Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যথানাশক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যেকোনো অসুস্থতাই আমাদের মনে করিয়ে দেয় সুস্থ থাকা কত জরুরি। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুস্থাতার ওপর নির্ভর করে আমাদের ভালো থাকা। এদের কোনোটিতে একটু সমস্যা হলেই ঘটে নানা বিপত্তি। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। আর যদি তা হয় ব্যথাজনিত অসুস্থতা, তবে তা আমাদেরকে ফেলে দেয় রীতিমতো দুর্ভাবনায়। তাই আমরা যদি একটু ব্যথা কোথাও অনুভব করি সাথে সাথে কোনো ফার্মেসিতে যাই এবং দোকানদারকে বলি-ভাই, একটা ব্যথার ওষুধ দেন তো। দোকানদার তার ইচ্ছেমতো কোনো ব্যথার ওষুধ যত দিনের খুশি দিয়ে দিলেন। হয়তো বা একটু ভালো অনুভব করলাম তারপর ওষুধ বন্ধ করে দিলাম। আবার কোথাও ব্যথা অনুভব করলে বা ব্যথা পেলে অন্য কোনো দোকানদারের কাছে গেলাম এবং তার ইচ্ছামতো ব্যথার ওষুধ খেলাম। কিন্তু আমরা কখনো কি একটু চিন্তা করে দেখি, এই যত্রতত্র ব্যথার ওষুধ আপনার অথবা আমরা শরীরে কী ক্ষতি করতে পারে। যেমন ধরুন, ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ আমাদের দেহে পেপটিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরানোসহ অনেক ধরনের সমস্যা করতে পারে। এই ব্যথানাশক ওষুধ কিডনি ও লিভার রোগীকে না বুঝে দিলে তাদের আরো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। ব্যথানাশক ওষুধগুলোকে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি। যেমন-এক ধরনের ব্যথানাশক হলো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (ঘঝঅওউ) এবং আরেক ধরনের ব্যথানাশক হলো স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ । নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি (ঘঝঅওউ) ওষধ যেমন-প্যারাসিটামল, ইটোরোকক্সিব, এসিক্লোফেনাক এগুলো সাধারণত কম ক্ষতিকারক। এজাতীয় ওষুধ অল্প ব্যথা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা যেতে পারে। স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ যেমন-প্রেডনিসোলন, ডেক্সামেথাসন, হাইড্রোকটিসন, এজাতীয় ওষুধ বেশি ক্ষতিকারক। এ ওষুধগুলো দীর্ঘ দিন সেবন করার ফলে শরীরে পানি আসা, প্রেসার বাড়া, লিভার ও কিডনি নষ্টসহ অনেক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আরেক ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ আছে, যেগুলোকে সেন্ট্রাল অ্যাক্টিং পেইনকিলার বলে, যেমন-প্যাথেডিন, ট্রামাডল, মরফিন, এজাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ আমরা তীব্র ব্যথা যেমন-হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট অ্যাবডোমেনে ব্যবহার করি। কিন্তু এই ওষুধ যদি শ্বাসকষ্ট ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের দেয়া হয় তাহলে তাদের অবস্থা আরো অবনতি হতে পারে। গর্ভবর্তী-মহিলাদের ব্যথানাশক ওষুধ দেয়ার ক্ষেত্রে আরো সচেতন ও সূ²ভাবে চিন্তা করে দিতে হবে। কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মা ও শিশু উভয়কে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। সুতরাং ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক নিয়মে সেবন করতে হবে। এজন্য ব্যথানাশক ওষুধ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার না করলে আমরা কিডনি, লিভার ও হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারব । আসুন, আজই আমরা ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের বিষয়ে সচেতন হই।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট,০১৭১৬২৭০১২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন