পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নদীর স্রোত-সময়-ঘড়ির কাঁটা কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। পরিস্থিতি যা-ই হোক সময় ও ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলবেই। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে চলছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বদরবারে মানবিকতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার এ ধরনের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন সেটাও প্রশংসিত হয়। ঘনবসতিপূর্ণ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি বলেছেন, ‘দরকার হলে একবেলা না খেয়ে, আধপেটা খেয়ে আমরা এই ১০ লাখ শরণার্থীকে বাঁচিয়ে রাখব।’ সম্প্রতি সময়ে পৃথিবীর কোনো নেতা, এমনকি উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়কদেরও এমন ‘মানবিক দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করতে দেখা যায়নি।
সময় চলছে তার নিজস্ব গতিতে। কিন্তু দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তি সবাই কী নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন? গণতান্ত্রিক দেশে জনগণই হলো সকল ক্ষমতার উৎস। আর সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী সুশীলসমাজ, বিশিষ্টজন, সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে নির্বাচনের ব্যাপারে মতামত নিচ্ছেন। দেশে দফায় দফায় বন্যা, হাওরাঞ্চলে পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে চাল-ডালসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েই চলছে। চালের মজুদ কমে গেছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সরকারের নির্বাহী প্রধান হিসেবে সবকিছুই দেখতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি যখন জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের জন্য বিদেশে তখন হঠাৎ করে প্রধান বিচারপতির এক মাসের ছুটি নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে এক মাসের ‘ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ তোলেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও হাইকোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা। সাংবিধানিক পদ প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘জোর করে ছুটি’তে পাঠানোর অভিযোগ সন্দেহের ডালপালা ছড়াতে থাকে। সরকারের দায়িত্বশীল কিছু ব্যক্তির অথিকথন এবং দৌড়-ঝাঁপের কারণে মানুষের মধ্যে সেটা দেখা দেয়। এখন আবার প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়া নিয়ে প্রায় অভিন্ন কান্ড দেখা যাচ্ছে। সাংবিধানিক পদে থেকে ঘটা করে এভাবে ছুটি নেয়ার রেওয়াজ অতীতে দেশের মানুষ দেখেনি। এই ‘ছুটি’ বিতর্কের পর ‘বিদেশ সফর’ বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। এটা ছাড়াও নানাবিধ কারণে দেশে চলছে অস্থিরতা, গুজব। মানুষ যেন কোনো কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না। চাকরিজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক সবার মধ্যে অস্থিরতা-অনিশ্চয়তা।
জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন। কিন্তু তার অসুস্থতাজনিত কারণে এখনো মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক হয়নি। ১৬ অক্টোবর বৈঠক হওয়ার কথা কিন্তু এখনো তার এজেন্ডা চূড়ান্ত হয়নি। গুজব, অস্থিরতা এবং বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের দৌড়-ঝাঁপ করতে দেখা যায়। এখন তাদেরও কোনো তৎপরতা নেই। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ তৎপরতাসহ শরণার্থীদের দেখভালের বিষয়াদি ছাড়া অন্য কিছুতেই সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। বন্যা, পাহাড়ি ঢলের পর দেশের উত্তরাঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটেনি। বন্যাদুর্গত এলাকার কৃষক ও ক্ষেতমজুর রয়েছেন চরম দুর্দশায়।
সর্বত্রই গুমোট, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। দেশে কী হয়, কী হতে যাচ্ছে এ নিয়ে গুজব সচিবালয় থেকে শুরু করে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এটা চাউর। যারা রাজনীতির খবর রাখেন তাদের মুখে মুখে যেমন এ গুজব; তেমনি যারা সরকারি চাকুরে তারাও এই গুজবের বাইরে নন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আরো সচেতন হওয়া যেমন জরুরি; তেমনি গুজবের ডালপালার বিস্তার যাতে না ঘটে সে জন্য সদা সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কিত ইস্যু হলো প্রশাসনকে দলীয়করণ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গত রোববার বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোয় বলেছেন, ‘পুলিশ প্রশাসনে ছাত্রলীগের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম; বরং বিএনপি ও শিবিরকর্মীদের অনেকেই প্রশাসনে অফিসার পদে আছেন। তা ছাড়া উচ্চ পর্যায়ের কিছু অফিসার আছেন যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চিন্তাধারায় নেই এবং বিশ্বাস করেন না। পারলে বিরোধিতা করেন এমন লোকও সরকারে আছে’। তিনি আরো যোগ করেন, ‘২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছিলেন তখন কয়েক বছর বিএনপির থেকে বলা হতো প্রশাসন দলীয়করণ হচ্ছে। কিন্তু এখন এমন কথা বিএনপি একদম বলে না। এর কারণ কী? এখন প্রশাসনে পুলিশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং-বদলি হচ্ছে সেগুলো বিএনপির মনমতোই হচ্ছে।’ যিনি সরকারের প্রশাসনের নিয়োগ-বদলিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সেই উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যখন বলেন পুলিশ প্রশাসনে ছাত্রলীগের চেয়ে বিএনপি-শিবির বেশি। তখন প্রশ্ন ওঠে ৯ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে কি করল? তাহলে কি অনেক কিছ্ইু নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে?
