Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের

তিন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ

হাসান সোহেল : | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 নিত্যপণ্যের চড়া দামে সদাইপাতির হিসাবটা কোনভাবেই যেন মেলানো যাচ্ছে না। মাস-সপ্তাহ কি? নিম্নবিত্তের জন্য দিন পার করাটাও এখন ভীষণ কষ্টের। মধ্যবিত্তের দিনও যেন আর চলে না। দীর্ঘদিন থেকে চালের বাজার চড়া। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। অথচ সবজির বাজার দরেও আগুন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, গত তিন মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দ্বিগুণ। বাজার ভেদে দাম বাড়ার হার আরো বেশি। রাজধানী বাসীর অভিযোগ, বাজারে সিটি কর্পোরেশনের মূল্যতালিকা থাকলেও তা হালনাগাদ হয় না। রাজধানীর বাজারগুলোতেও নেই কোনো সমন্বয়। আর সেই সুযোগে ইচ্ছেমত দাম হাঁকান বিক্রেতারা। বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামি সবজির কিনতে চাইলেও খরচ করতে হবে অন্তত ৫০ টাকা।
চড়া দামের সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নতুন করে স্থান করে নিয়েছে পেঁয়াজ, টমেটো, শিম ও গাজর। গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা। শীতের আগাম শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি। যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০০-১১০ টাকা। আর গাজরের কেজি ৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা।
কেন বাড়ছে শাকসবজির দাম, আসলেই জানা নেই কারোরই। কখনও বৈরি আবহাওয়া, কখনও সরবরাহ কম। কাঁচা শাক-সজির দাম বাড়ার অজুহাতের অভাব নেই বিক্রেতাদের। গত কয়েক মাসে দাম এতোটাই বেড়েছে, কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা অবাক তাতে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি, বাধাকপি, শিম, লাউ বাজারে এসেছে বেশ আগেই। এর সঙ্গে ঝিঙা, পটল, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গিা, বেগুনসহ বাজারে সব সবজিই ভরপুর আছে। তবে যে হারে আমদানি রয়েছে দাম তার তুলনায় একটু বেশিই।
এ প্রসঙ্গে তারা জানান, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। টানা বৃষ্টি না হলে এখন সব সবজিই আরও কম দামে পাওয়া যেত। তবে সামনে আর বৃষ্টি-বন্যা না হলে এক মাসের মধ্যেই দাম কমে যাবে।
রামপুরা জামতলা বাজারের বিক্রেতা মো. জামাল বলেন, বাজারে সবজির কোনো অভাব নেই। কিন্তু দাম একটু চড়া। বৃষ্টি না হলে দাম কিছুটা কমে যেত। তিনি বলেন, বাজারে ইতোমধ্যে শীতের অনেক সবজি চলে এসেছে। আগামী মাস থেকে সরবরাহ আরও বাড়বে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে দাম।
এদিকে রাজধানীর বাজারে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ নিত্য পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ ছাড়া কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমলেও এখনো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, খিলগাঁও, রামপুরা, মুগদাসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে গতকাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এ খবরে দেশি পেঁয়াজের মজুদদাররা বাজারে বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ৭০ ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হত। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে প্রায় ৪৭ শতাংশ। সংস্থাটির হিসেবে, এ সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪২ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। আর এক সপ্তাহে কেজিতে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজ বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ ও আমদানি পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল দেশি পেঁয়াজের ৪৫ থেকে ৫০ টাকা আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
সূত্র মতে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহে দাম কমার সম্ভাবনা তো নেই বরং বাড়বে। দাম বাড়ার কারণ হিসাবে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ী বলছে, একদিকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে বৃষ্টির কারণে প্রচুর পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে মোকামগুলোতে বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মজুদ রেখেছে। এছাড়া আমদানি খরচও বেড়েছে। ফলে হু হু করে দাম বেড়েছে।
দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. হারুণ বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি। ভারতে যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবর শুনি তখন দেশের বাজারে এমনেই দাম বেড়ে যায়। আজকে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩৫০ টাকা থেকে ৩৭০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০০ খেকে ৩২০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতা শাহজাহান জানান, হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ানো ও কমানোর পিছনে আমাদের মত খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো কিছু করাই নেই। কারণ আমাদের বেশি দামে কিনা তাই বিক্রিও বেশি দামে করতে হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এখন ঘাটে দেশি পেঁয়াজ কেনাই পরে ৬০ টাকার উপরে। ৭০ টাকা তো বিক্রি করতে হবেই।
মুগদা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা কবির জানান, ‘এক কেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা বল্লাম দেবে না। একদাম ৭০টাকা। পেঁয়াজ ছাড়া তো চলে না, নিতেই হবে। পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। এভাবে সব পণ্য বাড়তে থাকলে কিভাবে হবে?’
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক আট সাত যা গত বছর একই সময়ে ছিলো ৫ দশমিক এক শূন্য। শুধু মাত্র গত তিন মাসেই এই মূল্যস্ফীতি দ্বিগুন হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের ২ দশমিক দুই আট পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে দ্বিগুন বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক শূণ্য এক পয়েন্ট। আর এর জন্য বরাবরে মত বৈরি আবহাওয়াকে দায়ী করছেন রাজধানীর বিক্রেতারা।
সবজির দাম নিয়ে নগরবাসীর দুর্ভাবনার এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। যে সবজি কারওয়ান বাজারে বিক্রি হয় ১০০ টাকায়... মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরত্ব পেরোলেই তার দাম বাড়ে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা। কাওরান বাজারের ১২০ টাকার শিম হাতিরপুলে বা ইন্দিরা রোডে কিনতে চাইলে খরচ করতে হবে অন্তত দেড়শ টাকা।
রাজধানীর কাপ্তান বাজারে বাজার করতে আসা আবুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সিটি কর্পোরেশনের মূল্যতালিকা আছে। কিন্তু সেই তালিকার সাথে বাস্তবে কোন মিল নেই। একই সঙ্গে এই তালিকা হালনাগাদ হয় না বললেই চলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মূল্যস্ফীতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