পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটি কাটাতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে তিনি রওনা দেন। তার এই ছুটিতে যাওয়া নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ এবং তিনি ছুটিতে যেতেই পারেন। বিএনপিসহ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন প্রধান বিচারপতি গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে বাসভবন থেকে বের হওয়ার সময় গেটের সামনে সাংবাদিকদের একটি খোলা চিঠি দেন। এতে তার বক্তব্য রয়েছে বলে তিনি জানান। খোলা চিঠিটি গতকাল বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটা মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে। সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শংকিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রীম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোন রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় ও রায়ে প্রধান বিচারপতির দেয়া পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকার মাঝেই প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, রায় নিয়ে সরকার খুবই অসন্তুষ্ট এবং বিব্রত। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টিকে ভালভাবে নিতে পারেননি। সমালোচনা না করে তারা সরকারকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সরকার যে ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে, তাতে প্রকারন্তরে এক ধরনের প্রভাব বিস্তারের চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে। মানুষের অত্যন্ত আস্থার জায়গা উচ্চ আদালতে যদি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ হয়, তবে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। মানুষের বিশ্বাস, উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখে। সেখানে গেলে সঠিক বিচার পাওয়া যায়। এমনিতে রাষ্ট্রের অন্যান্য সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের ফলে মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং একশ্রেণীর সদস্যর কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা অনেক কমে গেছে। নিম্ন আদালত সরকারের আওতাধীন হওয়ায় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে রায় এদিক-ওদিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। মনে রাখা দরকার, আমরা কোনো স্বৈরতান্ত্রিক সরকার কাঠামোর মধ্যে বসবাস করছি না। সরকারি মহলের দাবী অনুযায়ী, একটি গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। এমতাবস্থায়, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ, প্রভাব বিস্তার বা তার স্বাধীনতা সংকুচিত করার পরিনাম কারো জন্যই মঙ্গলকর হতে পারে না।
গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে যে শংকা প্রকাশ করছেন তার প্রেক্ষিতে সঙ্গতকারণেই বলতে হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ খারাপ নজির হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতেও এ দৃষ্টান্ত সামনে রেখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করার প্রচেষ্টা চলতে পারে। এতে ন্যায় বিচার পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও নির্যাতন থেকে রক্ষা এবং সাংবিধানিক ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা পেতে মানুষের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। উল্লেখ্য, উচ্চ আদালত অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান এবং রায় দিয়ে বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে। একটি রায়কে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের জন্ম হয়েছে, তা আদালতের মাধ্যমেই সুরাহা হওয়া বাঞ্চনীয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিচার বিভাগকে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার অবারিত হবে। সুশাসন ও আইন শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। এর সুফল দেশ ও জাতি লাভ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।