পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিস্তার বিভিন্ন অংশে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তিস্তার অবস্থা অধিক শোচনীয়। প্রয়োজনীয় পানি না আসায় এর প্রবাহ বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা চরে আটকে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন সেচ প্রকল্প অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি শাখা নদীগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ প্রকল্পের আওতা সংকুচিত হতে হতে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের অধীনে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও পানির অভাবে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় মাত্র ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৪ সালে সেচের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার হেক্টরে নামিয়ে আনা হলেও সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় শুধু ৮ হাজার ৩২০ হেক্টরে। ২০১৫ সালেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার বেশি হলেও তিন-চার হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল প্রায় অর্ধশত নদী এখন মরণযন্ত্রণায় ধুঁকছে। এভাবে চলতে থাকলে এসব নদীর অস্তিত্ব এক সময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিস্তার মতোই পদ্মার অবস্থা। পদ্মার বুকেও অসংখ্য ছোট-বড় চর জেগে উঠেছে। চলতি মৌসুমে পদ্মার পানিপ্রবাহ বিগত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। চুক্তির চেয়ে এবার অনেক কম পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানির অভাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অচল ও অকার্যকর হওয়ার পর্যায়ে এসে পড়েছে। এই প্রকল্পের আওতা কমতে কমতে কয়েক হাজার হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। ওই অঞ্চলে পদ্মার পানিনির্ভর অর্ধশতাধিক নদী কার্যত পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। এদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির চরম সীমায় এসে পৌঁছেছে। দেশের অন্যান্য নদ-নদীর অবস্থাও তথৈবচ।
নদীর পানিশূন্যতার প্রধান কারণ ভারতের নির্বিচার পানি লুণ্ঠন। তিস্তার উজানে গজলডোবা ছাড়াও বিভিন্ন বাঁধ ও প্রতিবন্ধক নির্মাণ করে ভারত পানি সরিয়ে নিচ্ছে। একইভাবে পদ্মার উজানে ফারাক্কাসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে যথেচ্ছ পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ভারতের এই পানি লুণ্ঠনের কারণে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, শিল্প, নৌ-চলাচল, মৎস্য উৎপাদন, প্রকৃতি-পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও নদী মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে মরু ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততার দ্রুত বিস্তার ঘটছে। পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে এবং নদী বাঁচানো সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক-পরিবেশিক মহাবিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়ও চরম আকার ধারণ করবে। কোটি কোটি মানুষ উন্মূল-উৎসাদনের মুখে পড়বে। ভেঙে পড়বে তাবৎ উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কাঠামো। এত বড় শঙ্কা যখন বিদ্যমান, তখন সরকারের নিরাসক্তি ও নির্বিকার চিত্ততা আমাদের উদ্বিগ্ন ও ভাবিত না করে পারে না। সরকার ভারত ‘তোষণে’ ব্যস্ত। ভারত যা চাইছে, বিনা প্রশ্নে ও বিনা বিনিময়ে তা দিয়ে দিচ্ছে। ভারতের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা তার উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সহায়তা প্রদান; সেটা দেয়া হয়েছে। ট্রানজিট-করিডোর; সেটাও দেয়া হয়েছে। বন্দর ব্যবহারের সুযোগ; তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ এ দেশের জীবন-মরণের সমস্যা পানি সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। তিস্তার পানিচুক্তি হয়নি। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হয়নি। বাণিজ্য অসমতা কমেনি। সরকার এতকিছু দেয়ার পরও দেশের জন্য কিছু আনতে পারেনি। এ ব্যর্থতা দুর্ভাগ্যজনক, নজিরবিহীন। সরকার অনেক বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করছে। বলছে, দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণতি হয়েছে। অথচ নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও পানির নিশ্চিত সংস্থানের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নদী ড্রেজিংয়ের যে কার্যব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, এখন পর্যন্ত তার ফলাফল শূন্য। সরকারের তরফে কখনো কখনো গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। ভারতের আপত্তির মুখে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
দেশ ও মানুষ বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। প্রাকৃতিক নিয়মে নদীর বুক ভরাট হয়ে যায়। আমাদের নদীর ক্ষেত্রেও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে এখানকার নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ শুকনো মৌসুমে নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া। এর কারণ, উজান থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহার। এ অবস্থায় নদী বাঁচাতে বা নাব্য করতে হলে একদিকে যেমন ব্যাপকভাবে একটি মহাপরিকল্পনার আওতায় ড্রেজিংয়ের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায়সঙ্গত হিস্যা আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর পানিধারণ ক্ষমতা বাড়ানো গেলে দুটি কাজ হবে। প্রথমত, শুকনো মৌসুমে পানির অভাব হবে না; দ্বিতীয়ত, হারিয়ে যাওয়া নৌপথ পুনরুজ্জীবিত হবে। যেহেতু আমাদের প্রধান নদীগুলো ভারত থেকে আসা, সুতরাং অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, চুক্তির মাধ্যমে পানির ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে ভারত যথাযথভাবে সাড়া না দিলে জাতিসংঘ বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে ও ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।