পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগস্টের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান বিষয়ক তার নয়া যুদ্ধকৌশল প্রকাশ করেন। তার মধ্যে ছিল মার্কিন সৈন্য সংখ্যা ৪ হাজার বৃদ্ধি। তবে কর্মকর্তারা সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানান। বিমান হামলা আরো বাড়াতে আরো প্রশিক্ষক ও আরো উপদেষ্টা পাঠানো হবে এবং আফগান অংশীদারদের ঘনিষ্ঠ সমর্থন দিতে আরো মার্কিন সৈন্য দরকার হবে।
স্থলে অনির্দিষ্ট সংখ্যক মার্কিন বিশেষ বাহিনী সদস্যদের সাথে মার্কিন বিমান বাহিনী দু’ বছর ধরে ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তান শাখার বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে।
তালিবান দেশের বিভিন্ন শহরে হামলা চালাচ্ছে। এ বছর বেসামরিক লোকজনের নিহত হওয়ার দ্বিতীয় প্রধান কারণ ছিল তালিবান ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার গোলাগুলি। অধিকাংশ বেসামরিক হতাহতের ঘটনার জন্য বিদ্রোহীরা দায়ী, কিন্তু ভূমিতে অবস্থা বিভ্রান্তিকর এবং প্রাণহানির জন্য কে দায়ী তা স্পষ্ট নয়। জুলাই মাসে জাতিসংঘ বেসামরিক লোকদের ১০ শতাংশ নিহত হওয়ার জন্য তালিবান ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের দায়ী করেছে। কারণ, মনিটরকারীরা সুনির্দিষ্টভাবে কাদের গুলিতে কারা নিহত হয়েছে তা বলতে পারেনি।
সমান্তরাল ক্ষতি
ভয়াবহ মাত্রার যে বিস্ফোরণে হামিদ গুলদের বাড়ি মাটির সাথে মিশে গেছে তার কারণ পরিষ্কার নয়, তবে তাতে সঙ্গিনের লোকদের ক্ষতি কমেনি।
দোকানি ফিদা মোহাম্মদের বাড়ি হামিদ গুলের গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে। সেবার তিন দফা হামলার দ্বিতীয় দফায় তার বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। তার ২১ বছর বয়স্ক ছেলে হাবিব রহমান ব্যুরোকে বলে, ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি ছিল একটি সাধারণ দিন। সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফিদার বাড়ি ছিল একটি ছড়ানো আঙ্গিনার খানিকটা বাইরের দিকে। রহমান ও তার দু’ ভাই বাড়ির বাড়ির একদিকে তাদের পরিবারদের সাথে থাকত। ফিদা ও তার স্ত্রী বাকি সন্তানদের নিয়ে অন্য অংশে বাস করত। রাত ১টার দিকে প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দে হাবিব জেগে ওঠে। তারা বাইরে এসে দেখতে পায় তাদের বাবা-মা যে দিকে বাস করতেন সেদিকটা সমতলে পরিণত হয়েছে। এর ফলে তার ১৭, ১৫, ৮ ও ৪ বছর বয়সী ৪ বোন, বাবা,মা ও সৎমাসহ ১৩ জন নিহত হয়।
১১ ফেব্রæয়ারি তালিবান এলাকার বাইরে শাকার শিলা গ্রামের ইমাম হাজি মোল্লা গফুর ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন। তিনি মসজিদে থাকার সময় তার বাড়ি ধ¦ংস হয়। এর ফলে তার ৫৫ বছর বয়স্কা স্ত্রী এবং ৯ বছরের ছেলে, ৮ বছরের মেয়ে, তার ৯ বছর বয়সী নাতনি নিহত হয়।
হামলার তদন্ত
যুক্তরাষ্ট্র এ এলাকার লোকজনকে দেখেছে , কিন্তু তারা বেসামরিক লোক কিনা বলতে পারে না।
এ সব হামলার লক্ষ্যবস্তু কি ছিল তা স্পষ্ট নয়। জাতিসংঘ বলে, গুলের পাশের বাড়ি যখন ধ্বংস হয় তখন সেখানে ৯ জন তালিবান যোদ্ধা নিহত হয়। কিন্তু গুল বলে যে তাদের গ্রামে কোনো তালিবান যোদ্ধা ছিল না।
রহমান একই কথা বলেছে যে তাদের গ্রামে কোনো তালিবান যোদ্ধা ছিল না। সবচেয়ে কাছাকাছি তালিবান যোদ্ধা চিল ১৫ মিনিট দূরের এলাকায়। কিন্তু হেলমন্দের গভর্নর হায়াতুল্লাহ হায়াত ব্যুরোকে বলেন, ফিদার পাশের বাড়িটিতে আঘাত হানা হয়, কারণ তালিবানরা সেখানে ঘাঁটি করে জেলা কেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছিল। সরদার মোহাম্মদ নামে এক পুলিশ জানান, তালিবানরা কাছেই ছিল হামলার সময়। তিনি বলেন, হামলায় ৫ জন তালিবান যোদ্ধা নিহত হয় যারা ফিদার বাড়ির আঙ্গিনায় আশ্রয় নিয়েছিল।
