পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সউদি বাদশাহ সালমানের ঐতিহাসিক মস্কো সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার এই সরকারী সফর অবসান ঘটিয়েছে দু’দেশের মধ্যকার দীর্ঘ বিদ্বেষের। অনেকেই যখন এ সফরকে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করছেন তখন দু’পক্ষেরই কিছু ঐতিহ্যবাহী মিত্র দাঁতাতের সম্ভাব্য বিস্তৃতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। ঐতিহাসিক শব্দটি অতি ব্যবহৃত। তবে এবার এ শব্দটির দ্যোতনা আলাদা। ৮১ বছর বয়স্ক সউদি বাদশাহ ঠান্ডা ও শরৎ ঋতুর পটভূমিতে পানি খেতে মস্কো আসেননি। সউদি বাদশাহ এসেছিলেন সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে। রাশিয়া-সউদি সম্পর্ক কয়েক দশক ধরেই না ছিল তেমন অস্তিত্বশীল না ছিল একেবারে শত্রুতাপূর্ণ।
এখন কিছু বিষয় সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার হতে হবে। সউদি আরব ইসলামী বিশে^ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রধান মিত্র। রিয়াদে বহু লোক মনে করেন যে সোভিয়েত ইউয়িননের ভাঙ্গনের জন্য সউদি আরবই প্রধানত দায়ী। তাদের দাবি, এটা করা হয়েছে দু’ভাবে। এক, তেলের দাম হ্রাস করে, দুই, আফগান মুজাহিদদের অর্থায়ন করে দীর্ঘ ঘৃণার যুদ্ধে সোভিয়েত সেনাদের পরাজিত করে। মূলত শেষের পন্থাটির মূল কারিগর ছিলেন সালমান নিজেই যখন তিনি ছিলেন একজন প্রিন্স।
১৯৯০-এর দশকে রিয়াদে কিছু গ্রুপ নতুন রাশিযা ফেডারেশনের দিকে তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করে। তারা অশান্ত দক্ষিণ ককেশাসে জিহাদিদের সমর্থন দেয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যে ওয়াহাবিজমকে বিশ^ সন্ত্রাসবাদের প্রধান উৎস বলে চিহ্নিত করে সেই ওয়াহাবিজম ক্রেমলিনের জন্য বিরাট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ওয়াহাবিবাদ ককেশাস আমিরাত থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান ঘটায়।
ভিন্ন অভিমত
এক বছর আগেও মস্কো ও রিয়াদের মধ্যে ছিল মেরুর দূরত্ব। সিরিয়ায় রাশিয়ার সফল সামরিক হস্তক্ষেপকে সউদিরা অসন্তোেেষর সাথে গ্রহণ করে , অন্যদিকে ইয়েমেনে মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা রাশিয়া সমালোচনা করে। ইয়েমেনের সংকট সালমানের উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিকল্পনার ফল।
কিন্তু হঠাৎ করেই স্বার্থগুলো এসে এক মোহনায় মিশতে শুরু করে। রিয়াদ দেশের তিনটি মৌলিক বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেঃ তেলের নিম্ন মূল্য, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ক্রমবর্ধমান ভুল মার্কিন নীতি। প্রথম দু’টি বিষয়ে মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এবং শেষেরটিতে মস্কো ওয়াশিংটনের পাল্টাব্যবস্থা নিতে পারে।
মস্কোর সাথে সমঝোতা হলে বাদশাহ সালমান পুতিনের কাছ থেকে দু’টি বড় ছাড় পেতে পারেন। প্রথম, ইরানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ত্যাগ ও দুই, এবং কালো সোনা তেলের মূল্য নিজেদের অনুকূলে রাখতে রাশিয়া-ওপেক চুক্তি। যাহোক, প্রথমটি এখনো আকার পায়নি এবং পরেরটি মার্কিন শেল-এর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে । দু’দেশে বিশে^র এক চতুর্থাংশ অশোধিত তেল উৎপাদন করে।
মস্কো চায়, সউদিরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ওয়াহাবিবাদের বিস্তার বন্ধ করুক এবং বুঝুক যে কিভাবে তাদের সব ডিম মার্কিন ঝুড়িতে রাখা ভুল হয়েছে। সিরিয়ায় বিপর্যয়ের শিকার হওয়ার পর দেরিতে হলেও রিয়াদের বোধোদয় হয়েছে। সিরিয়ায় মার্কিন অনধিকার চর্চা বাদশাহ সালমানকে ডুবিয়েছে, তা আসলে ইরানকে শক্তিশালি ও তার ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে জোরদার করেছে।
