পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। তারপরেও দেশজুড়ে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। মহাসড়কগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। দুরপাল্লার যাত্রীদেরকে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে-এটা যেনো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগেও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভয়াবহ যানজট শত শত শিক্ষার্থীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-আরিচাসহ দেশের বেশিরভাগ মহাসড়কে এখন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রধান কারন ভাঙাচোরা সড়কের নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চলতে না পারা এবং সংস্কারের জন্য একদিকের রাস্তা বন্ধ থাকা। চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে থেকে শুরু হওয়া ধীরগতির এই সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে তা জানা যায়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) জরিপ বলছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালে ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল জাতীয় সড়কের ২০ শতাংশ, আঞ্চলিক সড়কের ৩১ শতাংশ ও জেলা সড়কের ৪৭ শতাংশ। এসব সড়কের মানোন্নয়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার চাহিদা উল্লেখ করেছিল এইচডিএম। চাহিদা মোতাবেক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সওজ মিলে গত অর্থবছরে ব্যয় করে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। চাহিদার কাছাকাছি অর্থ ব্যয় হলেও কমেনি ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ। সওজের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ আরো বেড়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি ঢাকার সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির বেহাল দশা বর্ষার শুরু থেকেই। ঈদুল আযহার আগে তড়িঘড়ি করে এই মহাসড়কটির কিছু অংশ মেরামত করা হয়। বর্তমানে মহাসড়কটির বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত বহু স্থানে খানাখন্দে ভরা। কোনো যানবাহনই ৩০ কিলোমিটারের অধিক গতিতে চলার উপায় নেই। এর মধ্যে সংস্কারের কাজ চলায় মহাসড়কের একদিক বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। কয়েকদিন আগেও ঢাকা থেকে দুপুরে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শত শত শিক্ষার্থী পরদিন সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি। যানজটের ভেস্তে গেছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ময়মনসিংহের সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল জাতীয় মহাসড়ক। দুই বছর আগেও ভালো অবস্থায় ছিল মহাসড়কটি। বর্তমানে মহাসড়কটির মধুপুর-ময়মনসিংহ অংশের মুক্তাগাছা এলাকায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। রংপুর অঞ্চলের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৭৭ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কিছু সড়ক ও মহাসড়ক। ভুক্তভোগিদের মতে, রংপুর অঞ্চলের সড়কগুলো খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। তবে এরই মধ্যে প্রাথমিক কিছু সংস্কারকাজ হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলের সড়কের মানোন্নয়নেও গত অর্থবছরে ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সওজ। এর পরও উন্নতি হয়নি বগুড়া-রাজশাহী মহাসড়কসহ এ অঞ্চলের সড়কগুলোর। কয়েকদিন আগে রাজশাহী থেকে সড়কপথে ঢাকা এসেছেন এমন একজন যাত্রীর ভাষায় রাজশাহী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত পুরো মহাড়কেরই বেহাল অবস্থা। গাড়িগুলো ৩০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে না। এ প্রসঙ্গে সওজ রাজশাহী জোনের একজন প্রকৌশলী বলেন, এইচডিএম দুই বছর আগে রাজশাহীর সড়কগুলো সম্পর্কে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, বর্তমান অবস্থা এখনো প্রায় একই রকম। এর মধ্যে কিছু সংস্কার হয়েছে।
এদিকে, এক বছর যেতে না যেতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক নষ্ট হতে শুরু করেছে। চার লেনের সাথে যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়কও ভেঙ্গে একাকার হতে চলেছে। অথচ মাত্র এক বছর হতে চললো এই মহাসড়ক উদ্বোধন হয়েছে। ৮ লেনের মহাসড়কে কুতুবখালী ও রায়েরবাগের অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত ২ লেনই বেদখল হয়ে আছে বহুদিন যাবত। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ অংশ ছাড়া বাকীটা চলাচলের যোগ্য। কিন্তু সিলেটের আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা বহুদিন ধরে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ-চারখাই-জকিগঞ্জ ও সিলেট-জাফলং সড়ক দুটি আগে থেকেই ভগ্নদশায় ছিল। বন্যায় এ দুটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়েছেই, সঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জ-মাইজাগাঁওসহ আরো কয়েকটি সড়কেও দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। অবস্থা খুব একটা ভিন্ন নয় অন্যান্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কেরও। যেগুলোর বেশির ভাগই দুই বছর আগে মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলেরও একই অবস্থা। যশোর অঞ্চলের বেশির ভাগ সড়কই ভাঙাচোরা। যশোর সওজ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার, যশোর-বেনাপোল সড়কের ৩৮ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা দশায়। একই অবস্থায় যশোর-মাগুরা সড়কের ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও যশোর-নড়াইল সড়কের ২০ কিলোমিটারও। অপরদিকে, দশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটন শহর কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামকে দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে মহাসড়কটি। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলিত থেকে গেছে এটি। স্থানীয়দের মতে, মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার বিজিসি ট্রাস্ট, বাগিচার হাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া উপজেলার নয়াখাল, কেরানীহাট, চারা বটতল, মিঠাদীঘি, রাজঘাটা ও লোহাগাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া, চুনতি ফরেস্ট অফিসসহ ২০ স্পটে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত। দেশজুড়ে খানাখন্দের এসব সড়ক-মহাসড়ক ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যান চালক ও যাত্রেিদর। সময় নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে ঝুঁকি। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। একই সাথে পরিবহন ব্যবসায়ীরাও নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক সুধাময় কর বলেন, বেহাল সড়কের কারণে গাড়ি চালাতে মন চায় না। কয়েক মাস ধরেই দেখছি, গর্তে ভরা মহাসড়ক।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছর সওজের আওতায় উন্নয়ন বাবদ ৫ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে আরো ৬ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন সড়ক ও সেতু উন্নয়ন, সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, নতুন সংযোগ সড়ক, নতুন সড়ক ও সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে এ অর্থ। কিছু তারপরেও বছরের পর বছর ধরে ভাঙাচোরা সড়কেই চলছে যানবাহন। ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।