Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা মা ও নবজাতকের টিকে থাকার গল্প

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা দেশটির হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে। অসহায় লাখো রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে উপকূলবর্তী বিভিন্ন অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। গত ছয় সপ্তাহে আসা রোহিঙ্গাদের ঢলে সেখানে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার সময় পথেঘাটে রোহিঙ্গা গর্ভবতী নারীরা সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা, সন্তান জন্মদানের সুু পরিবেশ না পেয়ে রোহিঙ্গা নারী, নবজাতক শিশুদের মৃত্যু বা অসহায় অবস্থার খবরও কমবেশি জানা যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গা গর্ভবতী নারীকে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে বা হয়েছে, তা কিছুটা অনুধাবন করা গেলেও সেইসব খবর গণমাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায় না। আর এ কাজটিই করেছেন বিবিসির এক সাংবাদিক। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নয় মাসের গর্ভবতী রশিদার সঙ্গে ৮ সেপ্টেম্বর ওই সাংবাদিকের দেখা হয়। তারপর থেকেই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত রশিদাকে নজরদারিতে রাখেন বিবিসির এই প্রতিবেদক। তিনি জানার চেষ্টা করেন, গর্ভবতী রশিদার প্রতিদিনকার জীবনযাপন ও নবজাতক সন্তানকে বাঁচাতে তাঁর সংগ্রামের আদ্যোপান্ত। রশিদা বলেন, আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। আমাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। আমি গর্ভবতী, কিছু যে খাব, সে ব্যবস্থাও ছিল না। ভাত, শাকসবজি তো নয়ই। গর্ভাবস্থায় পালিয়ে আসার সময়টাতে আমি একেবারে না খেয়ে ছিলাম। গর্ভাবস্থায়ই রশিদাকে আরেকটি সন্তানকে কোলে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে পথ চলতে দেখা যায়। পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধাও। তিনি পথ চলেন পরিবারের পুরুষ সদস্যের ওপর ভর করে। একটু হাঁটতেই দেখা যায়, আশ্রয় নিতে গেলে অন্য রোহিঙ্গাদের ভিড়ে তাঁরা জায়গা পাচ্ছেন না। মিয়ানমার থেকে দিনের পর দিন খেয়ে-না-খেয়ে গর্ভাবস্থায় শিশু-বৃদ্ধা, তল্পিতল্পাসহ হেঁটে এসেও রশিদাকে হাজার হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে জায়গা পেতে তাঁদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে। অবশেষে রশিদা ও তাঁর স্বামী থাকার মতো একটুকরো জায়গা পান। সেখানে পরিবারের ১৫ জন সদস্য নিয়ে তাঁরা নতুন করে যাত্রা শুরু করেন। রশিদা আরো বলেন, আমার যখন প্রসবব্যথা ওঠে, তখন কোনো ওষুধ ছিল না। এমনকি কোনো চিকিৎসক ছিলও না যে আমাকে সাহায্য করবে। ওই সময় আমার পরিচিত একজনকে পাই, পরে তাঁর মা আসেন। তাঁর সাহায্যেই আমি সন্তান প্রসব করি। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকটা বাঁশের খুঁটি, তার ওপর পলিথিন-বাঁশের ছাউনি। এই ঝুপড়ি ঘরের একপাশে পলিথিন-বাঁশের হালকা একটা বেড়া থাকলেও বাকি তিন পাশই ফাঁকা। স্যাঁতসেঁতে মাটির এই ঝুপড়ি ঘরেই রশিদা সন্তান প্রসব করেন। সন্তান জন্মদানের পরও বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে রশিদার চিন্তার শেষ নেই। রশিদা বলেন, আমি শুনেছি, এখান থেকে নাকি শিশু চুরি হয়ে যায়। আমাদের ঝুপড়ি ঘরের কোনো দরজা নেই, বেড়াও নেই। তাই সারা রাত জেগে সন্তানকে পাহারা দিই। কিন্তু আর দশটা মায়ের মতোই রশিদা স্বপ্ন দেখেন, তাঁর সন্তান খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা পাবে। সুস্থ-সবল, সুখী জীবনযাপন করবে। কিন্তু রশিদার শঙ্কা, এই জনবহুল শরণার্থী শিবিরে কি তা সম্ভব হবে? আর দশজন রোহিঙ্গার মতো রশিদা আদৌ জানেন না তাঁর ও সদ্যোজাত সন্তানের কপালে কী আছে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা i
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