Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌঘাঁটি থেকে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিল জেএমবির

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঈশা খাঁনে হামলার ঘটনায় চার্জশিটে তথ্য
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে নৌবাহিনীর ঘাঁটি শহীদ মোয়াজ্জেম থেকে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় চট্টগ্রামের ঈশা খাঁন ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকার দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে জেএমবির সদস্যরা। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিলো দেশের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভয় দেখানো এবং নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। ওই হামলার ঘটনার ২২ মাস পর আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
নৌবাহিনীর সাবেক এক সদস্যসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশ-জেএমবির ৫ জনকে আসামি করে এ চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংঘটিত ওই হামলায় বড় ধরনের কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ২৪ জন মুসল্লি আহত হয়েছিলেন। ওই হামলায় দেশে প্রথমবারের মতো সুইসাইডাল ভেস্ট ব্যবহার করেছিল জেএমবির জঙ্গিরা।
আলোচিত এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ইপিজেড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ ওসমান গণি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। হামলার ওই ঘটনায় একটি মামলা হলেও আইনের দু’টি ধারা ৬(২) এবং ১২/১৩ (সন্ত্রাস বিরোধী এবং বিস্ফোরক) পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দেন তিনি। অভিযুক্ত আসামীরা হলেন, আব্দুল মান্নান (২০), মোঃ রমজান আলী রাজু (২৩), মোঃ বাবুল রহমান বাবু ওরফে কামাল ওরফে রণি, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন (৩০) ও মোঃ আব্দুল গাফফার (৪১)।
এদের মধ্যে মান্নান ও রমজানকে বোমা হামলার সময় মুসল্লিরা হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। পরে ঢাকায় গ্রেফতার গাফফারকে এই মামলায় শ্যোনএরেস্ট দেখানো হয়। এই তিনজনই কারাগারে আছেন। অন্য আসামী সাখাওয়াত নৌবাহিনীর সদস্য হিসাবে র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন। হামলার পর থেকে তিনি পলাতক। বাবুল রহমানও পলাতক। মামলার প্রধান আসামী মোঃ রাইসুল ইসলাম ওরফে নোমান ওরফে সিয়াম ওরফে ফারদিন ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরের একটি মেসে গ্রেনেড তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। এ কারণে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান মামলার আইও ওসমান গণি।
আইও ওসমান গণি বলেন, আসামীদের জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের প্রথম টার্গেট ছিল শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটি থেকে অস্ত্র লুট করা। সেটিতে সফল না হওয়ায় তারা ঈশা খাঁন ঘাঁটির দুটি মসজিদে জুমার নামাজে হামলা করে। তিনি বলেন, আসামীদের মধ্যে মান্নান, বাবলু ও রমজান তাদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে ক্যান্টিন বয় হিসাবে যোগ দেয়। এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগীতা করেন সেখানে কর্মরত নৌবাহিনীর সদস্য সাখাওয়াত। তারা প্রায়ই সেখানে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন। বিষয়টি টের পেয়ে তাদের সবার ব্যাপারে নতুন করে পুলিশ ভেরিফিকেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ধরা পড়ার ভয়ে প্রথমে বাবুল পালিয়ে যায় আর অন্য দু’জন ছুটি নিয়ে ওই ঘাঁটি ছেড়ে যায়। এতে করে তাদের অস্ত্র লুটের পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।
তবে সাখাওয়াত শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে থেকে তাদের তিনজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এক পর্যায়ে তারা ২০১৩ থেকে ১৪ সালের মধ্যে বানৌজা ঈশা খাঁন ঘাঁটিতে পরিচয় গোপন করে বল কিপার ও ব্যাটম্যান পদে বেসামরিক কর্মচারী হিসাবে চাকরি পায়। এতে নেপথ্যে থেকে তাদের সহযোগীতা করেন সাখাওয়াত। আইও জানান হামলার সময় সাখাওয়াত র‌্যাবে ছিলেন। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে হামলার দিন তিনি তাদের ফোনে নানা পরামর্শ দেন। ওই দিন থেকে তিনি র‌্যাবে ফিরে না গিয়ে পালিয়ে যান। হামলার আগের দিন অথ্যাৎ ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর আসামী মান্নান ও রমজান ঈশা খাঁন ঘাঁটি থেকে ছুটি নিয়ে নগরীর ২নং গেইট এলাকায় যান। সেখানে জঙ্গি নেতা ফারদিন তাদের বোমা, গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট দেন। আর এসব কিছু তারা বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ঈশা খাঁন ঘাঁটিতে নিয়ে আসেন। রাতে এসব তাদের কক্ষেই রাখেন তারা।
পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ চলাকালে ১টা ৩৫ মিনিটে প্রথমে বানৌজা পতেঙ্গা মসজিদে দু’টি বোমা হামলা করে আব্দুল মান্নান। মুসল্লিরা তাকে ধরে ফেলেন এবং তার শরীরে বাঁধা সুইসাইডাল ভেস্ট খুলে ফেলেন। ওই হামলার ৫ মিনিট পর আসামী রজমান আলী ঈশা খাঁন ঘাঁটির প্যারেড ময়দান সংলগ্ন অস্থায়ী মসজিদের জুমার জামাতে দু’টি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন। তবে দুইটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত না হয়ে অক্ষত থেকে যায়। তাকেও মুসল্লিরা ধরে ফেলেন। এর পর বিকেলে একটি ব্যারাকের নিচতলার শৌচাগারে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবিস্ফোরিত বোমা এবং একটি সুইসাইড ভেস্ট পাওয়া যায়।
হামলার নয় মাস পর নৌবাহিনীর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা করেন। মামলাটি চার পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেন। আইও মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, জেএমবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনায় তাদের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন ওরফে নাফিসের (বোমা বিস্ফোরণে নিহত) নেতৃত্বে ঈশা খাঁন ঘাঁটিতে হামলা হয়। চার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছেন, দেশের প্রচলিত আইন তারা মানেন না। সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। হামলার উদ্দেশ্য ছিল এসব বাহিনীকে ভয় দেখানে এবং তাদের প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা। সন্ত্রাস দমন ও বিস্ফোরক আইনের যেসব ধারায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড বলে জানান আইনজীবীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেএমবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