর্মস্থলে দ্রুত যেতে হয়। তার অর্থ তো এই নয়, আইন ভেঙ্গে যেতে হবে। সড়কের নিয়ম মেনে যাওয়ার ব্যবস্থা কি তারা করতে পারেন না? যানজট নিরসনে কি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন না? যদি না পারেন এবং যতদিন না পর্যন্ত যানজট নিরসন হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সড়কের স্বাভাবিক পরিস্থিতি মেনে নেয়া উচিত। এটা তাদের সহনশীলতা ও দায়িত্ববোধের মধেই পড়ে। তাদের তাড়াহুড়ো ও অনিয়মের কারণে গাড়ি চাপা পড়ে মানুষের মৃত্যু হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। আবার এটাও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, অবৈধ প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশার ব্যবসায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িয়ে পড়বে এবং অর্থের বিনিময়ে প্রশ্রয় দেবে। এসব অনিয়মের সাথে যারাই জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আইনের লোক কর্তৃক আইনের বরখেলাপের এই প্রবণতা রোধ করা না গেলে সড়কের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কোনো দিনই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এই অনিয়ম কারোরই বরদাস্ত করা উচিত হবে না।
আমরা দেখেছি ইংল্যান্ড, ইরান, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সাধারণ নাগরিকের মতোই বাসে চড়ে গন্তব্যস্থলে যেতে। এমনকি বাসে সিট না পেয়ে তারা দাঁড়িয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। কেউ তাদের সিট ছেড়ে দেয়নি বা তারা সিট ছাড়তে বাধ্য করেননি। আইনের প্রতি ও নাগরিকদের সমঅধিকারের প্রতি তাদের এতটাই শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ। আমাদের দেশে এ চিত্র সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। যেখানে আলিশান গাড়িতে চড়ে মন্ত্রী, এমপি, সচিবরা সড়কের স্বাভাবিক ট্র্যাফিক সিগন্যালই মানে না, সেখানে সাধারণ যাত্রীবাহী বাসে চড়ে যাওয়া আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। জনসাধারণ আশাও করে না, তারা বাসে চড়ে যাতায়াত করুন। তবে তারা অন্তত এটুকু আশা করে, সরকারের এসব ব্যক্তি ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানবেন এবং উল্টো পথে চলাচল করা থেকে বিরত থাকবেন। যাদের হাতে আইনের জন্ম ও যারা আইনের রক্ষক তাদের দ্বারাই যদি আইন উপেক্ষিত হয়, তবে এর চেয়ে দুঃখের কিছু হতে পারে না। আইন ভাঙ্গার এই সংস্কৃতি আর কতদিন চলবে, তা আমরা জানি না। তবে আমরা আশা করব, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এ বিষয়টি আইন প্রণেতা থেকে শুরু করে আইনের রক্ষকরা স্মরণে রাখবেন। তারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন সাধারণ মানুষের মতোই ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানছেন, আইন ভঙ্গ করছেন না। আইন মান্য করেই যানজটে আটকে আছেন। এটুকু দৃষ্টান্ত স্থাপন করা খুব কঠিন বলে আমরা মনে করি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।