Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য

| প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার সকালে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে বিমানবন্দরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমিকার কারণে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট বিশ্ববাসীর মনোযোগ পেয়েছে। এই সংকটের মধ্যে মিয়ানমারের দিক থেকে যুদ্ধের উসকানি থাকা সত্তে¡ও সরকার শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। আমি আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশসহ সকলকে সতর্ক করেছি যাতে কোনো রকম উসকানিতে তারা বিভ্রান্ত না হয়। তারা উসকানিতে সাড়া না দেয়ায় ধন্যবাদ দিচ্ছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগ দস্যুরা একদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর ইতিহাসের বর্বরতম অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যা চালিয়ে তাদের যেমন বিতাড়িত করা শুরু করে, অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ বাঁধানোর পায়তারা করে। দেশটির সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার এক-দুইবার নয়, ১৭ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। লক্ষ্য যে ছিল বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়া, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে ধৈর্য্য এবং সহনশীলতার মাধ্যমে মিয়ানমারের এই ধৃষ্টতা ও উসকানি সামাল দেয়। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কূটনৈতিক পন্থায় কড়া প্রতিবাদ জানায়। বলা যায়, যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো এক ক্রান্তিকালে প্রধানমন্ত্রীর এই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য।
রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সমস্যা নয়। মিয়ানমার কর্তৃক এ সমস্যা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার মানবতার সর্বোচ্চ উদাহরণ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। নিজস্ব অনেক সমস্যা থাকা এবং নতুন সংকট সৃষ্টির আশংকার মধ্যেও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের ষোল কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থান করতে পারলে রোহিঙ্গাদেরও খাওয়াতে পারব। প্রয়োজনে একবেলা খাবো, আরেক বেলার খাবার তাদের ভাগ করে দেব। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এমন ভরসামূলক ঘোষণা মানবতার ইতিহাসে বিরল। শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেক মানুষ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং তাদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যদিও মিয়ানমার বরাবরই বাংলাদেশের সাথে এ নিয়ে উসকানিমূলক আচরণ করে আসছে। বাংলাদেশ তা আমলে না নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি দিক, অন্যদিকে সামগ্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক আরেকটি দিক। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ বাঁধিয়ে দেয়া কোনো সুবিবেচনা -প্রসূত কাজ নয়। এ সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রক্রিয়াই সর্বোত্তম পন্থা। বাংলাদেশ এই পন্থাই অবলম্বন করে চলেছে। বিশ্বায়নের এ যুগে এক দেশের সাথে আরেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ককে এখন মূল নিয়ামক হিসেবে ধরা হয়। অঞ্চল ভিত্তিক এক দেশের সাথে আরেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ জালের মতো জড়িয়ে আছে। ফলে দেশগুলোর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে তা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই শ্রেয়। এখানে জোরজবরদস্তির কোনো অবকাশ নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের নীরব ভূমিকা মিয়ানমারের সাথে তার বিপুল বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণেই। আবার চীনও বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে চীনকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সমাধানের পথ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বাসস্থান এবং খাদ্যসংস্থানের ব্যাপারে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। এক্ষেত্রে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। রোহিঙ্গাদেরও বাংলাদেশের এই আন্তরিকতা এবং মানবতার মূল্যায়ণ করতে হবে। এর প্রতিদান দেয়া তাদের কর্তব্য। সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, রোহিঙ্গাদের অনেকে মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবাসহ বেশ কয়েকজন ধরাও পড়েছে। স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, মাদক চোরাকারবারিরা তাদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত এবং অনভিপ্রেত। রোহিঙ্গাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশ তাদের জীবনযাপনের সুযোগ দিয়ে নিরাপত্তার সর্বাত্মক প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়া কাম্য হতে পারে না। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের কারণে স্থানীয়ভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের কেন্দ্র করে যাতে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি না হয়, বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রচেষ্টা সফল করতে রোহিঙ্গাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন