বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আওয়ামীলীগ-বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সবকিছুই এখন পরিচালিত হচ্ছে কেবলই নির্বাচনকে ঘিরে
বগুড়া ব্যুরো : বগুড়ায় প্রধান ৪ টি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সবকিছুই এখন পরিচালিত হচ্ছে কেবলই নির্বাচনকে ঘিরে। যদিও নির্বাচন আসতে এখনও বাকি আছে প্রায় দেড় বছর। তবুও সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেউ বসে নেই।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতাদের জন্য বড় অস্বস্তির কারন শরিক দল জাতীয় পার্টি। কেননা গত নির্বাচনে মহাজোটের ভাগাভাগির সময় কৌশলগত কারনে বগুড়ার ৭টি সংসদীয় আসনের ৫টিতেই ছাড় দেয়া হয় শরিকদলকে। এর মধ্যে ৪াট দেয়া হয় জাতীয় পার্টি ও ১টি জাসদ (ইনু)’ কে। যেটা সব সময় ক্ষমতাসীনদের মনে খচখচ করে খোঁচা দিয়ে থাকে। তাই আওয়ামী লীগের নেতাদের এখন একটাই বক্তব্য ‘ যেহেতু রাজনীতির ময়দানে বিএনপি এখন কোনঠাসা, তাই শরিকদের আর কোন ছাড় নেই।’
তবে স্থানীয় নেতাদের মনের এই আকুতি কেন্দ্রের হিসেব নিকেশের কাছে কতটা গ্রহনযোগ্য হবে সময়ই বলে দেবে বলে মনে করেন অনেকেই।
বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগে এবার প্রত্যেক আসনেই বহু সংখ্যক নেতাকে যথেষ্ট তৎপর দেখো যাচ্ছে। এর মধ্যে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বর্তমান এমপি আব্দুল মান্নাণের পাশাপাশি প্রবাসি নেতা সিদ্দিকুর রহমান ও সারিয়াকন্দি পৌর মেয়র আলমগীর শাহী সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে সাবেক মন্ত্রী মোজাফ্ফর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, বর্তমান পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক ও ব্যবসায়ী আকরাম হোসেনকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। বগুড়া-৩ (আদমদীঘী-দুপচাঁচিয়া) আসনে দলের সভাপতি ব্যবসায়ী আনসার আলী মৃধার আকস্মিক মৃত্যুতে উপজেলা সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর মনোনয়নের দাবিকে জোরালো করেছে। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দিগ্রাম) আসনে বর্তমানে মহাজোটের এমপি রয়েছেন জাসদ (ইনু) এর কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করিম তানসেন। মহাজোট ঠিক থাকলে এখানে তার মনোনয়নই স্বাভাবিক হলেও আওয়ামীলীগের জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বর্তমান এমপি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান ওনফে এসপি হাবিব। তারপরও এই আসনে সাবেক এমপি ও জৈষ্ট নেতা প্রবীন সাংবাদিক আমান উল্লাহ খান, দলের জেলা সেক্রেটারি ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনু মনোনয়ন চাইবেন বলে আভাষ মিলেছে। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে সিনিয়র জুনিয়র মিলে অনেকেরই নাম শোনা যায়, এর মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড রেজাউল করিম মন্টু, রাগেবুল আহসান রিপু, টি জামান নিকেতা, মঞ্জুরুল আলম মোহন, শাহাদৎ আলম ঝুনু প্রমুখের নাম শোনা যাচ্ছে বেশি। বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়ার জন্মস্থান হলেও বিভিন্ন কারনে এখানে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা ভোট পায় প্রচুর। এই আসনে বিএমএ বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু, কৃষক ও ভুমিহীনদের জাতীয় পর্যায়ের নেতা ইমারত আলী ও এএইচ আজম খান দলের প্রার্থীতার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মির মনোভাব হলো এবার বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ভুল করবেনা, আর নির্বাচনে অংশ নিলে নিশ্চিত ভাবেই দল ক্ষমতায় যাবে বলে তাদের বিশ্বাস। তাই এই দলে তাদের প্রার্থীর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। সারিয়াকান্দি-সোনাতলা কে নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনে এবার প্রার্থী হিসেবে যারে নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ শোকরানা, সাবেক এমপি কাজী রফিক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন চৌধুরী, সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু মন্ডল ও সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যাস আহসানুল তৈয়ব জাকির প্রমুখ।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে এবার দলের প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মধ্যে বেশি তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম, সাবেক মহিলা এমপি অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি, সাবেক এমপি ও সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড একেএম হাফিজুর রহমান প্রমুখ। বগুড়া-৩ (আদমদীঘী-দুপচাঁচিয়া) আসনের আসনে সাবেক এমপি এম মোমেন খোকা বর্তমানে যুদ্ধাপোরাধ মামলার ফেরার আসামী হওয়ায় সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড আতাউর রহমান মুক্তা, সিনিয়র নেতা ফজলুল বারি তালুকদার বেলাল, সাবেক ছাত্রনেতা হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, সাবেক পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দিগ্রাম) আসনে প্রার্থীতার জন্য চেষ্টায় আছেন সাবেক এমপি ডাঃ জিয়াউল হক ও মোস্তফা আলী মুকুল, এ্যাড রাফি পান্না, ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন, ধর্মিয় ব্যক্তিত্ব ও তরুণ নেতা মাওঃ ফজলে রাব্বী তোহা। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বগুড়ার পৌর মেয়র এ্যাড, মাহবুবুর রহমান, শেরপুরের সাবেক পৌর মেয়র জানে আলম খোকা, শেরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান হারেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী ব্যাক্তিত্ব শফিউজ্জামান খোকন, ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম মামুন। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বরাবরের মতো প্রার্থী না হলে এই আসনে দলের জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুলের মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা সমধিক বলে শোনা যায়। বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসনে যদি অনিবার্য পরিস্থিতিতে তারেক রহমান প্রার্থী না হন তাহলে এখানে তার স্ত্রী ডাঃ য়োবায়দা রহমান, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু বা তরুণ নেতা ও ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব মাহফুজ সিদ্দিক লিটনকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
অন্যদিকে জামায়াত ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রার্থীদের টার্গেট থাকবে স্ব স্ব জোটের কাছ থেকে যতবেশি সম্ভব আসনে ভাগ বসানো যায়। বর্তমানে বগুড়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনে নুরুল ইসলাম বাচ্চু, বগুড়া-৬ আসনে আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম ওমর ও বগুড়া-৭ আসনে এ্যাড আলতাব আলী এমপির দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীতেও যাতে মহাজোটের ভাগাভাগি অনুরুপই থাকে জাতীয় পার্টির চেষ্টা এখন সেটাই বলে দৃশ্যমান। জামায়াতও বগুড়ার-৭ আসনে গোপনীয়তার মাঝে তাদের নির্দিষ্ট প্রার্থীদের কাজ করাচ্ছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।