নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : ১৮তম ওভারে যখন মাঠে নামেন তখন ৯০ রানে দাঁড়িয়ে ডি কক ও ফাফ ডু প্লেসিসকে হারিয়ে ‘কিছুটা’ ব্যাকফুটে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এর কোন কিছুই স্পর্শ করল না এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। এসেই শুরু করলেন নিজের মত। চালিয়ে গেলেন ৪৮তম ওভার পর্যন্ত। ততক্ষণে নিজের নামের পাশে জমে গেছে ১৭৬ রান, সেটাও মাত্র ১০৪ বলে। দক্ষিণ আফ্রিকাও দাঁড় করায় ৬ উইকেটে ৩৫৩। পার্লের বোল্যান্ড পার্ক স্টেডিয়ামের যা সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে ৪৭.৫ ওভারে মাত্র ২৪৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ, ম্যাচে হারে ১০৪ রানে। দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিম্বার্লির প্রথম ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটের রেকর্ড ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচ ২২ অক্টোবর, ইস্ট লন্ডনে।
এদিন ডি ভিলিয়ার্স শেষ পর্যন্ত থাকলে হয়ত ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রæততম দ্বিশতক দেখে ফেলত বিশ্ব। কিন্তু তা হতে দেননি রুবেল হোসেন। তার আগে ক্যারিয়ারের ২৫তম শতকটি স্পর্শ করেন মাত্র ৬৮ বলের মোকাবেলায়, দেড়শ ৯৩ বলে। সব মিলে ১৭৬ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটি তিনি সাজান মাত্র ১০৪ বল, ১৫টি বাউন্ডারি ও ৭টি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে। একদিনের ক্রিকেটে যা তার সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংস। তৃতীয় উইকেটে হাশিম আমলার সাথে ১৩৬ ও চতুর্থ উইকেটে জেপি ডুমিনির সাথে গড়েন ১১৭ রানে জুটি। পরের জুটিতে ডুমিনির অবদান ছিল মাত্র ২৭ রান। আমলা করেন ৯২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৮৫, ডুমিনি করেন ৩০ রান।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। রাগিসো রাবাদা শুরু করেছিলেন প্রথম ওভারে মেডেন নিয়ে। তবে এরপর থেকে ভালোই ব্যাট করছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। বিধ্বংসী শুরু না হলেও প্রায় বল প্রতি রান তুলছেন দুজন। প্রথম ওভারের প্রথম স্পেলে চার হজম করে শুরু করেছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। তবে সাফল্যও পেলেন প্রথম ওভারেই। ফিরিয়ে দিলেন তামিম ইকবালকে। স্টাম্প সোজা বল থার্ডম্যানে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বুঝতে পারেননি বলটি ছিল একটু ¯েøায়ার। বল লাগে প্যাডে, এলবিডবিøউ। ২৫ বলে ২৩ রান করে আউট তামিম।
