২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বাংলায় যাকে বলে ‘আমবাত’, ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘আর্টিকেরিয়া’। হঠাৎ করে শরীরে চুলকানি শুরু হয়, চাকা চাকা হয় বিভিন্ন মাপের ও বিভিন্ন আকৃতির, শরীরব্যাপী দেখা দিতে পারে। চাকাগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই চিকিৎসা ছাড়াই মিলিয়ে যেতে পারে আবার নাও পারে। প্রচন্ড আক্রমণের সাথে সাথে মাথাব্যথা, বমি ভাব অথবা বমি ও পেটে ব্যথাও থাকতে পারে। যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় সঙ্গে কোনো জ্বর থাকে না। কিন্তু বাচ্চাদের বেলায় তীব্র আক্রমণের সময় জ্বর একত্রে থাকতে পারে। তা ছাড়া, ‘এনজিওইডিমা’ নামক এক ধরনের তীব্র রোগের সৃষ্টি করতে পারে যেখানে চাকাগুলো বা আক্রান্ত এলাকাগুলোর আকৃতি তুলনামূলকভাবে বেশ বড় ধরনের হতে পারে এবং ভালো হতে এক থেকে সাতদিনের মতো সময় লাগতে পারে। মুখমন্ডলে, হাতে, বাহুতে এবং কম সংখ্যক ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য এলাকায় দেখা দিতে পারে। যদি ঠোঁট বা জিহŸা আক্রান্ত হয় তাহলে গলার ভিতরে স্বরযন্ত্রে বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধার সৃষ্টি এবং পরিণামে মৃত্যুর ঝুঁকির সম্ভাবনাও রয়েছে। এ সকল ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
যে-সকল অ্যান্টিজেন আমবাত অথবা আরও তীব্র অবস্থা এনজিওইডিমার সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো হল- ১। খাবার ঃ যেসব খাবারে উল্লেখযেগ্য পরিমাণ আমিষ পদার্থ যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, গম, চাল, বাদাম, আলু ইত্যাদি খাবার গ্রহণের ফলে আমবাতের সৃষ্টি হতে পারে। খাবারে সৃষ্ট অ্যালার্জি আমবাত নির্দিষ্ট খাবারের কারণে অথবা কত বেশি খাবার গ্রহণ করা হয়েছে, তার উপরই নির্ভর কবে যে অ্যালার্জি প্রতি খাবারের পরেই দেখা দেবে না, কোন প্রকার খাদ্য গ্রহণ করলেই দেখা দেবে, তা ছাড়া সারাদিন কয়েকবার আক্রমণ ঘটবে না কয়েকদিন ঘটবে ইত্যাদি। খাবার গ্রহণ ও আমবাত সৃষ্টি হওয়ার সময় খাবার হজমেরও পরিশোধনের সময়ের উপর নির্ভশীল। এটা কয়েক মিনিটও হতে পারে আবার কয়েক ঘন্টাও হতে পারে। যাই হোক আমবাত খাবার বন্ধ করার ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে তবে পুনরায় একই খাবার গ্রহণ করলে আবার দেখা দেবে।
২। ওষুধ ঃ কিছু কিছু ওষুধ যেমন পেরিসিলিন, সালফোনামাইড, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদিও ব্যবহারে আমবাত সৃষ্টি হতে পারে। ওষুধ ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট আমবাত ক্ষণস্থায়ী এবং ওষুধ ব্যবহার বন্ধের পর অতি শীগ্রই চলে যায়। কিন্তু পেনিসিলিন ও স্যালিসাইলেট ওষুধ ব্যবহারে সৃষ্ট আমবাত ওষুধ বন্ধের কয়েক সপ্তাহ পর পর্যন্তও শরীরে থাকতে পারে।
৩। নিশ্বাসের মাধ্যমে ঃ অনেক পদার্থ যেমন পরাগরেণু, ছত্রাকের ডিম জাতীয় কীট পতঙ্গের ভগ্নাংশ এবং পশুর গোবর ধুলোবালিতে থাকতে পারে যা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। কারো কারো ক্ষেত্রে আমবাত সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের এগুলোর প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে।
