Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ : আহত ১২ সাসপেন্ড ৪

জয়পুরহাটে পুলিশের পিটুনিতে আসামির চাচার মৃত্যু

জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জেলার কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের শাহ পাড়ায় ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের অস্ত্রের আঘাতে অভিযুক্ত আসামির চাচা সাইদুল ইসলাম নিহত হয়েছে। পুলিশ ওই নিহত যুবককে হাসপাতালে আনার পর এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৫৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। এদিকে তাৎক্ষনিক ভাবে অভিযুক্ত এস আই রফিকুল ইসলাম, পি এস আই আসাদুজ্জামান সহ ৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওয়ারেন্ট মূলে গতকাল সোমবার ভোরে কালাই থানার এস আই রফিক, পিএসআই আসাদ সহ পুলিশের একটি দল কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শাপলা হোসেন (২৮)-কে ধরার জন্য বাড়িতে যায়। পুলিশ এক পর্যায়ে একটি দরজা ভেঙ্গে অপর দরজার কাছে গেলে অভিযুক্ত শাপলার চাচা সাইদুল ইসলাম (৩৪) পুলিশের সামনে এসে দরজায় ধাক্কা-ধাক্কি দেওয়ার কারণ জানতে চায়। এ সময় সাইদুল ইসলাম ও পুলিশের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এস আই রফিক সাইদুলের মাথায় হাতে থাকা পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। এরপর তাকে এলোপাথারি মারধরের অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে বাড়ির অন্যান্য লোকজন ওঠে পড়ে হৈ চৈ শুরু করলে পুলিশ বেগতিক দেখে আহত সাইদুলকে পুলিশ ভ্যানে নিয়ে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমী আকতার সাইদুলকে মৃত্য ঘোষণা করেন।
মূহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা এস আই রফিক ও পি এস আই আসাদকে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান। জনতা এক পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গেট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশের চেষ্ঠা করেন। এরমাঝে জয়পুরহাট থেকে দাঙ্গা পুলিশ গিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে পুলিশ ৫৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এদের মধ্যে বুলেট বৃদ্ধ সাইদুর রহমানকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের ৩ জনকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ২ জনকে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার জন্য কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, ইউএনও আফাজ উদ্দিন সহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার ব্যাপারে মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, এটি কোন ক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বিষয়টির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ভোরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। পুলিশের পিস্তলের আঘাতেই সাইদুলের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক ভাবে অভিযুক্ত এসআই রফিকুল ইসলাম রফিক, পিএসআই আসাদুজ্জামান আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম (নং ৩১৯) এবং কনস্টেবল ফারুক হোসেন (নং ৬০৪) কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার ব্যাপারে মামলা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো: রশীদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেওয়া হবে না। তবে কেউ মামলা করতে চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ঘটনার ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহেল বাকীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাশেদ মোবারক জুলেয়। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো: মোকাম্মেল হক জানান, ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে নিহত যুবক সাইদুল ইসলামের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় আনন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • মারুফ ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৩৭ এএম says : 0
    এই ধরনের কিছু অফিসারের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর দুর্ণাম হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Azizur Rahman ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:১৯ পিএম says : 0
    পুলিশ সুপার বললেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়েছে তাই থানায় মামলা নেয়া হবে না আমি পুলিশ সুপার সাহেব কে বলতে চাই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানুষ মারবে এটা কেমন তাহলে আমাদের নাগরিক অধিকার কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