মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত মিয়ানমারের বিভিন্ন ইউনিট ও কর্মকর্তাদের প্রদত্ত সামরিক সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সহিংসতার কারণে দলে দলে লোক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এ কথা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ের্ট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে বলেন, রাখাইন রাজ্যে সা¤প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা এবং রোহিঙ্গা ও অন্যান্য স¤প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে চালানো ব্যাপক সহিংসতা ও নির্যাতনের ব্যাপারে আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এ নৃশংসতায় যারা জড়িত তাদেরকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অপরিহার্য।
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটের জন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকে দায়ী করছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, বিশ্ব মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার পক্ষে দাঁড়াবে না এবং কেবল দর্শক হয়েও থাকবে না। তিনি আরো বলেন, সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সংযত থাকতে হবে। গত আগস্ট মাসে শুরু হওয়া এ সহিংসতার কারণে ছয় লাখের বেশী রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ব্যাপক দমনপীড়ন চালায়। জাতিসংঘ তাদের এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে অভিহিত করে। রাখাইনে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখের মত রোহিঙ্গা পালিয়েছে। তারা বলছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, নারীরা হচ্ছেন ধর্ষণের শিকার। স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবিøউ) বলেছে, অভিযান শুরুর পর এক মাসেই ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে তারা। মিয়ানমারের নেত্রী সু চি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। এর মাশুল গুণতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য খাবার, পানি, আশ্রয় আর ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানিতে কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিপীড়ন থামাতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সাহায্য বন্ধের মত পদক্ষেপ নেওয়ার আহŸান জানান। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের ওপর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৫ সালে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরার সময় যুক্তরাষ্ট্র সেসব কড়াকড়ি তুলে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত সপ্তাহে বলেন, রাখাইনে যেসব সহিংসতার খবর আসছে, বিশ্ব তা দেখেও চুপ করে থাকতে পারে না।ৃ যা ঘটছে সেজন্য আমরা মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বকেই দায়ী করব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিতে আগামী মাসের শুরুতে প্রথমবারের মত এশিয়ার ওই অঞ্চলে যাচ্ছেন। ম্যানিলায় ওই সম্মেলনে মিয়ানমারও অংশ নিচ্ছে। ট্রাম্পের ওই সফরের আগেই এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠোর ভাষায় মিয়ানমারকে হুঁশিয়ার করল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার মত পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ও আন্তর্জাতিক আইন পর্যালোচনা করছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মিয়ানমারের বর্তমান ও সাবেক সেনা সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি দেয়, সেজন্য চাপ দিতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে ওয়াশিংটন মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর নিধন বন্ধ না করলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে একথা জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করছে তারা। পররাষ্ট্র দফতর জানায়, রোহিঙ্গা হত্যায় জড়িতরা মার্কিন সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নয়। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, মিয়ানমার সরকার ও তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিতে হবে, মানবিক সহায়তা দিতে সংস্থাগুলোকে অনুমোদন দিতে হবে এবং যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া এই সঙ্কটের মূল খুঁজে তা সমাধানের আহŸান জানানো হয়। গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে সামরিক বাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ জানিয়েছে খুব শিগগিরই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এরপরই কঠোর হুঁশিয়ারি দিলো যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার জানায়, ‘শরণার্থী শিবিরে স্বাস্থ্য অবস্থা টাইম বোমের মতো রয়েছে।’ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা উইলিয়াম লেসি সুইং বলেন, নাফ নদী দিয়ে আসার সংখ্যা প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে কমে ১ হাজারে এসেছে। কিন্তু এখনও আসছে। আর এই গতিতে আসতে থাকলে খুব দ্রæতই রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩ লাখেরও বেশি শিশু। তাদের অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, রয়টার্স ও বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।