৪। ইনফেকশন ঃ ইনফেকশনও একটি অন্যতম কারণ। আমবাত হওয়ার জন্য, তবে এসব ক্ষেত্রে ইনফেকশন সেরে গেলেই আমবাত সেরে যাবে। কখনো কখনো শরীরের ইনফেকশস সুপ্ত ও লুপ্ত অবস্থায় থেকে অ্যান্টিজেন নির্গম করছে এবং অ্যালার্জির সৃষ্টি করে যাচ্ছে। যেমন-টনসিল, দাঁত, কান, গলা, সাইনাস, হাড়, কিডনি, পিত্তথলিতে ইনফেকশন সুপ্ত অবস্থায় থাকে কিন্তু শরীরে তেমন লক্ষণ দেখা দেয় না। অ্যালার্জি ইনফেকশনের কারণে হয় কি না তা বোঝা যাবে যদি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে কিংবা সুপ্ত স্থানগুলোর অপারেশনের পর আমবাত ভালো হয়ে যায়।
৫। অন্ত্রে বা পেটে কৃমি বা পরজীবী থাকলে ঃ অনেক পরজীবীই অন্ত্রে বাস করে এবং তাদের শুককীট ত্বকের মাধ্যমে বা ফুসফুসের মাধ্যমে পথ অতিক্রম করে এবং অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে।
৬। ঠান্ডা ঃ ঠান্ডার ফলেও অ্যালার্জিও সৃষ্টি হতে পারে, ঠান্ডাজনিত অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এ-ধরনের রোগীদের বেলায় ঠান্ডা পানিতে গোসল, ঠান্ডা পানিতে হাত ধোয়া, ঠান্ডা বাতাসে বের হওয়, শীতাতপ ঘরে ঢোকার ফলে, এমনকি কিছু থেকে ঠান্ডা খাবার বের করতে গেলে এ ধরনের অ্যালার্জির শিকার হতে হয়। বাতাস, পানি, ঠান্ডা খাবার এমনকি ঠান্ডা কিছু কিছু বস্তু ধরতে গেলেও এ ধরনের অ্যালার্জি হতে পারে। বিশেষ করে রান্নাঘরে।
৭। উত্তাপে ঃ ওভেন, স্টোভ, রুমহিটার, এমনকি রোদে বেরুলেও আমবাত দেখা দিতে পারে। সূর্যরশ্মির ফলে সৃষ্ট অ্যালার্জি শুধুমাত্র শরীরের অনাবৃত অংশগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
৮। মানসিক ঃ কখনো কখনো মানসিক আবেগপ্রবণতার ফলেও শরীরে আমবাতের অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে।
৯। প্রেশার ঃ দীর্ঘস্থায়ী প্রেশার যেমন বেল্ট, মোজা, ইলাস্টিক ব্যান্ড, শক্ত স্থানে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। ঘড়ির বা ব্রেসিয়ারের স্ট্র্যাপ ব্যবহারের ফলেও অ্যালার্জির সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের অ্যালার্জি শরীরের যে এলাকাতে চাপ পড়ছে সে এলাকায় হয়। উপরে উল্লিখিত সাধারণ কারণগুলো ছাড়াও আরও অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে ভাইরাস, ছত্রাক এবং ক্যানসার, শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ধ্বংসকারী রোগসমূহ অন্যতম।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ঃ হোমিওপ্যাথি লাক্ষণিক চিকিৎসা। তাই লক্ষণ অনুযায়ী যে-কোনো ওষুধ সচরাচর ব্যবহার করা হয় তা উল্লেখ করছি-আমবাতের সাথে জ্বর থাকলে অ্যাকোনাইট ৩০, হুলফোটার মতো বেদনা থাকলে এপিস কিংবা আর্টিকা ইউরেন্স। চিংড়ি মাছ বা কাঁকড়া খেয়ে হলে রাসটক্স-৩০। কোনো ওষুধে কাজ না-হলে ব্রেভিস্ট ৩০ দিলে সুফল পাওয়া যায়। তবে কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।