সউদি আরব সবকিছুর চেয়ে তেহরানকে বেশি ভয় করে। তার মধ্যে রয়েছে জাতিগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণ। অন্যদিকে ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার উদীয়মান জোট সউদ রাজবংশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যখন তাদের মার্কিন নিরাপত্তা বিধানকারীরা দিকভ্রান্ত ও ঘরোয়া বিষয় নিয়ে বেশি ব্যস্ত। না বললেও চলে যে ওয়াশিংটনে মধ্যপ্রাচ্য এখন ক্লান্তিকর বিষয় এবং নতুন প্রেসিডেন্টের মনোযোগের ক্ষেত্র হচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
সউদিরা যদি মস্কোর সাথে জোট করার আশা করে থাকে তাহলে তারা সময় নষ্ট করছে। কারণ, ক্রেমলিন সোভিয়েতের পতন থেকে শিখেছে যে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন (এবং যুক্তরাষ্ট্রেরও) সকল বা কিছুই না অংশীদারিত্ব এখন শেষ হয়ে গেছে। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, সম্ভাব্য লাভ আছে জেনেও পুতিন চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক জোটে প্রবেশ করতে অনাগ্রহী। সে সাথে পুতিন চীনের আঞ্চলিক প্রতিদ্ব›দ্বী জাপানের জন্য রাশিয়ার দরজা খোলা রেখেছেন।
তবে সোজাকথায়, রাশিয়ার আধুনিক পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকার হচ্ছে যেখানে সম্ভব প্রত্যেকের সাথে বন্ধুত্ব এবং অনমনীয় জোটকে পরিহার করা। সে কারণেই রাশিয়া জি৮, ব্রিকস ও সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য যার অর্থ সম্ভাব্য সকল সম্ভাবনাময় শিবিরে পা রাখা।
এ বিষয় মনে রেখেই পুতিন মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে ইরানের উপর রাশিয়ার বর্তমান অতি নির্ভরতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনতে চান। তিনি বিভিন্ন প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে একটি সেতু হতে চান। কোরিয়া সংকটে এটা দেখা যাচ্ছে যেখানে বেইজিং ও ওয়াশিংটন স্ব স্ব পক্ষের সাথে সম্পৃক্ত অথচ রাশিয়া নিজেকে একজন সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে দেখে। পিয়ংইয়ং ও সিউল উভয়ের সাথে তার ভালো সম্পর্ক।
বাস্তব উদ্বেগ
সউদি যুবরাজ মোহাম্মদ আভাস দিয়েছেন যে দৃশ্যপট রিয়াদের কাছে গ্রহণযোগ্য। মস্কোর সাথে সম্পর্ক গড়ার নেপথ্য কারিগর তিনি। তিনি স্বীকার করেছেন যে তার সরকার রুশ প্রতিপক্ষের সাথে তাদের তেল নীতি সমন্বয় করছে।
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের বিজয় বিষয়টিকে সহজ করেছে। সউদিরা তার ক্ষমতাচ্যুতিকে অগ্রাধিকার দিলেও ইরানের শক্তিবৃদ্ধির কাছে তার বিষয়টি গৌণ। বিশ্লেষক ক্রিস উয়েফার বলেন, গত বছর রাশিয়া-ওপেক তেল চুক্তি ঘোষণার পর থেকে কোনো আরব দেশ সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকার সমালোচনা করেনি। এটা হচ্ছে ভালো ব্যবসার এক দৃষ্টান্ত। রাশিয়া ও সউদি আরব উভয়েই প্রতি ব্যারেল তেল ৪৫ ডলারে বিক্রির বদলে ৫৪ ডলারে বিক্রি করে প্রতি মাসে ২৫০ কোটি ডলার আয় করছে। এটা ভালো রাজনীতি।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত আধুনিক রাশিয়ার রফতানি করার মত কোনো মতবাদ নেই। এখন তার কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি সংখ্যক দেশের সাথে ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখা। সউদি আরব এক গুরুত্বপূর্ণ বিশ^ খেলোয়াড়। তার সাথে কোনো চুক্তি হলে তা ক্রেমলিনের জন্য্র ইতিবাচক হবে। এবং রিয়াদের জন্যও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।