হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গত মাসের ২৩ থেকে ২৫ তারিখ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমার সফর করেন। তিন দিনের সফরে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেনেন্ট জেনারেল কাইও সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি অং সান সু চির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দেশে ফিরে এ সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি দৈনিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেন। সাক্ষাৎকারটি পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবে, এ সফর থেকে সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। বলা যায়, সফরটি অনেকটা নিষ্ফল হয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, মিয়ানমার যে ছলচাতুরী করছে এবং তাদের আশ্বাসে যে আস্থা রাখা যায় না, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সফরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে তারা কিছুই করবে না। বাস্তবতা এটাই। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেব-নিচ্ছি করলেও যতই দিন যাবে এবং আন্তর্জাতিক চাপ কমে আসবে, তখন কোনো পদক্ষেপই নেবে না। এখন বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে। এমনকি দেশটি আনান কমিশনের রিপোর্ট শুরুতে বাস্তবায়নের কথা বললেও এখন আর আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না। বরং কমিশনের রিপোর্ট ঘঁষামাজা করে নিজেদের সুবিধামতো সাজাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক কোনো চাপকেই মিয়ানমার তোয়াক্কা করছে না এবং সে তার ইচ্ছামতোই কাজ করে যাচ্ছে।
দুই.
রোহিঙ্গাদের যে মিয়ানমার তার দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে না এবং সে তাদের বিতাড়নে বদ্ধপরিকর, এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় আরো স্পষ্ট হয়েছে। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের স্পষ্টতই ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করেছেন। এর জবাবে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বে ৩৫ কোটি লোক বাংলায় কথা বলে। তারা কি সবাই বাঙালি? রোহিঙ্গারা বাঙালি নয়। রাখাইনের এসব লোকজনের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আসা-যাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সে ইতিহাস জানা দরকার। আলোচনা চলাকালে মিয়ানমারের এক জেনারেল অযাচিতভাবে তার মত ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গারা বাঙালি। ব্রিটিশরা এদের কৃষিশ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে এসেছিল। বৈঠকে উপস্থিত জেনারেলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, রাখাইন রাজ্য অনেকটা বিস্তৃত ছিল চট্টগ্রাম পর্যন্ত। রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে, তা বাংলা ভাষা নয়। তার বক্তব্য শুনে জেনারেল চুপ হয়ে যান। মিয়ানমারের জেনারেলদের বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, তারা রোহিঙ্গাদের কিছুতেই তাদের দেশের নাগরিক মনে করছে না, ফিরিয়ে নিতেও অনাগ্রহী। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বিভিন্ন প্রস্তাব ও দফা দিয়ে ফেরত নেয়ার কথা বলছে। এসব প্রস্তাব নিয়েও সময়ক্ষেপণ এবং টালবাহানা করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় ১০ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং রোহিঙ্গা ঢল থামানো। অথচ মিয়ানমার এ প্রসঙ্গগুলো বাদ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ থেকেও প্রমাণিত হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অনঢ় অবস্থানে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে কেবল যুক্তি-তর্ক ও আলোচনা ছাড়া যে বাস্তবায়ন হওয়ার মতো কোনো কিছুই অর্জিত হয়নি, তা স্পষ্ট। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, রোহিঙ্গা নিয়ে অনাহূত এক মহাসমস্যায় পড়ে গেছে। অথচ এ সমস্যা মিয়ানমারের। বলা যায়, মিয়ানমার সমস্যাটি চাপিয়ে দিয়েছে। এখন সমাধানের জন্য বাংলাদেশকেই দৌঁড়ঝাপ ও মিয়ানমারকে অনুরোধ করতে হচ্ছে। অথচ এমন হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। সমস্যার শুরুতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সারাবিশ্ব থেকে বেশ বাহবা পেয়েছে। বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশ তাৎক্ষণিকভাবে অর্থকড়ি ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এতে বেশ পুলক অনুভব করে। সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়, আমরা একবেলা কম খেয়ে হলেও রোহিঙ্গাদের খাওয়াবো। ষোল কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে, দশ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারবো। এখন রোহিঙ্গাদের খাওয়ানোও হচ্ছে এবং বসতবাটিও করে দেয়া হচ্ছে। এতে আমাদের বন, পরিবেশ ধ্বংস হলেও কিছু করার নেই। