পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ভাসানচরে আসার আগে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। অনেকে বলেছেন আমাদের না খাইয়ে রাখা হবে। কেউ বলেছেন, সাগরের অপদেবতারা কিংবা বাঘ-ভাল্লুক আমাদের খেয়ে ফেলবে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা খুব সুন্দরভাবে এসেছি এবং খুব ভালো আছি। ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রত্যাশার তুলনায় উন্নত জীবনমান ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে উ”্ছসিত হয়ে এভাবে মনোভাব প্রকাশ করেন মোছা. জুলেখার ও তার স্বামী মো. রইসুল। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রোহিঙ্গারা আরো জানায়, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রোহিঙ্গারা আরো জানায়, মিয়ানমার আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আমাদের ঠাঁই দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে উল্লেখ করে তারা জানায়, ভাসানচরের পরিবেশ অনেক ভালো। এখানে খোলামেলা পরিবেশ তাদের অনেক ভালো লাগে।
অপর এক প্রশ্নে তারা জানায়, কেউ তাদের জোর করে নয়, তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই উন্নত জীবন গড়তে এখানে এসেছি। একদিনের মাথাতেই ভাসানচরের সুযোগ সুবিধা দেখে উৎফুল্ল হয়ে শরণার্থী শিবিরে থাকা স্বজনদেরও তারা জানিয়েছেন ।
গতকাল ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরের বিস্তীর্ণ খোলা জায়গায় খেলায় মেতে রয়েছে রোহিঙ্গা শিশুরা। আর কক্ষগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ শুনছেন গান, কেউ বা আবার সেই গানের তালে বাচ্চাদের নাচের মধ্যে পাচ্ছেন আনন্দ। আর প্রথম দিনেই গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রোহিঙ্গা নারীরা।
অনেকেই মুঠোফোনে কক্সবাজারের শিবিরে থাকা পরিজনদের খোঁজ খবর নিতেও দেখা যায়। একই সঙ্গে নতুন জায়গায় সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা পেয়ে তারাও যে ভালো আছে, সে খবরও জানাচ্ছিলেন টেকনাফ-উখিয়া শরণার্থী শিবিরে থাকা স্বজনদের।
কেমন কাটছে ভাসানচরের দিন এমন প্রশ্নে সবার মুখেই শোনা গেছে প্রত্যাশার তুলনায় ভালো থাকার কথা। তারা জানালেন, রাতে তাদের বাসস্থান ও খাবার যথা সময়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আর সকালে উন্নতমানের নাস্তার সঙ্গে আপেলের মতো ফল থাকায় অনেকটা উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন তারা। কক্সবাজার থেকে ভাসানচরের জীবন ব্যবস্থা অনেক ভালো এমনটা জানিয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেছেন তারা। ভাসানচরের সুযোগ সুবিধা আর সেবাযতেœ খুশি হওয়া এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বলছেন, কেউ তাদের জোর করে নয়, স্বপ্রণোদিত হয়েই তারা এসেছেন ভাসানচরে। ভাসানচরের হাসপাতাল-১ এ চিকিৎসা নিতে আনা মো. আনাস (৫৬) নামে এক রোহিঙ্গা হাসপাতালের উন্নত পরিবেশ দেখেও অনেক খুশি।
সূত্র জানায়, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, অধিক মূল্যের এক্সরে মিশিন, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা, বিদেশ থেকে ক্রয় করা ইসিজি মেশিন, পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ৩২ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলো ২০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল। যা স্থাপন করা হয়েছে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে তোলা আবাসস্থল ভাসানচরে।
রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত হাসপাতাল-১ এর দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডবয় মিরাজ উদ্দিন জানান, দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোহিঙ্গা তাদের স্বাভাবিক জ্বর ও সর্দি নিয়ে এই দুটি হাসপাতাল-১ এর জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আনাসের মতো তিন নম্বর ক্লাস্টারের ১০ নম্বর হাউজে বসবাস করা জানিয়া (১৯), ২০ নম্বর ক্লাস্টারের ১০ নম্বর হাউজের মো. আলম (৪৫) ও ১৪ নম্বর ক্লাস্টারের ৭ নম্বর হাউজের জাহানারা (২৪) আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে নতুন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
২০ শয্যার এই দুটি হাসপাতালে সরকারি একজন, এনজিও এর দুইজনসহ তিনজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ছয়জনসহ বিভিন্ন পদে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ভাসানচরের হাসপাতালের দায়িত্বরত অফিস সহকারী আকরাম হোসেন।
এছাড়াও রয়েছে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হবে প্রাথমিক চিকিৎসা। এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে তারা পাবে ৩০ প্রকারে ওষুধ। এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান, ভাসানচরে এই দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম শুক্রবার থেকে চালু করা হয়েছে। এখানে সরকারি ও এনজিওদের মেডিকেল অফিসারগণ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া যে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে তাতে অছিরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানা গেছে, শুক্রবার এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তরে পর ওইদিন সন্ধ্যার আগেই প্রত্যেক পরিবারকে তাদের নির্ধারিত আবাসস্থল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বরাদ্দ পাওয়া কক্ষে সরকারের দেওয়া সকালের নাস্তা দিয়েই শুরু হয়েছে প্রথম বহরে আসা এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভাসানচরের প্রথমদিন।
এরপর তাদের দেওয়া হয় রান্না করা রাতের খাবার। বরাদ্দ পাওয়া কক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রথম রাত পার করেন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।