সংবিধান অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল ও মাঠের বাইরের দল নিজেদের কৌশল মতো কথাবার্তা বলছেন; সাংগঠনিক কর্মকৌশল পরিচালনা করছেন। এ জন্য অনেক দায়িত্বশীল রাজনীতিককে ‘মেঠো বক্তৃতা’ দিতে হয় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে হয়। সেটা চলছে। আবার বরাবরের মতো মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপির কর্মসূচিতে বাধাদান অব্যাহত রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই সবকিছু সামলাচ্ছেন। তিনি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, প্রশাসন চালাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও কাজ করছেন। দিনে দিনে তাঁর বয়সও কম হয়নি। জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়েও তিনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। তারপরও দলীয় প্রধান হিসেবে তাকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের অভিভাবক মহামান্য প্রেসিডেন্ট!
দেশে ‘ভূতের অন্ধকার বাড়ির’ মতো সর্বত্রই গুজব। গুজব আর অস্থিরতার কারণে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। বিদেশীরা তো আসছেনই না; দেশী বিনিয়োগকারীরাও অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং নানা জটিলতার কারণে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-আলিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া শেষ করে বের হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই কর্মক্ষেত্র পাচ্ছেন না। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান না হওয়ায় বেকারের সংখ্যা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে, যা দেশের শিক্ষিত তরুণ-যুবকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিচ্ছে। অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে গত কয়েক মাসে রফতানি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চললেও দেশের অভ্যন্তরে বিদেশী বিনিয়োগের তো যাচ্ছেতাই অবস্থা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এবং হলি আর্টিজান হত্যাকান্ডের পর তৈরী পোশাকের বিদেশী ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আগে বিদেশী ক্রেতাদের দেশে নিয়ে আসার বিজেএমইএর নানামুখী উদ্যোগ ছিল; এখন সেটাও দেখা যায় না। ৪০ লাখ নারীসহ ৫০ লাখ শ্রমিকের কর্মক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্পে চলছে শনিরদশা। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে গার্মেন্টস মালিকদের হাতির ঝিলের অবৈধ ভবন ভেঙে ফেলা নিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। মনে রাখা উচিত গুজব-অস্থিরতায় বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি না হলে কোনো উন্নয়নই কাজে আসে না। এই যখন অবস্থা তখন রাষ্ট্রের অভিভাবক প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ ৪ দিনের ছুটি নিয়ে নিজ গ্রামে যান। তিনি সেখানে সভা-সমাবেশ করছেন এবং নির্বাচন গণতন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে কথাবার্তা বলে গত রাতে ঢাকায় ফেরেন। মহামান্য প্রেসিডেন্টের এই চার দিনের ছুটি নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন এই যে, তিনি তো আর রাজনীতি করেন না। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থীও হবেন না। তাহলে নানা গুজবের সময় কর্মদিবসে এক সঙ্গে চার দিনের ছুটি নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করার হেতু কি? দেশে যখন গুমোট-গুজব তখন রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে মহামান্য প্রেসিডেন্টের বঙ্গভবনে ঝানু মাঝির মতো শক্ত হাতে রাষ্ট্রের হাল ধরে রাখার কথা। কিন্তু তিনি এখন নির্বাচনী এলাকায়! গুজবের পর গুজবের এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের নিজ নির্বাচনী এলাকায় চার দিন অবস্থান করা কি গুজবের শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাচ্ছে না? মন্ত্রী-এমপিরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যান আগামীতে জনগণ যাতে ভোট দেয় সেটা নিশ্চিত করতে; উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখভাল করতে। কিন্তু রাষ্ট্রের অভিভাবকের তো সেটার সুযোগ নেই। তাহলে? রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। মানুষকে যাতে গুজবে হাতরাতে না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।