পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা পাঁচ মাসে দেশে অতিবৃষ্টির রেকর্ড : মৌসুমি বায়ু এ বছর বেশিমাত্রায় সক্রিয়
চলতি অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক) ও আগামী নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে চলতি অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে ২টি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা আছে। একই শঙ্কা রয়েছে পরবর্তী নভেম্বর মাসেও। নভেম্বরেও সাগরে দুটি নিম্নচাপ থেকে তৈরি হতে পারে একটি ঘূর্ণিঝড়। গতকাল (সোমবার) বিকেলে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা সূত্রে এই পূর্বাভাসের কথা জানা যায়। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধের মধ্যেই বর্ষারোহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদ-নদীর প্রবাহের অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে জানা গেছে, এ মাসে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত সভা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। আবহাওয়া-জলবায়ুর তথা-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়ার বিন্যাস, বায়ুমন্ডলের বিভিন্নস্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, এল-নিনো এবং লা-নিনা অবস্থা ইত্যাদি উপাদান আলোচনা-পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞগণ এ পূর্বাভাস প্রদান করেন।
সভা সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসে দেশে স্বাভাবিক হারে ও পরিমাণে বৃষ্টিপাত হতে পারে। গত সেপ্টেম্বর মাসে (ভাদ্র-আশ্বিন) দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশিহারে বর্ষণ হয়েছে। তবে মাসজুড়েই দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যাপক অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য। যেমন- সেপ্টেম্বরে দেশের বিভাগওয়ারি হিসাবে চট্টগ্রামে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ বেশিই বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা সর্বোচ্চ বর্ষণের রেকর্ড। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৪ শতাংশ বেশি, ময়মনসিংহে ৪৮.৩ শতাংশ বেশি, সিলেটে ২৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অথচ সমগ্র উত্তরাঞ্চলে এমনকি দক্ষিণাঞ্চলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। গত মাসে রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০.৮ শতাংশ কম, রংপুর বিভাগে ৩৬.৪ শতাংশ কম, খুলনা বিভাগে ২৭.৮ শতাংশ কম এবং বরিশালে ৮.৪ শতাংশ কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়ামন্ডলে বর্ষার মৌসুমি বায়ু এ বছর খুব বেশিমাত্রায় সক্রিয় ছিল, যা এখনও কাটেনি। গত একটানা ৫ মাস যাবত দেশে অতিবৃষ্টির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের আগেও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক বর্ষণ হয়েছে। গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়। বিগত এপ্রিল, জুন ও জুলাই মাসেও স্বাভাবিক পরিমাণের তুলনায় দেশে বৃষ্টিপাত ছিল পরিমাণগত বেশিই। এমনকি ৩০ বছরের বর্ষণের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। শুধু গত মে মাসে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম ছিল।
চলতি বছরের গোড়া থেকে আবহাওয়া-জলবায়ু এবং প্রকৃতি চরমভাবাপন্ন ও বৈরী আচরণ অব্যাহত রাখে। এতে করে প্রায় সারাদেশে একের পর এক দুর্যোগের ঘনঘটায় চরম জনদুর্ভোগ নেমে আসে। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, চীন পর্যন্ত অস্বাভাবিক বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে। দেশে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব শুরু গত মার্চ মাসে। এরপর সর্বনাশা বন্যা, ভূমিধস-পাহাড়ধস, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের আধিক্য, খরা, দেশজুড়ে দাবদাহ, অতিবৃষ্টিসহ চলে আসেেছ দুর্যোগ-দুর্বিপাকের ঘনঘটা। শুধুই ব্যতিক্রম ছিল এবার শীতের প্রকোপহীন ও সংক্ষিপ্ত ‘শীতকাল’ অতিবাহিত হয়। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আবহাওয়ার ‘এল-নিনো’ অবস্থা (বৃষ্টি রোধকারী) হ্রাস পেয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীনে বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় ও জোরদার ছিল। বাংলাদেশ ও ভারতে এবার মৌসুমি বায়ুর আগমনও ঘটে বেশ আগেভাগেই। তাছাড়া বর্ষার আগে ও পরে অতিবর্ষণ এবং অল্প সময়েই সীমিত জায়গায় হঠাৎ করে অতিবৃষ্টির প্রবণতা ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদেরও।
গত সেপ্টেম্বর মাসে আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সারাদেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বা কাছাকাছি বৃষ্টিপাত হয়েছে (গড়ে ৯.৫ শতাংশ বেশি)। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি পরবর্তীতে পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। ২০ সেপ্টেম্বর মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত ১, ৯, ১০ ও ১১ এবং ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়।
অব্যাহত বৃষ্টিপাতেও ভ্যাপসা গরম
অসময়ে অব্যাহত বৃষ্টিপাতেও প্রায় সারাদেশে বিরাজ করছে ভ্যাপসা গরম। সেই সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে গেছে। বেড়েছে জনদুর্ভোগ। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরের জনপদ রাজশাহী ও রংপুরে হালকা থেকে মাঝারি এমনকি ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় সৈয়দপুরে ৯৭ মিলিমিটার। রাজশাহীতে ২৩ মিমি, রংপুরে ৯ মিমি, বরিশালে ২৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চাঁদপুরে ৩৪.৮ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.২ ডিগ্রি সে.। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম পড়ছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।