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের এক ধরনের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। মিয়ানমার কবে এসব রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার শর্ত দিয়ে বলেছে, এরা রোহিঙ্গা কিনা তা যাচাই করে ফেরত নেয়া হবে। এ এক অদ্ভুত শর্ত। কারণ যাদের নাগরিকত্বই বাতিল করা হয়েছে, তাদের কীভাবে শনাক্ত করা হবে! শর্ত অনুযায়ী যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু হয় হয়, তখন যে প্রবেশকৃত সব রোহিঙ্গা শনাক্তের আওতায় আসবে, তার গ্যারান্টি নেই। ফলে অনিবার্যভাবে শনাক্তকরণের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থেকে যেতে হবে। এদের ভরণ-পোষণ বাংলাদেশকেই করতে হবে, যেমনটি করছে আগে প্রবেশকৃত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে। মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণ যে চাতুরিতা ছাড়া কিছু নয়, তা বুঝতে বাকি থাকে না। এটাও বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের একার উদ্যোগকে মিয়ানমার আমলে নিচ্ছে না। অবশ্য দেশটি যেখানে আন্তর্জাতিক চাপকেই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগকে গুরুত্ব দেবে, এমন মনে করার কারণ নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপেও দেশটি খুব একটা বিচলিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমারের জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে সরাসরি ফোন করে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ ও নিজ ভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কথা বলার পরও তার টনক নড়েনি। লক্ষ্যণীয় বিষয়, টিলারসন অং সান সু চিকে ফোন করেননি। করেছেন দেশটির সেনাপ্রধানকে। এর অর্থ হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে, তার জন্য দায়ী দেশটির সেনাবাহিনী। অর্থাৎ রোহিঙ্গা হত্যা, নির্যাতন ও বিতাড়নের মূল ব্যক্তি যে দেশটির সেনাপ্রধান এবং তাকেই এ অপকর্ম বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবেÑটিলারসনের এ ফোন করা থেকেই বোঝা যায়।
তিন.
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনির্দিষ্টকালের অবস্থান আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। দশ লাখ রোহিঙ্গার ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হবে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা সামাজিক অস্বস্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাংলাদেশিদের সাথে রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের হামলায় একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধ কর্মেও জড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই শুভ বার্তা বহন করে না। একটি বিষয় উপলব্ধি করা দরকার, রোহিঙ্গারা সর্বহারা। তারা সব হারিয়ে কোনো রকমে জীবন নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বেঁচে থাকাই তাদের কাছে পরম পাওয়া। এ ধরনের সর্বহারাদের সাধারণত হারানোর আর কিছু থাকে না। ফলে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ যদি দুর্বিনীত, দুঃসাহসী ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শুধু তাই নয়, আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এদের সামাল দেয়া তখন কঠিন হয়ে পড়বে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিকের সাথে কয়েক দিন আগে কথা হয়। তিনি বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়ে গেছি। এখনই তাদের অনেকে দল বেধে আমাদের লোকজনদের আক্রমণ করছে। এর কারণ হচ্ছে, তাদের হারাবার কিছু নেই। তারা যা খুশি তা করতে পারে। কক্সবাজারের মানুষই এখন সেখানে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। তারাই এখন আতঙ্কে আছে। আসলে এখানে না এলে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউই উপলব্ধি করতে পারবে না। এটা যে কত বড় বিপদের বিষয়, তা আমরা এখন টের পাচ্ছি না। যত দিন যাবে, টের পাওয়া যাবে। সাংবাদিকের এ উদ্বেগ প্রকাশ উড়িয়ে দেয়ার নয়। সত্যিকার অর্থেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদে আছে। সবচেয়ে বড় কথা, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া, না নেয়ার বিষয়টি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এতে মাস-বছর কিংবা বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম তাদের কর্মসংস্থান হবে কিভাবে? তাদের কি বেকার বসিয়ে রাখা হবে? যদি তা না করা হয়, তবে তাদের কর্মসংস্থান ও কর্মপরিধি কি হবে? এসব বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। যেখানে আমাদের দেশেই লাখ লাখ কর্মক্ষম মানুষ বেকার, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত, প্রায় ৪ কোটি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ, সেখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর বিষয়টি কল্পনা করা যায় না। