Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতির চিঠি আইনমন্ত্রীর কাছে কেন প্রশ্ন গয়েশ্বরের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে কিভাবে এলো সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর কাছে কীভাবে ছুটির দরখাস্ত এল? তিনিই প্রথম প্রকাশ করলেন যে, প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলও প্রকাশ করেছেন। তা থেকেই জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হয়। প্রধান বিচারপতির ছুটির বিষয়টি তো বঙ্গভবন থেকে প্রকাশ হওয়ার কথা। প্রধান বিচারপতির অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা প্রেসিডেন্ট প্রকাশ করবেন। কিন্তু ছুটির আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে এলো কীভাবে? এটা তো আইনমন্ত্রীর কাজ নয়। গতকাল (সোমবার) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সর্বোচ্চ আদালত ধ্বংসের নীল নকশার বিরুদ্ধে’ এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যেজোট।
গয়েশ্বর বলেন, প্রধান বিচারপতি এর আগে এক মাস ছুটি নিয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন। সেটা নিয়ে আইনমন্ত্রী তখন কিছু বলেননি, কোনো বির্তক হয়নি। সাংবিধানিকভাবে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলে কারও কাছে যেতে হয় না। ছুটির দরখাস্ত তার টেবিলে রাখলেই হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার প্রেসিডেন্টকে ছুটির বিষয়ে অবহিত করতে পারেন। প্রথমবার ছুটির সময় তাই দেখলাম। পরের ছুটি নিয়ে এত কথা কেন হলো? যদি তিনি ছুটি নিতে চান, নিতেই পারেন। প্রয়োজনে তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে নিজে গিয়ে ছুটির আবেদন দিতে পারেন। তিনি যদি এতই অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে তার সংশ্লিষ্ট কর্মকতা আছেন, তারাও দরখাস্ত পৌঁছে দিতে পারেন।
চিঠিতে ভুলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটি চাইলে তিনি ভুল দরখাস্তে স্বাক্ষর করতেন না। আরও একটা প্রশ্ন আছে, আদৌ এই স্বাক্ষর প্রধান বিচারপতির কি না? টেলিভিশনে এত কিছু দেখানো হয়েছে। কিন্তু এটা দেখানো হয়নি যে, উনি স্বাক্ষর করছেন। বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলেন। আইনজীবী রানা দাস গুপ্ত বললেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তারপর ভিসার জন্য অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে গেলেন। কিন্তু তিনি কোনো হাসপাতালে গেলেন না, এত জায়গায় গেলেন কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করলেন না। বিচার বিভাগ ও প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে ক্ষমতাসীন সরকার এ যাত্রায় নিজেদের সফল মনে করলেও ভবিষ্যতে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্যও করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
তিনি বলেন, ‘দুই-এক বছর আছে, একবার প্রেস ক্লাবের সামনে বলেছিলাম সব কোর্টই মুজিব কোর্ট। এ জন্য হাইকোর্ট আমকে তলব করেছিলেন। আমার বক্তব্যে নাকি বিচার বিভাগের অসম্মান হয়েছিল। অথচ আজকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে যে আচরণটা করা হয়েছে, বিচার বিভাগের যে আচরণ, সরকারি নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে অশ্রাব্য অকথ্য ভাষায় যে সমালোচনা বা প্রধান বিচারপতিতে গালিগালাজ করা হয়েছে এতে গোটা বিচার বিভাগ কি অসম্মানিত হয়নি, মানহানি হয়নি? কিন্ত তাদের ডাকা হচ্ছে না।
এস কে সিনহার ছুটির বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে এখন বিতর্কের ঝড়। ছুটির দরখাস্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ এসবের মধ্য দিয়েই কিন্তু সব কোর্টই মুজিব কোর্ট করার যে নগ্ন প্রচেষ্টা আছে তাই প্রমাণিত। বিএনপির এ নেতা বলেন, সরকারের পেসক্রিপশন অনুযায়ী মাঝে মাঝে কেউ কেউ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু আইনজীবী সমিতির নেতা দেখা করতে পারেন না। আমারা যখন জেলে থাকি তখন কোনো আত্মীয় মারা গেলে এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টার জন্য প্যারলে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতিও ঠিক তেমনি প্যারলে মুক্তি পেয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান। মাঝে মাঝে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে যান। এক কথায় গোটা ব্যবস্থাটাই কিন্তু বিচার বিভাগের ওপর একটি নগ্ন হামলা। সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে বিচার বিভাগ ও বিচারপতিকে তাই করতে হবে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এ অপকর্মের সঙ্গে সরকারের সব লোক জড়িত না থাকলেও কিছু লোক জড়িত। হয়ত আজকে মনে হচ্ছে ভালো কাজ করছেন। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের কথা যদি মনে থাকে ওই মুহূর্তে মনে হয়নি তাদের প্রতিহত করা যাবে। পরবর্তীতে শুধু তাদের প্রতিহতই করা হয়নি তাদের বিতাড়িতও করা হয়েছে। সুতরাং ২ অক্টোবর বিচারপতির বাসভবনে যারা এই ঘটনাটা ঘটিয়েছেন দিন অথবা রাতে আপাতত সফল হলেও পরিণতি কিন্তু হবে ভয়াবহ। গয়েশ্বর বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভবে কাজ করতে না পারলে আইনের শাসন থাকে না। আর তাহলে গণতন্ত্রও থাকে না। রাস্তায় নামা না পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হবে না। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ৭ বিচারপতি মিলেই একসঙ্গে স্বাক্ষর করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাহলে কেন এস কে সিনহাকে একা ছুটি নিতে হলো? রায়, এটা (রায়) কোনো ব্যক্তির একার সিদ্ধান্ত নয়; এটা প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। তাহলে এস কে সিনহার ওপর খড়গ কেন নেমে এলো, কেন তাকে ছুটি নিতে হলো?
আগামী নিবার্চন সম্পর্কে গয়েশ্বর বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে যাবে না। সেই নির্বাচনে বিএনপি কেন যাবে? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেন যাবে? সেই কারণে এখন নির্বাচন নয়, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রফেসর সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্যে দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন মেজবাহ, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক বাহার উদ্দিন বাহার, শেখ মিজানুর রহমান, ফরিদ মিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সাহিদুর রহমান তামান্না প্রমুখ।####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গয়েশ্বর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