Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোবাইল চোর সন্দেহে স্কুলছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নরসিংদীর শিবপুরে মধ্যযুগীয় এক বীভৎস্য হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। গ্রাম্য কবিরাজের কথায় মোবাইল চুরির সন্দেহে আজিজা খাতুন (১১) নামে ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে আজিজাকে বাড়ী থেকে অপহরণ করার পর রাতেই তার শরীরে অগ্নিসংযোগ করে সারা শরীর ঝলসে দেয় অপহরণকারীরা। শিবপুর উপজেলার ভিটি খৈনকুট গ্রামে এই মধ্যযুগীয় বর্বর হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে। শনিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে আজিজা খাতুন মারা গেছে। নিহত আজিজা একই গ্রামের আব্দুস সাত্তার ও রেহানা বেগমের কন্যা। সে একই গ্রামের খৈনকুট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। ৫ ভাই বোনদের মধ্যে বোনদের মধ্যে সে ছিল ৪র্থ। নিহত আজিজার আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছে, গত ১২ অক্টোবর আজিজার চাচি বিউটি বেগমের একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। এ নিয়ে চাচি বিউটি ও তার স্বজনরা আজিজা ও মাফিয়া নামে তারই দুই ভাসুর কন্যাকে সন্দেহ করে। এ ব্যাপারে গ্রামের জনৈক কবিরাজের আশ্রয় নিলে কবিরাজ নাকি চাচী বিউটি ও তার আত্মীয়-স্বজনকে জানায় যে, আজিজাই মোবাইলটি চুরি করেছে। এতে তাদের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হলে চাচী বিউটি ও তার আত্মীয়-স্বজনরা আজিজাকে এই মর্মে হুমকি দেয় যে, মোবাইল সেট ফিরিয়ে না দিলে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। এই হুমকির পর গত শুক্রবার দুপুরে আজিজাকে এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। এ অবস্থায় আজিজার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে খোঁজাখুজি করতে থাকলে ঢাকায় বসবাসকারী আজিজার ভাই সুমন ফোন করে তার মা রেহানা বেগমকে জানায়, আজিজা অপহৃত হয়েছে। তারা বর্তমানে টাকা চাচ্ছে। এই অবস্থায় আজিজার মা রেহানা বেগম তার বোনকে নিয়ে শুক্রবার রাতে ডিবি পুলিশের কাছে যাবার জন্য রওয়ানা দিলে সুমন পূনরায় ফোন করে জানায় যে, আজিজাকে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই তার খবর পায় যে, অপহরণকারীরা আজিজাকে বাড়ীর অদুরে একটি কাঁঠাল বাগানে নিয়ে গায়ে কেরসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় শামীম মিয়া ও মোজাম্মেল হোসেন নামে দুই প্রতিবেশী তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় আজিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে সেখানে ৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্চা লড়ে শনিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।

এ খবর জানতে পেরে শিবপুরের এমপি আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ঘটনাস্থলে যান। তিনি হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। পরে আজিজার পিতামাতাকে তিনি সহায়তা করেন। খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিলু রায়, শিবপুর সার্কেল রেজোয়ান আহমেদ, ওসি সৈয়দুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে শিবপুর থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজিজার দাদী তমুজা বেগমকে আটক করেন। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কেরসিন বিক্রেতা মুদি দোকানী আব্দুর রশিদকে আটক করেন।



 

Show all comments
  • ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৩৬ এএম says : 0
    খুব ভালে সংবাদ দিয়েছেন তবে সামনের দিকে আর ভালো স্যবাদ দিবেন বলে আমরা আশা করি.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