পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাধারণ মানুষের এখন বড়ই দুঃসময় চলছে। চাল, ডাল, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের জীবনযাপন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সীমিত আয়ের মানুষ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে তাল মিলাতে না পেরে হিসাব-নিকাশ সংকুচিত করতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী, মানুষ খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি গ্রামে মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামেই যদি এ অবস্থা হয়, তবে রাজধানীসহ প্রধান শহরগুলোতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের অবস্থা কী তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। এখন শহরে বিশেষ করে রাজধানীতে থাকাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে সীমিত আয়ের মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেবার দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করে নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। কয়েক মাস যেতে না যেতেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম যে হারে বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাতে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের টানাপড়েনের শেষ নেই। এখন আবার নতুন করে সিটি করপোরেশন বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। বিগত ২৮ বছর এই ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ স্থগিত থাকার পর হঠাৎ করেই তা পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেছে। এই পুর্নমূল্যায়ন করতে গিয়ে একবারে চার-পাঁচ গুণ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে ফেলছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ রাজধানীতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে বাড়িওয়ালারা যেমন বিচলিত, তেমনি ভাড়াটিয়ারাও বিচলিত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি পেলে বাড়িওয়ালাদের যতটা না সমস্যা হয়, তার চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ভাড়াটিয়াদের। কারণ বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে তার ট্যাক্সের টাকা জোগাড় করে ফেলতে পারে। এমনিতেই ছয় মাস বা বছর শেষে বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন কর্তৃক অত্যধিকহারে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি যে ভাড়াটিয়াদের জন্য মারার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, বাড়িওয়ালা হোক আর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হোক উভয়ের মধ্যে অন্তমিল হলো, ব্যবসা করা। যথাযথ সুযোগ সুবিধা দিতে পারুক বা না পারুক, তাতে কিছু যায় আসে না। ভাড়া বাড়িয়ে এবং সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলে তাদের সেবার দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে ব্যবসা করে চলেছে। সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা যদি ধরা হয়, তবে দেখা যাবে, এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা একেবারে নি¤œস্তরে, অথচ দামটা অত্যন্ত উচ্চস্তরে অবস্থান করে। সিটি করপোরেশনের যে ধরনের সেবা রাজধানীবাসীর পাওয়ার কথা, তা কি পাচ্ছে? অথচ জনসাধারণকে ট্যাক্স ঠিকই দিতে হচ্ছে। এখন দীর্ঘ ২৮ বছর পর হোল্ডিং ট্যাক্সের পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে এক লাফে চার-পাঁচগুণ বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা কেন? এত বছর সিটি করপোরেশন কি করেছে? এ কাজটি যদি নিয়মিত করা হতো, তবে তা বাড়িওয়ালাদের জন্য যেমন সহনীয় হত, তেমনি ভাড়াটিয়াদের মানসিক প্রস্তুতিও থাকত। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, হোল্ডিং ট্যাক্স পুর্নমূল্যায়নের উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেয়া হয়েছে, যখন সাধারণ মানুষ বিপর্যয়কর অবস্থা এবং নানা ধরনের পেরেশানির মধ্যে রয়েছে। জিনিসপত্রের উচ্চমূল্যের কারণে আক্ষরিক অর্থে তাদের অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রভাব তাদেরকে যে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে বাড়িওয়ালাদের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স তারা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারবে। অনেক ভাড়াটিয়াকে হয় বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়াতে হবে, না হয় বর্ধিত ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় বাসা ছাড়তে হবে। এর দায় কে নেবে? সোজা কথায়, দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে। সিটি করপোরেশনের সেবার মান কি, তা নগরবাসীকে নতুন করে বলার কিছু নেই। ঠিক মতো ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার না করা, সড়কের বাতি ঠিক না করা, পানিবদ্ধতা নিরসন না করা, রাস্তা-ঘাট সংস্কার না করা, মশা নিধন না করাসহ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে নগরবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ সে তার ষোল আনা পাওনা আদায়ে কোনো কুণ্ঠাবোধ করে না। এরই মাঝে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে নাগরিকদের ঘাড়ে অবহনযোগ্য বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইছে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানি তেলের দাম না কমানোর মাধ্যমে সরকারের মধ্যে এক ধরনের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জনসাধারণ এসব মূল্যবৃদ্ধি সইতে পারবে কিনা, তা বিবেচনা না করেই সরকারের সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য বা মাশুল বাড়িয়ে দিচ্ছে। জনসাধারণ এই বাড়তি মূল্য কোথা থেকে কিভাবে দেবে, এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং কীভাবে জনগণের পকেট থেকে অর্থ বের করা যায়, প্রতিনিয়ত সেই ফন্দিফিকির চলছে। ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতা বৃদ্ধি করার এমন কোনো পণ্য নেই যার বাড়তি মূল্য গুণতে না হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে যারা বসবাস করেন, তাদের আয়ের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই বাসাভাড়া বাবদ চলে যায়। এই বাসা ভাড়া পরিশোধ করার পর, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, খাওয়ার সংস্থান থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক খরচ চালাতে গিয়ে একজন সীমিত আয়ের মানুষকে অত্যন্ত বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হয়। এ সময়ের কথা যদি বিবেচনা করা হয় তবে দেখা যাচ্ছে, চাল ও শাক-সবজির মূল্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে নি¤œ মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। জিনিসপত্রের এই মূল্য কমার আশু কোনো সম্ভাবনা নেই। এর উপর বছর শেষের দিকে। জানুয়ারি এলেই বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ানোর জন্য নড়েচড়ে বসে। অনিবার্যভাবেই তারা বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করবে। এ উসিলার মধ্যে যুক্ত হয়েছে, সিটি করপোরেশন কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স চার-পাঁচগুণ বৃদ্ধি। এতে দেখা যাবে, সিটি করপোরেশনের ব্যবসার পাশাপাশি বাড়িওয়ালাদেরও ব্যবসার একটি মওকা সৃষ্টি হবে। আমরা বলছি না, সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স মোটেই বৃদ্ধি না করুক। তার জন্য সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নাগরিকদের অবস্থা, সক্ষমতা দেশের বিদ্যমান অবস্থাটি বিবেচনায় রাখতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর অনুকূল নয়। সিটি করপোরেশনকে সেটা আমলে নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।