প্রিটোরিয়াসের পর প্রথম ওভারে উইকেট পেলেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। স্টাম্প সোজা বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করলেন লিটন। এলবিডবিøউ। খালি চোখেই মনে হচ্ছিলো নিশ্চিত আউট। উইকেটে সঙ্গী ইমরুল কায়েসের সঙ্গে কথা বলে তবু রিভিউ নিলেন লিটন। রিপ্লে দেখাল, বল লাগছিল মিডল স্টাম্পে! উইকেটের সঙ্গে একমাত্র রিভিউটিও হারাল বাংলাদেশ। উইকেটে গিয়েই দারুণ একটি চার, পরে রাবাদাকে পুল করে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন। কিন্তু আউট হলেন ১২ বলে ১৪ রান করে।
তামিম ও লিটনকে হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম। ১৮ ওভার শেষে দলের রান পেরোয় একশ। ইনিংসের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি জুটি এলো ইমরুল ও মুশফিক জুটিতে। তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে ভালোই এগোচ্ছিলো বাংলাদেশ। ঠিক তখই বুযকে কাঁপন ধরায় ইমরুলের একটি শট। যে শটে ৪৯ রানেই শেষ হতে পারত তার ইনিংস। কিন্তু প্যাটারসনের বলে পয়েন্টে ক্যাচ ছাড়লন জেপি দুমিনি। ইমরুলের কাট শট ডাইভ দিয়ে হাতে জমাতে পারেননি দুমিনি।
বড় রান তাড়ায় প্রয়োজন টপ অর্ডারের কারও বড় রান। সেই দায়িত্ব পালন করে চলিছেলন কায়েস। ৫৬ বলে স্পর্শ করেছেন অর্ধশতক। টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইমরুলের এটি প্রথম ফিফটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম। সেঞ্চুরি আছে দুটি। এর কিছু পরেই প্রিয় ¯øগ সুইপে ইমরান তাহিরকে ছক্কায় ৪৩ থেকে ৪৯। এক বল পর দ্রæত এক সিঙ্গেল নিয়ে পঞ্চাশ। মুশফিকের রহিমের হাফ সেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরির পর এবার আরও একটি দারুণ ইনিংস। ৬০ বলে মুশফিক ছুঁলেন পঞ্চাশ। ওয়ানডেতে তার ২৭তম।
ইমরুল ও মুশফিকের জুটি যখন শতরানের পথে, তখনই ইমরুলের বিদায়। তাহিরের গুগলি বুঝতে না পেরে ফ্লিক করলেন, ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ শর্ট কাভারে। ৭৭ বলে ৬৮ রান করে আউট হন ইমরুল। ভাঙল ৯৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ইমরুলের পর সাকিবকেও ফিরিয়ে দিলেন ইমরান তাহির। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ হজম করল জোর ধাক্কা। আগের ম্যাচে গুগলিতে সাকিবকে আউট করেছিলেন তাহির। এবার জোরের ওপর করা বল। ¯øাইডারটি পিচ করে খানিকটা লাফিয়ে বেরিয়েও যাচ্ছিল। থার্ডম্যানে খেলতে গিয়ে সাকিব ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। বাংলাদেশের বড় ভরসা আউট ৫ রানেই।
নিজের শেষ ওভারে আরও একটি উইকেট পেলেন ইমরান তাহির। বাজে শটে আউট সাব্বির রহমান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে অন সাইডে উড়িয়ে মারতে চাইলেন সাব্বির। বল উঠল ¯্রফে আকাশে। বৃত্তের ভেতরই ক্যাচ নিলেন ফাফ দু প্লেসি। হাল অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবধান কমানোর কাজটিও খুব ভালো করতে পারছে না ব্যাটসম্যানরা। ১৮ বলে ১৭ করে ফিরলেন সাব্বির।
