Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফের মুখোমুখি মহিউদ্দন-নাছির

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

থামছেই না দুই শীর্ষ নেতার বিরোধ
চট্টগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন ফের মুখোমুখি। মহানগর আওয়ামী লীগের এই দুই শীর্ষ নেতার বিরোধ থামছেই না। কেন্দ্রের চাপে কিছুদিন নিরব থাকার পর ফের সরব হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন ইস্যুতে নিচ্ছেন পাল্টাপাল্টি অবস্থান। তাদের বিরোধে এবারের ইস্যু নতুন পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পেরেশন এলাকার গৃহকর আদায়। এই ইস্যুতে দুই নেতার বাকযুদ্ধে চাটগাঁয় সরকারী দলের রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। দুইজনের প্রকাশ্যে বিরোধে বিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরাও। নতুন পদ্ধতিতে গৃহকর আদায় নিয়ে ইতোমধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। আবার আ জ ম নাছির উদ্দীনও মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তিনবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র। অন্যদিকে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তারা দীর্ঘদিন থেকে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দু’টি ধারার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এই দুই নেতাকে ঘিরে আবর্তিত নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দুই নেতার পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দ্বিধাবিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও। দুই নেতার বিরোধ মেটাতে কেন্দ্র থেকেও দফায় দফায় উদ্যোগ নেওয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দফা দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগও নেন। তাদের দুজনকে এক টেবিলে এনে বৈঠকও করেন। তবে তাতে কোন সুফল মিলছেনা। বিরতি দিয়েই তারা মুখোমুখি হচ্ছেন, জড়িয়ে পড়ছেন বিরোধে।
নতুন পদ্ধতিতে গৃহকর আদায় নিয়ে দুই নেতার বিরোধ এখন তুঙ্গে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। নিজের পছন্দের ৮ নেতাকে নিয়ে তৈরি করা এ চিঠিতে কি আছে প্রকাশ করা না হলেও তাতে আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২০ অক্টোবর নিজের বাসায় নগর আওয়ামী লীগের সভা ডেকে প্রস্তাবিত গৃহকর আদায় পদ্ধতি নিয়ে মেয়রের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, এভাবে গৃহকর বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মেয়র নগরবাসীকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওই সভায় দাওয়াত পাননি আ জ ম নাছির উদ্দীন।
পরদিন তিনি ওই সভা আহবান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। দীর্ঘ এক বিবৃতিতে মেয়র বলেন, সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে সভাপতি এভাবে সভা আহবান করতে পারেন না। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সভাপতির পরামর্শে তিনিই সভা আহবান করবেন। এ ধরনের সভা আহবানের মধ্যদিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন মেয়র। তিনি বলেন, আমি একই সাথে মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমারও ওই সভায় যাওয়ার এবং কথা বলার অধিকার আছে। এদিকে তার আগে গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম ১৪ দলের এক সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী নতুন পদ্ধতিতে গৃহকর আদায়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে মেয়রকে এক মাসের আল্টিমেটাম দেন। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন এসময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে তার দায়দায়িত্ব মেয়রকে বহন করতে হবে।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলে আসছেন আইনি কাঠামোর মধ্যে গৃহকর পুন:মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে কেউ সংক্ষুদ্ধ হলে আপিল করারও সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন গৃহকর নিয়ে কোন বিভ্রান্তির সুযোগ নেই, আমি সবার কথা শুনতে চাই। কারো কোন আপত্তি থাকলে তারও নিষ্পত্তি করা হবে। তিনি অভিযোগ করেন যারা এই ইস্যুতে মাঠ গরম করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্য মেয়রকে ব্যর্থ করা। অন্যদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলছেন আইন ও বিধির অজুহাতে নগরবাসীর উপর জুলুম করার কোন এখতিয়ার কারো নেই। তিনি বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে যে জনঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। প্রসঙ্গত গৃহকর নিয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের ব্যানারে নগরীতে আন্দোলন শুরু হয়। ওয়ার্ড পর্যায়ে এসব আন্দোলন কর্মসূচি আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতারাও এককাতারে শামিল হচ্ছেন।
সম্প্রতি নগরীর সেবা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি জনদুর্ভোগের জন্য এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী সেবা সংস্থার কর্মকর্তাদের চিঠি দেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকেও চিঠি দেন। সেবা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিয়ম করেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিনিধিরা। তারা অনুরূপ বৈঠকের জন্য মেয়রের কাছেও সময় চান। মেয়র সময় দেওয়ার পর হঠাৎ করে ওই সভা বাতিল করে দেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিনিধিরা। তবে মেয়র জানিয়েছেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও এম মনজুর আলম পৌরকর ইস্যুতে তাকে যে চিঠি ও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি পৃথকভাবে তার জবাব দেবেন। এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল সেবা সংস্থার প্রধানদের সাথে যে বৈঠক করছে তাতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কোন প্রতিনিধি নেই। এ নিয়েও দলে অসন্তোষ দেখা দেয়। গত ৬ অক্টোবর নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় খুন হন নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস। দলীয় কোন্দলের জেরে সংঘটিত এ হত্যাকান্ডকে ঘিরেও নগর আওয়ামী লীগে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অযৌক্তিক গৃহকর আদিবাসীদের ছিন্নমূলে পরিণত করবে
মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) নগরীর আদিবাসী গৃহ মালিকদের ছিন্নমূলে পরিণত করবে। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত বসত-ভিটেয় তিন প্রজন্ম পরম্পরায় ওয়ারিশান ও পোষ্যের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে কোন রকমে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও ভাড়ার ভিত্তিতে বর্ধিত গৃহকর আরোপ জনস্বার্থের পরিপন্থী। গতকাল (বুধবার) বাইশ মহল্লার সর্দার কমিটির সভাপতি ইউসুফ সর্দারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে তিনি একথা বলেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আপিল শুনানীর মাধ্যমে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা নিছক আই-ওয়াশ মাত্র। গৃহকর দশ গুণেরও বেশি বাড়িয়ে তা যদি পঁচাত্তর শতাংশও কমানো হয় তাও কখনো গৃহমালিকদের জন্য সহনীয় হবে না। তাই আগেই ভুল প্রক্রিয়ায় অযৌক্তিকভাবে গৃহীত বর্ধিত গৃহকর ধার্যের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে আগের তুলনায় স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে গৃহকর নির্ধারণই হবে গ্রহণযোগ্য সমাধান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আবু মোহাম্মদ মুছা চৌধুরী, আলী বক্স, শওকত আলী, মাহমুদুর রহমান, জাগির সর্দার, নাছের আহমদ, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সিরাজুল ইসলাম, সালাউদ্দিন ইবনে আহমদ, মোহাম্মদ নুরুল হক, মোহাম্মদ তারেক প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Shamsuzzaman ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১:১৮ পিএম says : 0
    এদেরকে রাজনীতিবিদ বলা যায় না, ক্ষমতার লোভী। ক্ষমতার জন্য এরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে !!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