মোল্লা গফুর তার বাড়ির কাছে কোনো তালিবান থাকার কথা অস্বীকার করেন। কারণ কাছেই একটি সেনা চৌকি রয়েছে। কিন্তু একজন সেনা ক্যাপ্টেন সরদার আগা ইব্রাহিমখেল বলেন, গফুরের জানা ছিল না যে তালিবান যোদ্ধারা সেনা চৌকির নিচে সুড়ঙ্গ খুঁড়ছিল। তালিবানরা এ সব সুড়ঙ্গে বিস্ফোরক জড়ো করে হামলা চালায় এবং এভাবে অনেক আফগান সৈন্য মারা গেছে।
ইব্রাহিমখেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তালিবান হামলা রোধে দুর্ঘটনাক্রমে গফুরের বাড়িটি ধ্বংস করে।
শুধু ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকেই বেসামরিক লোকদের হত্যার জন্য দায়ী লোকদের খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।যে সব বাহিনী বেসামরিক লোকদের প্রাণহানি এড়াতে চায় তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।
শীর্ষ পর্যায়ের নীতি কিভাবে বেসামরিক লোকদের প্রাণহাণির কারণ হয় আফগানিস্তান তার প্রধান উদাহরণ। ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে যত বেসামরিক লোক নিহত হয় তার এক চতুর্থাংশই নিহত হয় সরকারি বা ন্যাটো হামলায়। জাতিসংঘ রিপোর্ট প্রকাশের ৬ মাস পর আফগানিস্তানে ন্যাটো কমান্ডার জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাকক্রিস্টাল এ প্রবণতা বদলে দেয়ার শপথ ব্যক্ত করেন এবং অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতি ছাড়া বাড়িঘরে বিমান হামলা নিষিদ্ধ করেন। পরের বছর তার উত্তসুরি জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস তা আরো সম্প্রসারণ করেন। তিনি কমান্ডারদের বলেন, বিমান হামলার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে সেখানে কোনো বেসামরিক উপস্থিতি নেই।
এ কারণে বেসামরিক মৃত্যু কমে আসে। ২০০৯ সালে প্রতি ৬টি হামলায় এক বেসামরিক লোক নিহত হয়। ২০১০ সালে তা প্রতি পনেরোটি হামলায় একজন নিহত হওয়ার পর্যায়ে নেমে আসে।
কয়েকটি ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞার লংঘন ঘটে। কুন্দুজে এক হামলায় ৩৩ জন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর নতুন নিয়ম করা হয় যে কোনো ভবনে হামলা চালাতে হলে কাবুলে সদর দফতর থেকে অনুমতি নিতে হবে।
সঙ্গিন এখন তালিবান নিয়ন্ত্রণে। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে এটি হচ্ছে বিদ্রোহীদের প্রাণকেন্দ্র। স্থানীয় এক রাজনীতিক ব্যুরোকে বলেন, তালিবান ও স্থানীয় আফগান বাহিনী জেলায় সক্রিয় ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নতুন আফগান নীতি ঘোষণার পর লড়াইয়ের প্রচন্ডতা কমে আসে।
গুল, রহমান ও গফুরের পরিবারের কেউই নেই। গভর্নর হায়াত তার প্রদেশ তহবিল থেকে তাদের সামান্য কিছু অর্থ দিয়েছেন। তিনি বলেন,তারা সরকারের কাছ থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ পাবে বলে তিনি আশা করছেন।
আফগান গোয়েন্দা সংস্থা, হেলমন্দ পুলিশ, কাউন্সিল ও গভর্নর সবাই একমত যে হামিদ গুলের পরিবার বেসামরিক ছিল এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। ব্যুরো ফেব্রæয়ারিতে তার সাথে কথা বলেছিল। জুলাাইতে জানা যায় যে কাবুল সরকার তখনো ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
গফুর আজো বোঝার চেষ্টা করছেন যে কিভাবে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। তার পরিবারের প্রতি সেনা চৌকির সৈন্যদের ভালো ধারণা ছিল। তিনি বলেন, তিনি বলেন, দেশে এই সহিংসতার কারণে বহু লোক এলাকা ছেড়ে চলে গেেেছ। কিন্তু আমি ও আমার স্ত্রী পাকিস্তান বা ইরানে যেতে চাইনি। তালিবান, আফগান সরকার, মার্কিন বাহিনী কারো নিয়েই আমাদের কোনো আগ্রহ ছিল না। মার্কিনিরা তালিবানদের মারত। আমার পরিবারকে মারল কেন?
গফুর বলেন, আমার একটি সুন্দর বাড়ি আছে এখন। অনেকে তা কিনতে চায়। কিন্তু আমি এখানে আহতদের সেবা করি। (শেষ।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।