দলের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব শেষ। নিজের জন্য হলেও কিছু করতে পারতেন নাসির হোসেন। কিন্তু ব্যর্থ পুরোপুরি। ফেলুকওয়ায়োর ভেতরে ঢোকা বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড নাসির। ৩ রানে আউট হলেন নাসির। নাসিরের পর ওই ওভারেই আউট মাশরাফি। ফেলুকওয়ায়ো নিলেন তিন উইকেট। আবারও ভেতরে ঢোকা বল। মাশরাফি খেলতে চাইলেন লেগ সাইডে। তবে ব্যাটের আগেই বল লাগল প্যাডে। এলবিডবিøউ শূন্য রানে। মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে বোল্ড করে এই পেসার নিলেন ইনিংসে চতুর্থ উইকেট। আবারও সিমে পিচ করে ভেতরে ঢোকা বল। মাহমুদউল্লাহ জায়গায় দাঁড়িয়ে খেললেন ক্রস ব্যাটে। লাইন মিস করে বোল্ড। সময়ের দাবি মেটাতে একদমই ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ। ৩৫ করেছেন ৪৬ বলে। পেটারসনের বলে তাসকিনের বিদায়ে ১০৪ রানের বিশাল হার নিশ্চিত হয় মাশরাফির দলের।
স্কোর কার্ড
দ. আফ্রিকা-বাংলাদেশ, ২য় ওয়ানডে
বোল্যান্ড পার্ক (পার্ল), টস : বাংলাদেশ
দ. আফ্রিকা ইনিংস রান বল ৪ ৬
আমলা ক মুশফিকুর ব রুবেল ৮৫ ৯২ ৪ ০
ডি কক এলবিডবিøউ ব সাকিব ৪৬ ৬১ ১ ০
ডু প্লেসিস ব সাকিব ০ ৩ ০ ০
ডি ভিলিয়ার্স ক সাব্বির ব রুবেল ১৭৬ ১০৪ ১৫ ৭
ডুমিনি এলবিডবিøউ ব রুবেল ৩০ ৩০ ০ ১
বেহার্ডিন অপরাজিত ৭ ৯ ০ ০
প্রিটোরিয়াস ক ইমরুল ব রুবেল ০ ১ ০ ০
ফেহলুকায়ো অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (লে বা ২, ও ৭) ৯
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ৩৫৩
উইকেট পতন : ১-৯০ (ডি কক), ২-৯০ (ডু প্লেসিস), ৩-২২৬ (আমলা), ৪-৩৪৩ (ডি ভিলিয়ার্স), ৫-৩৫৩ (ডুমিনি), ৬-৩৫৩ (প্রিটোরিয়াস)।
বোলিং : মাশরাফি ১০-০-৮২-০, তাসকিন ৯-০-৭১-০, সাকিব ১০-০-৬০-২, নাসির ৮-০-৪৯-০, রুবেল ১০-০-৬২-৪, সাব্বির ১-০-১১-০, মাহমুদুল্লাহ ২-০-১৬-০।
বাংলাদেশ ইনিংস (লক্ষ্য ৩৫৪) রান বল ৪ ৬
তামিম এলবিডবিøই ব প্রিটোরিয়াস ২৩ ২৫ ৩ ০
ইমরুল ক ডি ভিলিয়ার্স ব তাহির ৬৮ ৭৭ ৬ ১
লিটন এলবিডবিøউ ব ফেহলুকায়ো ১৪ ১২ ১ ১
মুশফিকুর ক ডুমিনি ব প্রিটোরিয়াস ৬০ ৭০ ৪ ১
সাকিব ক ডি কক ব তাহির ৫ ৫ ০ ০
মাহমুদুল্লাহ ব ফেহলুকায়ো ৩৫ ৪৬ ৩ ০
সাব্বির ক ডু প্লেসিস ব তাহির ১৭ ১৮ ২ ০
নাসির ব ফেহলুকায়ো ৩ ১১ ০ ০
মাশরাফি এলবিডবিøউ ব ফেহলুকায়ো ০ ৩ ০ ০
তাসকিন অপরাজিত ৩ ৬ ০ ০
রুবেল ব পিটারসেন ৮ ১৪ ২ ০
অতিরিক্ত (লে বা ৪, ও ৯) ১৩
মোট (৪৭.৫ ওভার, অল-আউট) ২৪৯
উইকেট পতন : ১-৪৪ (তামিম), ২-৬৯ (লিটন), ৩-১৬২ (ইমরুল), ৪-১৭১ (সাকিব), ৫-১৮৪ (মুশফিক), ৬-২১৯ (সাব্বির), ৭-২৩৪(নাসির), ৮-২৩৪ (মাশরাফি), ৯-২৩৯ (মাহমুদুল্লাহ), ১০-২৪৯ (রুবেল)।
বোলিং : রাবাদা ৯-১-৪০-০, পিটারসন ৮.৫-০-৬৭-১, প্রিটোরিয়াস ১০-০-৪৮-২, ফেহলুকায়ো ১০-১-৪০-৪, তাহির ১০-০-৫০-৩।
ফল : বাংলাদেশ ১০৪ রানে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : এবি ডি ভিলিয়ার্স
সিরিজ : ৩ ম্যাচে ২-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।