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা মায়া-মমতা ও মানবিকতা দেখিয়েছি। তবে এ মানবিকতার অর্থ এই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের মেহমানদারি করতে হবে। মেহমানদারি করার সামর্থ্যও তো থাকা দরকার। আমাদের দেশ জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ধনী নয় যে, সিরিয়া, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তুদের দীর্ঘ সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখিয়েছি, সবসময় তা বজায় থাকবে, তবে রুঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ের জন্য তা দেখানোর শক্তি ও সামর্থ্য আমাদের নেই। ইতোমধ্যে দেশের সচেতন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ আলোচনা শুরু হয়েছে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের যদি অনির্দিষ্টকাল অবস্থান করতে হয়, তবে তা দেশের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এখন হয়তো দেশি-বিদেশি ত্রাণ সহায়তার কারণে সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে না, তবে সময় অতিক্রমের সাথে সাথে তাতে যখন টান ধরবে, তখন বোঝা যাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ কত বড় সমস্যার মধ্যে পড়ে আছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের আচরণে বাংলাদেশ খুবই হতাশ। দেশটির কাছ থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আশা করা হয়েছে, তা পাওয়া যায়নি। সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
চার.
বাংলাদেশে রাজনীতি করতে ইস্যুর অভাব হয় না। রাজনীতিতে এখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি বেশ বড় হয়ে উঠেছে। বেশ জোরেসোরে রাজনীতি শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে উচ্ছ¡াসের কমতি নেই। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উত্যুঙ্গে উঠেছে বলে বেশ বড়াই করা হচ্ছে। ব্যানার-ফেস্টুনে রাস্তাÑঘাট ছেয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এক সমাবেশে উচ্ছ¡সিত হয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াতে বর্তমান সরকারের ভোট অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ এ নিয়ে ভোটের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সনও সড়ক পথে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে এসেছেন। বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে রাজনীতি বেশ জমে উঠেছে। তবে মিয়ানমার যদি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয়, এতে বাংলাদেশ যে ভায়াবহ সংকটে পড়বে এ বিষয়টির উপর জোরালো কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা যে দেশের আর্থসামাজিক ও জীবনযাপনের টানাপড়েনের উপর নীরবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। জিনিসপত্রের দাম দিন দিন হু হু করে বাড়ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে এক ধরনের জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছেÑএ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। বাজারের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের সব মনোযোগ যেন রোহিঙ্গাদের উপর। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিও নিস্ফল। অথচ এ সমস্যাটি দ্রæত সমাধান করা দরকার। মিয়ানমার কেন আন্তর্জাতিক চাপেও ভ্রæক্ষেপ করছে না, তার শক্তির উৎস কোথায়, এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে বলেছেন, চীন, রাশিয়া ও ভারতÑএই ত্রয়ী শক্তির বলে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপ থোড়াই কেয়ার করছে। এই তিন দেশ মিয়ানমারের পক্ষে খুবই নমনীয়। অথচ দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশেরও সম্পর্ক অনেক ভাল। চীন বাংলাদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সহায়তা দেয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক অংশীদার, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ হাজার হাজার কোটি টাকার অ¯্র কিনেছে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অংশীদার। আর ভারতের সাথে তো সর্বকালের সর্বত্তোম এবং সর্বোচ্চ সম্পর্ক বিদ্যমান। তাহলে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সরকার কেন এই তিন দেশের মাধ্যমে মায়ানমারকে চাপ দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না? বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারকে যতই চাপ দিক না কেন (যদিও তাদের আরও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন), তারপরও উক্ত তিন দেশ যদি সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তবে কোনো কিছুই হবে না। কাজেই সরকারের উচিত চীন, রাশিয়া ও ভারতের সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো কূটনীতি অবলম্বন করা। তাদের কনভিন্স করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারকে চাপ দেয়া। তা নাহলে, সব প্রচেষ্টাই বিফল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।